|
|
|
|
|
|
|
...ঢাকে পড়ল কাঠি: অন্য শৈশব |
ঠাকুর দেখব, জমিয়ে খাব...
শ্রেয়সী ঘোষ |
|
“পুজোর সময় ঢাক বাজে! আমি নাচি! আমি হেব্বি নাচতে পারি দিদি।” বলে উৎসুক চোখে তাকায় শম্ভু। ঘাড় নিচু করে আঁকছিল অর্জুন। পুজো মানে? ‘‘ঠাকুর দেখতে বেরবো, ভাল ভাল খাবো” জবাব তৈরি। দশ-বারো বছরের শিশুর সারল্যে এই উত্তরগুলো দিচ্ছেন যাঁরা তাঁরা কেউ চব্বিশ কেউ তিরিশ আবার কেউ বা তারও বেশি। |
|
“ছোটবেলায় কোনও গুরুতর রোগে বা কোনও আঘাতে ওদের মানসিক বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। দরিদ্র বাবা-মায়েরা চিকিৎসা করাতে না পেরে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে যান। সেখান থেকেই সরকারি হোম হয়ে এখানে আসে ওরা,” বলছিলেন সল্টলেক সিএল ব্লকের এক হোমের কর্ণধার তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়। গৃহহীন, অনাথ মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ২৫ বছর ধরে কাজ করছে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান।
দরজার সামনে এসে ভিড় জমিয়েছে তিথি, উদয়, চানু। “পুজোর সময় বড় বড় বাস আসে দিদি, আমরা ঠাকুর দেখতে যাই,” বলল অর্জুন। “পুজোর কটা দিন ওদের খুব মজা। খাওয়া, বেড়ানো, নতুন জামা কাপড়, আপনারা যা যা করেন সবই। সবই ব্যবস্থা করেন বিভিন্ন ব্লকের পুজো কমিটি আর বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা।” বললেন তন্ময়বাবুর স্ত্রী ও সহকর্মী তুলসীদেবী। |
|
পঞ্চমী থেকে দশমী অর্জুন, তিথিদের ‘প্যাকড শিডিউল’-এর বিবরণ শুনে তাক লেগে যাওয়ারই কথা। পঞ্চমীতে কাঁকুড়গাছির একটি ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন। তন্ময়বাবুর কথায়, “ওরা প্রতি বছর এদের হাতে জামা-কাপড়, ওষুধ, মিষ্টি তুলে দেন।” ষষ্ঠী? সে দিন হেঁটে কাছের ব্লকগুলোর ঠাকুর দেখার দিন। বৈশাখীর একটি ক্লাব সপ্তমীতে প্রতি বছর বাসে সল্টলেকের পুজোগুলো ঘুরে দেখার ব্যাবস্থা করে। অষ্টমীর দিনটা বিশেষ। কেন না ওই দিন হরিপদ, সোমা, রামজিরা খোলা আকাশ দেখার সুযোগ পান। হরিপদ, সোমারা বেশির ভাগই শয্যাশায়ী বা হুইলচেয়ার-বন্দি।
ওঁরা কি সাড়া দেন? বোঝেন আলোর রোশনাই? পুজোর মণ্ডপ? তন্ময়বাবু বলেন, “বোঝে, চোখেমুখে উত্তেজনা ফুটে ওঠে। কেউ বা হাসে, মাথা নাড়ে।” ওঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরে আসার সময় ওদেরই এক জন, শম্ভু দাস বললেন, “আবার আসবে! আমাদের নাটক হয়। আমি মন্ত্রী সাজি।” |
|
|
|
|
|