|
|
|
|
|
এবিজিকে পাল্টা চাপ
দিতে চরমপত্র বন্দরের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
শেষ পর্যন্ত হলদিয়া বন্দর থেকে এবিজি-র বিদায়ের ঘণ্টা এক রকম বেজেই গেল! শুক্রবার কলকাতা বন্দরের অছি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১৯ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু না করলে এবিজি-কে চরমপত্র দেওয়া হবে। যার অর্থ, এবিজি-র সঙ্গে কলকাতা বন্দরের যে চুক্তি হয়েছিল, তার ধারা মেনে চুক্তি ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্দর-কর্তৃপক্ষ চুক্তি খারিজ করে দিতে পারেন।
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যানের গড়ে দেওয়া ৯ সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্তেই এ দিন সিলমোহর দেওয়া হয় অছি পরিষদের বৈঠকে। ওই সব সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি ছিল, এবিজি-কে ৪এ বার্থে মাল ওঠানো-নামানোর বরাত দেওয়া হবে। পরিবর্তে এবিজি-কে বলা হয়েছিল, ছাঁটাই হওয়া ২৭৫ জন শ্রমিককেই পুনর্বহাল করতে হবে। ৯ সদস্যের কমিটির ওই সিদ্ধান্তকে এক তরফা বলে সমালোচনা করে এবিজি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা নিজেদের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের কাছে বিষয়টি তুলবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার আগে অছি পরিষদের শুক্রবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়েছিল এবিজি।
শুক্রবারের বৈঠকে অছি পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, ৯ সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে এবিজি-কে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে হলদিয়া বন্দরে কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে ধরে নিতে হবে যে এবিজি-র আর হলদিয়া বন্দরে কাজ করার ইচ্ছা নেই। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কলকাতা বন্দরের যে চুক্তি হয়েছিল তার ৭.১২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ধারা অনুযায়ী কেউ চুক্তি ভঙ্গ করলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্দর-কর্তৃপক্ষ চুক্তি খারিজ করে দিতে পারেন।
তবে অছি পরিষদের শর্ত যে এবিজি পুরোপুরি মানবে না, শুক্রবার তার ইঙ্গিত মিলেছে। বন্দর-কর্তৃপক্ষ তাদের বরখাস্ত করলে তারা আইনের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে এবিজি। হলদিয়া বন্দরে এত দিন কাজ বন্ধের জন্য তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণও চাইবে তারা। সংস্থার সিইও গুরপ্রীত মালহি এ দিন বলেন, “আমরা এমন কোনও খবর শুনিনি। তাই এখনই কিছু বলতে চাই না।” সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, হলদিয়া বন্দরে যে ২৭৫ জন শ্রমিককে তারা ছাঁটাই করেছে তাদের সবাইকে কাজে ফেরানো সম্ভব নয়। দক্ষ শ্রমিকদেরই নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে নেবে ওই সংস্থা। ছাঁটাই পদ্ধতি যে নিয়ম মেনেই হয়েছে, তা-ও এ দিন আর একবার জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
এবিজি-কে নিয়ে সমস্যা শুরু হওয়ার পরে চলতি সপ্তাহেই হলদিয়ায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্দরে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন। তিনি এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবিজি-কে কটাক্ষও করেন। কিন্তু তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠন হলদিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে লিফলেট ছড়িয়ে স্বীকার করে যে, বন্দরের অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। যা কার্যত মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী বক্তব্যের বিরোধী। তার পরেও অবশ্য হলদিয়া
বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে কাজ শুরু করেনি এবিজি। উল্টে তারা অভিযোগ করে, তাদের সংস্থার কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হেনস্থাও করা হচ্ছে। কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চায় তারা। গোয়েন্দারাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএনটিটিইউসি-র আন্দোলনের জেরে হলদিয়ার পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে পড়েছে।
এর পরেও অবশ্য শিল্পমন্ত্রী বৃহস্পতিবার মহাকরণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, হলদিয়া বন্দরে সব কাজ হচ্ছে। কিন্তু এ দিন অছি পরিষদ যে প্রস্তাব নিয়েছে, তাতে অন্য ছবিই ফুটে উঠেছে। হলদিয়া বন্দরে যে শ্রমিক সমস্যা চলছে এবং কাজে যে বাধা আসছে, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে অছি পরিষদ। হলদিয়া বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে এবিজি কাজ না করায় যে পরিমাণ মাল সেখানে জমে রয়েছে, তা সরানোর জন্য বন্দর-কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছে তারা।
অছি পরিষদের এ দিনের সিদ্ধান্তে হলদিয়া বন্দরেরই আরও ক্ষতি হবে মন্তব্য করেছে জাহাজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। তবে বন্দর সূত্রে বলা হয়, এ দিন অছি পরিষদ হলদিয়ায় আরও বেশি করে যান্ত্রিক ভাবে মাল ওঠানো-নামানোর ব্যবস্থা কার্যকর করতে চায়। প্রয়োজনে সব বার্থেই এই ব্যবস্থা চালু করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এবিজি হলদিয়া ছেড়ে চলে গেলে দেশের অন্য কোনও সংস্থা আর সেখানে কাজ করতে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সূত্রের দাবি, হলদিয়ায় যে সব সংস্থা মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করে, তাদের কারও কাছেই ওই পরিকাঠামো নেই। |
|
|
|
|
|