অফিস বন্ধ দশ দিন
ভাল কাজে মমতার ইনাম, কাজের দিনে পুজোর ছুটি
তিনি বন্ধ-বিরোধী। তাঁর সরকারের আমলে বিরোধীদের ডাকা তিনটি বন্ধকেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করে সরকারি দফতরে হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক রেখেছেন। সেই তিনিই পুজোর ছুটির মাঝে একমাত্র কাজের দিনটিতে ছুটি দিলেন সরকারি কর্মীদের। বললেন, এটা তাঁদের পুরস্কার।
দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজোর মধ্যে মাত্র একটি দিন সরকারি অফিস খোলা থাকার কথা ছিল। সেটা ২৬ অক্টোবর, শুক্রবার দ্বাদশীর দিন। রাজ্য সরকার নির্দেশ জারি করে ওই দিনটিকেও পুজোর ছুটির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ষষ্ঠী শনিবার। কার্যত সেই দিন থেকে শুরু হয়ে পুজোর ছুটি চলবে ২৯ অক্টোবর, লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত। টানা দশ দিন।
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এ রাজ্যে সরকারি দফতরের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা। ক্ষমতায় আসার পরেও বারবার তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার বন্ধ-ধর্মঘটের বিরোধী। এতে এক দিকে যেমন রাজ্যের বেহাল কর্মসংস্কৃতি আরও দুর্দশাগ্রস্ত হবে, তেমনই বিরাট আর্থিক ক্ষতিও হবে। কেবল এই কথা বলেই থেমে না থেকে তাঁর আমলে বিরোধীদের ডাকা প্রতিটি বন্ধকেই কড়া ভাবে মোকাবিলা করেছেন মমতা। বন্ধের দিন হাজিরা দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মীরা অনেকেই অফিসে রাত কাটিয়েছেন। অফিসের মধ্যেই তাঁরা রান্নাবান্না করে খেয়েছেন। যাঁরা গরহাজির থেকেছেন, তাঁদের এক দিনের বেতন কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই মুখ্যমন্ত্রীই তা হলে পুজোর ছুটির মধ্যে ওই একটি মাত্র কাজের দিনে ছুটি দিতে গেলেন কেন? মমতা নিজেই এর কারণ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকারি কর্মীরা ভাল কাজ করেছেন। বন্ধের ডাক ব্যর্থ করে অফিসে এসে কর্মসংস্কৃতির নজির রেখেছেন। আগামী দিনেও ভাল ভাবে তাঁরা কাজ করবেন। তাঁদের সেই কাজের পুরস্কার হিসেবে তাই অতিরিক্ত একটি দিন ছুটি দেওয়া হল।”
মহাকরণ সূত্রের একটি অংশের মতে, দ্বাদশীর দিন সরকারি অফিসে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই ছিল না। অনেকেই আগেভাগে ওই দিন ছুটি নিয়ে রেখেছেন। হাতেগোনা যে ক’জন অফিসে আসতেন, তাদেরও দিন কাটত বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ে। ফলে ওই দিন ছুটি ঘোষণা করায় বিশেষ ক্ষতি হবে না। যদিও অন্য একটি অংশের মতে, নীতিগত কারণেই দ্বাদশীর দিন অফিস খুলে রাখা উচিত ছিল। তাতে বোঝানো যেত, সরকার সত্যিই কাজ চায়। এক দিনের ছুটিতে ক্ষতি হবে না, এই যুক্তি উড়িয়ে তাঁদের বক্তব্য, বন্ধেও তো এক দিনই কাজ বন্ধ থাকে! বাম আমলে সরকারি ক্যালেন্ডারে ছুটির জোয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন অনেকে। তবে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার শেষ কয়েক বছর দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত টানা সরকারি অফিস বন্ধ থাকার রেওয়াজে রাশ টেনেছিল। দুর্গাপুজো উপলক্ষে সপ্তমী থেকে একাদশী পর্যন্ত ছুটির পর ফের দ্বাদশীতে খুলত সরকারি অফিস। আবার লক্ষ্মীপুজোর দিন ছুটি থাকত।
ক্ষমতায় এসে মমতার সরকারও সেটাই বজায় রেখেছিল। গত বছর পুজোর ছুটির পরে সরকারি অফিস খুলেছিল দ্বাদশীর দিনেই। কিন্তু শুক্রবার জারি করা অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কলকাতার কালেক্টর অফ স্ট্যাম্প রেভিনিউ এবং রেজিস্ট্রার অফ অ্যাসিওরেন্সেসের অফিস ছাড়া দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজ্য সরকারের অধীন আর সব কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ২৬ অক্টোবর সরকারি ছুটি পাবেন।
পড়ে পাওয়া ওই ছুটির কথা জানতে পেরে মহাকরণে এমনিতে খুশির হাওয়া। কেউ কেউ অবশ্য আক্ষেপ করেছেন, পুজোর আগে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার কিছুটা অন্তত পাওয়া গেলে বাড়তি ছুটির মজা মিলত ষোলো আনা! আইএনটিইউসি-প্রভাবিত সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর যুগ্ম সম্পাদক সঙ্কেত চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “এই ঘোষণা না করলে মাঝে ২৬ অক্টোবর, এক দিনের জন্য কর্মীদের অর্জিত ছুটি অর্থাৎ ইএল নিতে হত।” তৃণমূলপন্থী সংগঠন স্টেট গভনর্র্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন-এর রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “বাম আমলে পুজোয় সরকারি ছুটি আগের তুলনায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাই সরকারি এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছি।” ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নবপর্যায়)-এর সাধারণ সম্পাদক সমীররঞ্জন মজুমদার বলেন, “ভরা উৎসবে কাজ হয় না। ছুটি ঘোষণা করায় বিদ্যুৎ, গাড়ির তেল সবই বাঁচবে। কর্মীরাও খুশিতে থাকবেন।”
সিপিএম-প্রভাবিত সমিতি কো-অর্ডিনেশন কমিটি অবশ্য সরকারের এই ঘোষণায় খুশি নয়। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মনোজকান্তি গুহ বলেন, “বছরখানেকের মধ্যে সরকারি দফতরে কর্মসংস্কৃতি তলানিতে ঠেকেছে। পুজোয় বাড়তি ছুটির এই ঘোষণা সরকারের একটা সুবিধাবাদী নীতি। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা মাত্র।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.