...ঢাকে পড়ল কাঠি: বিপন্ন পরিবার
সঙ্কটে শিল্প
কাঁচামালের দাম বেড়েছে। পুঁজি কম। তাই মহাজনের ধার নিতে হয়। আগে পুজোর সময়ে কাজের চাপ সামলাতে লোক লাগাতে হত। এখন অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরই কাজ করতে হয়। এ ছবি হাওড়ার শিবপুরের দাঁ পরিবারের। শোলার কাজই এঁদের জীবিকা।
মূলত প্রতিমার সাজ তৈরি করেন গৃহকর্তা অশোককুমার দাঁ এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনা দাঁ। জড়িত পরিবারের অন্যান্যরাও। বাবার কাছেই হাতেখড়ি অশোকবাবুর। শোলার মুকুট, চাঁদমালা, টোপর, মালা ইত্যাদি তৈরি হয়। এ ছাড়া তারের সাজ, গোল্ডেন সাজ ও আর্টের নানা সাজও তৈরি হয়।
অশোকবাবু জানালেন, প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে কাঁচামালের দাম বাড়ছে। শোলার জোগানও কম। ফলে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। গত বছর এক বান্ডিল (দশ পিস) শোলার দাম ছিল ১৫-২০ টাকা। এ বছর হয়েছে ৪০ টাকা। আগে বড়বাজারে শোলা পাওয়া যেত। এখন উল্টোডাঙা থেকে আনতে হয়।
এ কাজে শোলা ছাড়াও জরি, চুমকি, ফয়েল, সলমা, গোগরি, মুক্তোপুঁথি, কিরণ, ভেলভেট, ফুঁকোমালা, রাংতা, মোম, বিরজা ইত্যাদি লাগে। অশোকবাবু জানান, প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে। আগে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে সাজ তৈরি হত। এখন রোলেক্স রাংতা দিয়ে তৈরি হয়। কল্পনাদেবী বলেন, “সব জিনিসের দামই বেড়েছে। কিন্তু আমরা দাম বাড়াতে পারছি না। দাম বাড়ালে ক্রেতা পাব না। পরিশ্রম অনুযায়ী দাম পাই না।”
ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা নেই। পুঁজিও কম। মহাজনের থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। “পুজোর সময় যা উপার্জন হয় তা ধার শোধ করতেই চলে যায়। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে”, বললেন অশোকবাবু। ক্রমেই অবস্থা খারাপ হচ্ছে। পরের প্রজন্ম এ কাজে আর আসতে চাইছেন না।
অশোকবাবুরা বংশপরম্পরায় কলকাতা ও হাওড়ার বেশ কিছু বনেদি বাড়িতে প্রতিমাও সাজাতেন। অশোকবাবু বলেন, “ঠাকুর সাজিয়ে খুব আনন্দ পেতাম। অসুস্থতার জন্য এখন আর সব জায়গায় যেতে পারি না।”

আগের বছর এ বছর
ফুঁকোমালা৭০ টাকা প্যাকেট
চুমকি১৬০ টাকা কেজি
পুঁতি১০০ টাকা প্যাকেট
রাংতা৯০ টাকা প্যাকেট
১২০ টাকা প্যাকেট
২২০ টাকা কেজি
৫০ টাকা প্যাকেট
১২৫ টাকা প্যাকেট

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.