ধষর্ণের মামলায় এক অভিযুক্তকে জামিন পাইয়ে দিতে চার্জশিট নিয়ে কারচুপির ওঠায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন বসিরহাট আদালতের বিচারক। সেই সঙ্গে জামিন পাওয়া ওই অভিযুক্তকে ফের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চার্জশিট জমা দেন। এই অবস্থায় চার্জশিটে কারচুপির বিষয়ে জড়িতদের শাস্তি ও জামিনে ছাড়া পাওয়া অভিযুক্তকে ধরার দাবিতে ধর্ষিতা ওই নাবালিকার মা বসিরহাটের এসডিপিও এবং উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে চার্জশিটে জালিয়াতি করে জামিন পাওয়ার পর অভিযুক্ত মামলা তুলে না নিলে খুনের হুমকি দিচ্ছে।
এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে চার্জশিট নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আদালতে জিআরও দফতরে জমা দেওয়া হয়। শুনেছি চার্জশিট পাওয়ার তারিখ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পরিবর্তন করে অভিযুক্তকে জামিনের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিচারক যে নির্দেশ দিয়েছেন তা হাতে পেলে অভিযোগ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ মে সন্ধ্যায় হাসনাবাদ থানা এলাকার বাসিন্দা এক প্রতিবন্ধী নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সমীর ঘোষ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বসিরহাটের ভ্যাবলা বাসিন্দা সমীরকে ওই কাজে সাহায্যের অভিযোগ ওঠে আমিনা বিবি, নাজমুল মণ্ডল ও গফ্ফর মণ্ডলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ধরার পড়ার ভয়ে তারা আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেয়। গত ২ জুলাই সমীরকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জেল হাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত সমীরের বিরুদ্ধে নিয়মমতো নব্বই দিনের অনেক আগেই ১৯ সেপ্টেম্বর বসিরহাট আদালতের জিআরও দফতরে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।
ধর্ষিতার পক্ষের আইনজীবী দেবব্রত গোলদার, রাজা ভৌমিক, আসিফ আলম, বিকাশ ঘোষ ও বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “গত ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ এই মামলার চার্জশিট জমা দিলেও জিআরও দফতরের কর্মী তা কেবল গোপনই করেননি, অভিযুক্তের সুবিধার্থে চার্জশিটে নির্দিষ্ট তারিখ মুছে সেখানে তিন মাস পরের তারিখ বসিয়ে দেন। পরে পুলিশের খাতায় জমা দেওয়ার তারিখ পরীক্ষা করার পরে এই কারচুপি পরিষ্কার হয়। প্রসঙ্গত, নিয়মানুযায়ী চার্জশিট পেশের সময়সীমা ছিল ২ অক্টোবর। এ দিকে, অভিযুক্তের পক্ষেও সমস্ত তথ্য গোপন করে এসিজেএমের আদালতে গত ১ অক্টোবর জামিনের আবেদন করা হলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এই ঘটনার পরে ধর্ষিতার মা বিচারক-সহ পুলিশ আধিকারিকের কাছে লিখিতভাবে চার্জশিটে কারচুপি করে অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়েছে জানালে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বসিরহাট আদালতের জিআরও-র দফতরে চার্জশিট জমা দেওয়া হলেও তাতে জমা দেওয়ার তারিখ মুছে তিন মাস পরের তারিখ লেখা হয়েছে। এই অবস্থায় অভিযুক্তের আইনজীবী কৌশিক সরকারের বক্তব্য, “১৯ সেপ্টেম্বর চার্জশিট জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও জিআরও দফতরের খাতা অনুযায়ী তা জমা পড়েছে নির্দিষ্ট সময়ের তিন মাস পরে ৬ অক্টোবর। ফলে যা কিছু ভুল হয়েছে তার দায়িত্ব জিআরও দফতরের।
সরকারি আইনজীবী হরেন মণ্ডল বলেন, “পুলিশ ও আদালতের রেকর্ড পরীক্ষা করার পর ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সোহন মুখোপাধ্যায় ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সমীরের জামিন নাকচ করেন ১১ অক্টোবর। ফের তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।” সেই সঙ্গে জিআরও দফতরের কোনও কর্মী এই ঘটনায় জড়িত কি না তা দেখতে এসডিপিওকে বলা হয়েছে। |