গণনার আগে সংশয় রয়েছে। থাকারই কথা। কিন্তু সে সংশয়ের মূল কারণ বাড়তি ভোট।
অনুমান ছিল ভোট পড়বে নিতান্তই কম। কিন্তু বুধবার, ভোটের পরে দেখা যায় প্রদত্ত ভোট প্রায় ৬৮ শতাংশ। এই বাড়তি ভোট নিয়েই সংশয়ে কংগ্রেস-সিপিএম। বিজেপিও। এমনকী পিডিএসআই-র মতো ছোট দলগুলিও।
পার্টি অফিস থেকে চায়ের দোকান, সর্বত্র সেই অঙ্কের জটিল জট খোলার চেষ্টা চলেছে। তবে সিপিএম কিংবা কংগ্রেস, দু’পক্ষেরই হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে বিজেপি। না সিপিএম, না কংগ্রেস কোনও পক্ষই জানে না বিজেপি কতটা ভোট টানবে। কেউ আবার দু’টি ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী দলকেই ধরেছেন বড় ফ্যাক্টর।
জঙ্গিপুর লোকসভায় প্রায় ১২ লক্ষ ৪১ হাজার ভোটারের মধ্যে ৬৭.৭ শতাংশের হিসাবে প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ভোট পড়েছে। সে ক্ষেত্রে সকলেরই আগ্রহ কতটা এগোতে পারে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। ছোট দল দু’টিই বা কত পাবে, তা নিয়েও দিনভর চলেছে হিসেব নিকেষ।
জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে গতবারের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট কম পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে জঙ্গিপুর লোকসভা নির্বাচনে ৮৪.৭১% ভোট পড়েছিল, সেখানে বুধবারের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৮.২৮%। |
ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভোট দেওয়ার শতকরা হিসেবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা অনেকটাই পিছনে পড়ে রয়েছে। যদিও জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে কোনও মহিলা প্রার্থী ছিল না।
জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচন শেষে দেখা গিয়েছে, নবগ্রাম বিধানসভা এলাকা ছাড়া বাকি ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পুরুষদের তুুলনায় মহিলারা বেশি ভোট দিয়েছেন। তার মধ্যে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ভোট দেওয়ার ব্যবধান সব চেয়ে বেশি রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ২২ হাজার। অন্য দিকে খড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে সবচেয়ে কম ২৩৪টি ভোট মহিলারা বেশি দিয়েছেন।
জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ভোট পড়েছে ১,০১৬,১৩টি। তার মধ্যে ৪০০০৪ জন পুরুষ এবং ৬২০৭৫ জন মহিলা ভোট দেন। সুতি বিধানসভা কেন্দ্রে পুরুষ ভোট ৬২৩৮৯টি, মহিলা ভোট ৬৭০৩৬টি। জঙ্গিপুরে ৫৮৪৬৮ ও ৬৬৪৮৮, সাগরদিঘিতে ৫৫১৩৫ ও ৫৯৯৭৭, লালগোলায় ৪৮২৪২ ও ৫৯২৫১, খড়গ্রামে ৬২২১৯ ও ৬২৪৫৩টি। ব্যতিক্রমীভাবে নবগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ২২৮২টি পুরুষ ভোট বেশি পড়েছে। ওই কেন্দ্রে ৭০৪৯১ জন মহিলা ভোট দিলেও পুরুষ ভোট পড়েছে ৭২৭৭৩টি।
উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির হার কম কেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “কাজের জন্য জেলার বাইরে থাকা ভোটাররা আসতে পারেননি বলেই ভোট কম পড়েছে। ওই ভোটারদের মধ্যে সিপিএম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই সমর্থকই রয়েছেন।” তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি অবশ্য বলেন, “উৎসবের ১১ দিন আগে ভোট হওয়ায় কাজের জন্য যাঁরা বাইরে রয়েছেন তাঁরা আসেননি। সেই সঙ্গে উপনির্বাচনে সাধারণত ভোট কম পড়ে বলে দেখা গিয়েছে।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “কাজের জন্য জেলার বাইরে থাকার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননিএটাই মুখ্য ও গৌণ কারণ। এছাড়া ভোট কম পড়ার অন্য কোনও কারণ নেই।”
বুধবার দিনভর ভোটের ক্লান্তি কাটিয়ে গত দু’দিন ধরে নেতা কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে। অভিজিৎবাবু অবশ্য ভোটের পরের দিনই দেশের বাড়ি মিরিটিতে ফিরে গিয়েছেন। শুক্রবার রাতে তাঁর ফেরার কথা।
আহিরণ এ বারের নির্বাচনে রয়েছে সকলের সন্দেহের নজরে। আলিগড়ের ভিত অনেকটাই নড়িয়ে দিয়েছে দুই রাজনৈতিক শক্তি, কংগ্রেস ও সিপিএমের শক্ত ভিত। যদিও কংগ্রসের বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “সুতি নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই, ৫ থেকে ৬ হাজারে লিড থাকবে। ভোট বেশি পড়েছে মানে কংগ্রেসের ভাল হবে।”
ইমানির কথায়, “বিজেপি জঙ্গিপুর লোকসভায় এক সময় ভাল ভোট পেতো। সে ক্ষেত্রে এ বার এক লক্ষ ভোট পেলেও ভয়ের কিছু নেই।” ভোট জেতার অঙ্ক অন্যভাবে শুনিয়েছেন ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হকও। জঙ্গিপুর অবশ্য তাঁর এলাকায় পড়ে না। রাজ্য কংগ্রেসের ওই সাধারণ সম্পাদক এ বারের নির্বাচনে সুতিতে বেশি সময় দিলেও গিয়েছেন খড়গ্রাম, নবগ্রাম, জঙ্গিপুর সর্বত্রই। তাঁর হিসাবে, “সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাই কর্মীদের বলা হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটের মতোই খাটতে হবে সকলকে। তা ছাড়া এ বারে দেখলাম সিপিএমের সংগঠন বহু জায়গাতেই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক নেই। পোলিং কম তাই মার্জিন হয়তো কমবে।” সাগরদিঘিকেও এ বার সন্দেহের চোখে দেখেছেন কংগ্রেস শিবির। সাগরদিঘির দলীয় পর্যবেক্ষক আমিনুল ইসলামের অবশ্য জয়ের ব্যাখ্যাটা এই রকম“সিপিএম নেতাদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। তাই সাগরদিঘিতে কোনও ক্ষতি হবে না। নবগ্রামে সিপিএমের বহু নেতার প্রার্থী পছন্দ হয়নি। সেখানের বিধায়ক নাকি সেভাবে খাটেইনি।”
সিপিএমের শিবিরেও জয়ের অঙ্ক মুখে মুখে ফিরছে। দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপির ভোটের অঙ্ক লক্ষ ছাড়াবে। অন্য ছোট দলগুলির প্রচার দেখে মনে হয়েছে তারাও কিছু ভোট টানবে। ২০০৯-তে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু বাস্তবে জঙ্গিপুরে সিপিএমের ভোট ৪৩-৪৪ শতাংশ। তাই জয় নিয়ে আশা তো করছিই।” সিপিএমের প্রার্থী মোজাফ্ফার হোসেনের কথায়, “লড়াইটা রাজনৈতিক। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে। বেশি ভোট পড়ার অর্থ কংগ্রেসের সুবিধা হবে এটা ঠিক নয়। গত দু’দিনে ভোট সর্ম্পকে বিভিন্ন এলাকা থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে নবগ্রাম, সাগরদিঘি, জঙ্গিপুর ও সুতিতে আমরা এগিয়ে থাকব।” |