মনোরঞ্জন ১...
সব চরিত্র সশরীরে

সিন ১
প্রসেনজিৎ: তোর টিম ইন্ডিয়ার জার্সিটা কোথায়?
সৌরভ: ওটা কী হবে?
প্রসেনজিৎ: ওটা ফাটাফাটি লাগবে।
সৃজিত: হ্যাঁ, খুব ভাল হয়। আমি তো ওটা প্রথম থেকেই বলছিলাম।
(টিম ইন্ডিয়ার ২৪ নম্বর জার্সিটা আনার জন্য তোড়জোড় শুরু)
সৌরভ: এখানে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিটা মানাবে? এটা তো দাদাগিরি। টক শোয়ের স্যুটটা ভাল হয় না?
সৃজিত: ওকে।
সিন ২
প্রসেনজিৎ: কনগ্র্যাচুলেশনস ফর ‘মুক্তধারা’।
ঋতুপর্ণা: (একটু থমকে গিয়ে) থ্যাঙ্ক ইউ (এক গাল হাসি)।
সিন ৩
শাশ্বত: নমস্কার। সৌরভ গাঙ্গুলি না?
সৌরভ: অ্যা! বব বিশ্বাস (কিছুক্ষণ পরে গুছিয়ে নিয়ে) এই লুকটা খুব স্কেয়ারি। শাশ্বত, তোমাকে আগে বলা হয়নি। চার চার বার ‘কহানি’ দেখেছি। ইউ আর অসাম।
শাশ্বত: দাদা, কামিং ফ্রম ইউ...।
সিন ৪
প্রসেনজিৎ: শোন, বেশি দুষ্টুমি করিস না আমার সঙ্গে।

প্রসেনজিৎ: দাঁড়া, তোকে আমি দেখাচ্ছি। বাইরে অনেক লোকের ভিড়। অটোগ্রাফ চাইছে। সবাইকে অটোগ্রাফ দেব, আর নিজের নামের তলায় তোর ফোন নাম্বারটা লিখে দেব।
সিন ৫
শাশ্বত: এই কোয়েল, তোর বিয়ের মেনুতে কী আছে রে? পাঞ্জাবি না বাঙালি রান্না?
কোয়েল: সব রকমের তন্দুরি খাবার আছে। তার সঙ্গে বাঙালিও।
শাশ্বত: তোর বর, রানের ফেভারিট ছোলার ডাল?
কোয়েল: ওটা তো আছেই। তোমার জন্য নলেন গুড়ের সন্দেশও আছে।
সিন ৬
স্বস্তিকা: এই যে আমাদের (পড়ুন কোয়েল আর ওকে) আগে থেকে না জানিয়ে, বেশ কায়দা করে শ্যুট করিয়ে নিলে...
সৃজিত: (হাসি)
স্বস্তিকা: একদম হেসো না। আমার কিন্তু পয়েন্টটা মনে থাকবে। কিছু ভুলব না আমি। সব শোধ নেব, দাঁড়াও না। (হাসি)
সিন ৭
ঋতুপর্ণা: স্থিরচিত্র তো হল। আমার সঙ্গে চলচ্চিত্রটা কবে?
সৃজিত: নিশ্চয়ই হবে। উই উইল।
কাট


সাতজন স্টার। একজন বিখ্যাত পরিচালক। আইকনিক চরিত্রদের নিয়ে এমন ফোটোশ্যুট হয়ত ভারতে এই প্রথম। আর সেটাও শুধুমাত্র পত্রিকার জন্য।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। উর্দি পরা। ইন্ডাস্ট্রির বুম্বাদা থেকে ঠোঁট কাটা প্রবীর রায়চৌধুরী। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর সিরিয়াল কিলার।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ডিগনিফায়েড। ‘মুক্তধারা’র নীহারিকা।
দেব। হাতে চেন। বুকে রক্তের দাগ। ভরপুর অ্যাটিটিউড। ‘চ্যালেঞ্জ’-এর আবির।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর কদলীবালা। নাকি সুরে এই বুঝি গেয়ে উঠবে ‘‘দেবো না, দেবো না”।
কোয়েল মল্লিক। চোখে চশমা। হাতে আত্মহত্যার দড়ি। ‘হেমলক সোসাইটি’র ডিপ্রেসড মেঘনা।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সবচেয়ে খতরনাক। পাতাকাটা চুল। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। পেটটা ফুলোফুলো। হাতে বন্দুক। বব বিশ্বাস। যে কোনও মুহূর্তে কাউকে ‘কহানি’র সেই ‘‘এক মিনিট” ডায়ালগ বলে রক্তহিম করে দিতে পারে।
আর তাঁদের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘দাদাগিরি’র দাদা।
স্টারেরা রেডি। সৃজিতও অল সেট। নিজের কেরিয়ারের প্রথম ফোটোশ্যুট ডিরেক্ট করতে। অবশ্য ব্যাপারটা অনেকটা একটা মিনি পুজোর আয়োজনের মতোই ছিল। বসুবাটির ঠাকুরদালান জমজমাট। ফ্যান্টাসির একটা জগৎ তৈরি করার চেষ্টা। এই চরিত্রগুলো দিয়ে ও তাদের জন্য। অনেকটা ঠিক লুইগি পিরানদেল্লোর ‘সিক্স ক্যারেকটারস ইন সার্চ অফ অ্যান অথর’ সিনেমাটির মতন। কয়েকটি ভীষণ জনপ্রিয় চরিত্র। যারা বাঙালির মননের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তবু এ সহজ ব্যাপার নয়। উইগ, কস্টিউমের সঙ্গে ইগো সামলানোটাও তো দরকার।
যখন তিন তিনটে মেকআপ ভ্যান বসুবাটির সামনে দাঁড়িয়ে, বিশাল ভিড় জমাটা স্বাভাবিক। ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ভিড় কমছে না। “সিনেমার শ্যুটিং হবে রে। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এ বুম্বাদা আর পরমব্রতকে দেখেছিলাম এই বাড়িতে। কিন্তু এই রকম আয়োজন তো দেখিনি কখনও। ওরে বাবা! কদলীবালা... থুড়ি... স্বস্তিকাকে দেখলাম। মেকআপ হচ্ছে। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সিক্যুয়েল হচ্ছে নাকি?” স্কুল ফেরত ছাত্রীর প্রশ্ন। আর একটা গলা ভেসে এল: “কিন্তু আমি যে ওদিকে ঋতুপর্ণাকে দেখলাম নীহারিকার সাজে। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সিক্যুয়েল হলে ‘মুক্তধারা’র নীহারিকা ওখানে কী করছে?”
জটলা বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে গল্পগুলো। “আমি প্রসেনজিৎ, দেব আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে একসঙ্গে দেখলাম। আমার আর দুর্গাপুজোতে ঠাকুর দেখতে যেতে হবে না। এ কি ‘দাদাগিরি’র নতুন এপিসোড?” জিজ্ঞেস করে আর এক পথচারী।
‘দাদাগিরি’র নতুন এপিসোড তো বটেই। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা, চলছে খাওয়া-দাওয়াও। মোচার চপ থেকে চিংড়ি মাছের মালাইকারি। ও! ক্যালকাটার সুস্বাদু প্লেটেও যেন বাতাবরণে থাকা টেনশন পুরোদস্তুর কাটছে না।
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা একসঙ্গে। কোয়েল-স্বস্তিকাও। প্রফেশনাল সব্বাই। কোথায় ভয় হচ্ছিল তাল না কেটে যায়। তবে কিনা এখানে ডায়নামিক্সটা সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেকটি চরিত্রের একটি ধারণা আছে অন্যান্য চরিত্রগুলোর সম্বন্ধে। আবার চরিত্রের বাইরেও এদের নিজেদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক রয়েছে। কেউ আবার এটাও বোঝেন যেখানে মানুষের ভাগ্য প্রতি শুক্রবার পাল্টায়, সেখানে চিরস্থায়ী বলে কি কিছু সাজে?
সবথেকে প্রভাবশালী দেখাচ্ছিল যেন বব বিশ্বাসকে। স্ক্রিনের সিরিয়াল কিলার। অফ স্ক্রিন ভীষণ জনপ্রিয়। সৌরভ বললেন, “আমি চারবার ‘কহানি’ দেখেছি। কোনও অপশন ছিল না আমার। মেয়ের খুব পছন্দের ছবি। শাশ্বত অসাম।” শাশ্বতর মুখে মৃদু হাসি। হঠাৎ যদি ববের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়? “দেন আই উডন্ট লিভ টু টেল দ্য টেল এনিমোর। আমার খেলা সেখানেই শেষ। ভাগ্যিস এটা শ্যুটিং,” সৌরভ হাসতে হাসতে বলেন।
বব যে পপুলার কারণ আছে। সারাক্ষণ পেছনে লাগে। “শোনো অপুদা (শাশ্বত), ফেব্রুয়ারি ফার্স্ট দিনটা ফাঁকা রেখো। তোমার বিয়েতেও আমি গেছি, তখনও অভিনয় শুরু করিনি। ফেব্রুয়ারি ফার্স্টে যদি বল আউটডোর আছে, তা হলে না...,” কোয়েল শাসিয়ে বলেন।
শাশ্বত হেসে বলেন, “চলো ভাই, শ্যুটিংটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলো।” ঠাট্টা, ইয়ার্কির মধ্যে কে বলবে যে শাশ্বতর ভেতরে ভেতরে এত টেনশন? “মেয়ের ডেঙ্গি হয়েছে। এই শ্যুটটার পরেই হাসপাতালে ছুটব।” পরের মুহূর্তেই নিজের ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, “এই ভুঁড়িটা নিয়ে একটু প্রবলেম হচ্ছে। একটা গামছা আর কয়েকটা বই। কী ভাবে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে একটা বব বিশ্বাস ভুঁড়ি বানিয়েছে দেখ। ফিল্মে ঠিক যা করেছিল। একেবারে প্রেগনেন্ট লাগছে। ডেলিভারি (পড়ুন শ্যুটিং)টা হলে তবেই শান্তি।” বলেই আবার শট দিতে চলে গেলেন।
ইতিমধ্যে প্রসেনজিৎ রেডি। সৃজিতের সামনে দু’জন সিরিয়াল কিলার। কেমন হত এই দুই চরিত্রকে নিয়ে একটা ছবি বানানো গেলে? যদি রোজ সন্ধেবেলা এক পেগ হুইস্কি/বোর্নভিটা খেতে খেতে এরা আলোচনা করত ওদের নেক্সট টারগেট নিয়ে। প্রসেনজিৎ বলেন, “আইডিয়াটা বেশ। প্রবীর ববকে বলবে, তুই শালা এই মার্ডারটা করতেই পারবি না। আর বব বলবে, জাস্ট এক মিনিট লাগবে কাজটা সেরে ফেলতে।” আবার পরের দিন সন্ধেবেলায় দেখা। অডিয়েন্স জানবে না মার্ডারটা হয়েছে কি না। সাসপেন্স! তার পর একজন বলবে, পারলি না তো?”
“কিন্তু গলাটা কার? প্রবীর আটকাতে পারল না? নাকি বব?” শাশ্বত মুচকি হেসে বলেন। আর কে ডিরেক্ট করবে এদের? “চলো সৃজিত আর সুজয়কে বলি একসঙ্গে এটা ডিরেক্ট করতে। । আর মজার ব্যাপার কী জানো? দু’টোতেই পরমব্রত আছে। তবে জখম কে হবে সেটা এখনই বলছি না!”
শাশ্বত জানাতে নারাজ।
সৃজিত ততক্ষণে রেডি। দেবও চলে এসেছেন। “প্লিজ, কালো গেঞ্জিটাই পরি। সাদাটা বাদ দাও।” দেবের রিকোয়েস্ট। “দ্যাখ, তোকে ভাল লাগবে। তুই সাদাটাই তো পরেছিলিস চ্যালেঞ্জে। বিশ্বাস না হলে দেখে নে ইউ টিউবে,” সৃজিত বললেন। বাইরে প্রচণ্ড চিৎকার, দেবকে একটু দেখতে চেয়ে। স্কুল ড্রেস পরা একটি মেয়ে কাঁপতে কাঁপতে এসে বলে, “একটা অটোগ্রাফ দেবেন।
আর নাম্বারটা...।”
“আমাকে তোমার নাম্বারটা দাও। আমি ফোন করে নেব।” বলেন দেব। মেয়েটি চলে গেলে দেবের অ্যাসিসট্যান্ট বলেন, “দাদা কেউ তোমার নাম্বার চাইলে, সব সময় আমার নাম্বারটা দাও কেন? সবাই আমাকে দেব ভেবে ফোন করে।” দেব শুধু হাসেন। তার পর চলে যান প্রসেনজিতের কাছে। একটু খুনসুটি। বেশিটাই আড্ডা। “শোন, আমার সঙ্গে বেশি দুষ্টুমি করিস না। এসব কেরিয়ারের শুরুতে আমরাও অনেক করেছি। রীনাদির সঙ্গে শ্যুট করতে যেতাম। উনি বড় স্টার। ওঁর জন্য বড় গাড়ি। আর উনি গল্প করার জন্য যেতেন বাসে করে। ভিড় হলেই বলতাম এখানে কী? উনি তো বাসে আছেন,” প্রসেনজিৎ বলেন।
কথাবার্তা চলতে থাকে। ঋতুপর্ণা ততক্ষণে রেডি। হালকা একটা টেনশন। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কি কথা বলবেন? পুরনো কাসুন্দি আর ঘেঁটে কিই বা লাভ? “কনগ্র্যাচুলেশনস ফর ‘মুক্তধারা’।” প্রসেনজিৎ বলেন। ঋতুপর্ণা একটু হাসলেন। তারপর “থ্যাঙ্ক ইউ।” ওঁদের স্পিরিটে টেনশনটা আরও কেটে গেল। অন্তরালে যেন থিম সঙ্গীত বেজে চলছেসেই তো আবার কাছে এলে।
কাট টু অ্যাকশন।
শ্যুটিংয়ের শেষে সৃজিতকে জিজ্ঞেস করা হল। “কী ভাবে করলেন?” “একটা আইস ব্রেকারের দরকার ছিল। সবাই পুজোর আমেজে। প্রসেনজিৎ আর ঋতুপর্ণা, দু’জনেই খুব প্রফেশনাল। দু’জনেই আমাকে খুব বিশ্বাস করে। আর আমিও এমন কিছু করব না যাতে ওদের অস্বস্তি হয়।”
সেটা সত্যি। কে ভাবতে পারত যে ওরা দু’জনে কথা বলেন না? খুব কম লোকই জানেন প্রসেনজিৎ ‘মুক্তধারা’র মতো একটা ছবি করতে চেয়েছিলেন। “যে খবরটার ওপর ভিত্তি করে ‘মুক্তধারা’ বানানো, আমিও সেটা পড়েছিলাম। সুদেষ্ণা রায়-অভিজিৎ গুহকে বলেছিলাম যদি এটা নিয়ে কোনও গল্প ভাবতে পারে। তিন দিন পরে দেখলাম শিবু-নন্দিতা ওই নিয়েই ছবি করছে। আমি আইসল্যান্ডে ছিলাম যখন ‘মুক্তধারা’ রিলিজ হয়। হলে গিয়ে দেখার ইচ্ছে আছে।” উনি বললেন।
শ্যুটিং শেষে ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি কোনও কারেকশনাল হোমে নীহারিকা আর প্রবীর রায় চৌধুরীর দেখা হয়। তাহলে? “আমি প্রথমেই প্রবীর রায়কে অকথ্য ভাষায় কথা বলা কমাতে বলতাম। একটা ইন্টারেস্টিং ছবি হতে পারে। ইন ফ্যাক্ট একটা কমেডি। যেখানে প্রবীরের ভাষা ঠিক করে দিচ্ছেন নীহারিকা। আর প্রবীর বারবার ভুল করছে। কখনও ইচ্ছা করে ওকে খেপানোর জন্য,” বলেন ঋতুপর্ণা। “নীহারিকা আর বব বিশ্বাসকে নিয়েও একটা স্টোরি ভাবা যায়। সুজয় ঘোষের একটা অন্য ‘কহানি’। নীহারিকার মোস্ট চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট। বব বিশ্বাসকে রিফর্ম করা। আর ‘‘এক মিনিট” না বলে এখন বব বিশ্বাস বললেই চলে। ছবিটায় একটা নীহারিকা আর দু’টো বব বিশ্বাসের কমেডি অফ এরর। নীহারিকা বুঝতেই পারবে না কোনটা আসলদ্য কমপ্লিকেটেড সিরিয়াল কিলার বব আর কোনটা সাদামাঠা ইনসিওরেন্স এজেন্ট। অনেকটা ডনের শাহরুখের মতো।”
কথা চলতেই থাকে। সৃজিত ডেকে নেন কোয়েল-স্বস্তিকাকে। প্রথমে ঋতুপর্ণা, বব, কোয়েল আর স্বস্তিকা। তার পর বব ভ্যানিশ। তারপর ঋতুপর্ণা। বাকি রইলেন কোয়েল আর স্বস্তিকা। শ্যুটের পরে স্বস্তিকা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “যখন সৃজিতকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্ল্যানটা কী, ও কিছু বলেনি। ঋতুদির সঙ্গে শ্যুট করার সময় জিজ্ঞেস করলাম, এটাই শেষ তো? ও সিরিয়াস মুখ করে বলল, “আর একটা বাকি...” ওর এই দুষ্টুমিটা কিন্তু নোট করে রাখলাম। পরে সুদে-আসলে ফেরত দেব!”
সৌরভ এদিকে বললেন, “যাক। প্রাকটিস হয়ে গেল।” তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বললেন, “ঠিকই! কে বলতে পারে দাদাগিরি’র নতুন সিজন শুরু হবে না?” সৌরভ এসেছেন সোজা এয়ারপোর্ট থেকে। কাল মাঝরাত অব্দি কমেন্ট্রি দিয়েছেন অন্য শহরে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের। অথচ কী ঝকঝকে দেখাচ্ছে।
শ্যুটের শেষে তৃপ্তির হাসি হেসে সৃজিত বললেন, “শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম নীহারিকা মেঘনাকে কাউন্সেলিং করবে। বব আর কদলীবালা দু’জনেই তো মৃত্যুর এজেন্ট। যখনই মেঘনা মৃত্যু নিয়ে ভাবছে, কদলীবালা ভূত হয়ে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। কোয়েল আর স্বস্তিকা আমার খুব কাছের। ভেবলি (স্বস্তিকা) আমার চার বছরের পুরনো বন্ধু আর কোয়েলের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তবুও ওরা যে কোনও মুহূর্তে বলতেই পারত যে একসঙ্গে শ্যুট করব না। হয়ত একটা নিউট্রাল ভয়েসের আশ্বাস, একটা সেন্স অফ কোঅপারেশনএসব দেখেই আপত্তি করেনি।”
শ্যুটের পরে কোয়েলকে জিজ্ঞেস করা হলো কদলীকে নিয়ে। “আমার ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ খুব ভাল লেগেছে। কদলীবালার চরিত্রও। ছবিটির গানের সিনগুলোও ভীষণ এনজয় করেছি।” আর অভিনেত্রী স্বস্তিকা? “ইনহিবিশনলেস অ্যান্ড ক্যান পুল অফ ব্রেভ সিনস,” বলেই প্রসঙ্গ পাল্টে দেন। “একটা ‘মুক্তধারা’র সিক্যুয়েল করলে হয় না? আবির ডেনেস দ্য মেনেসের মতো একটা চরিত্র। ব্রুডিং নাইজেলের মতো নয়। আর নীহারিকা হিমশিম খাচ্ছে তাকে শোধরাতে,” কোয়েলের সাজেশন।
স্বস্তিকা দূরে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করা হল কোয়েলের সঙ্গে কাজ করবেন? “কারও সঙ্গে কাজ করব না এটা কিন্তু কোনও দিন বলিনি। আমি শ্যুটিংয়ের সময় কোনও পারসোনাল ব্যাগেজ ক্যারি করি না। অনেককে দেখেছি ইন্টারভিউতে বলতে যে ওর সঙ্গে কাজ করবেন না। তার মাস দু-এক পরে ভোল পাল্টে যায়। কেমন দাঁত বার করে একসঙ্গে কাজ করে। কেউ কোনও প্রশ্ন করে না। আমি এই সব হিপোক্রিসিতে নেই। পুরুষমানুষ হল বিদুরের জাত। অনেককেই বলতে শুনেছি যদি সম্পর্ক ভেঙে যায়, তা হলে কিন্তু একসঙ্গে আর কাজ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা। অদ্ভুত।”
সামনে কোয়েলের বিয়ে। “হ্যাঁ জানি... ও বেশ সুন্দর করে নিজের প্রাইভেট লাইফ সম্বন্ধে কথা এড়িয়ে গেছে। সবাই সব জানে। তবু ও নিজে কিছু বলেনি। আগেকার দিনে শুনতাম হিরোইনরা এভাবেই নিজেদের প্রাইভেট লাইফ সম্বন্ধে সাসপেন্স মেনটেন করেছেন। আমি অবশ্য কোনও দিন এই দলে নেই,” স্বস্তিকার স্পষ্ট জবাব।
জিতের বিয়েতে নিমন্ত্রণ ছিল। কোয়েলের বিয়েতে ওকে কী উইশ করবেন? “কলকাতায় ছিলাম না বলে, জিতের বিয়েতে যেতে পারিনি। তবে ফোন করেছিলাম ওকে। বন্ধু হিসাবে ওকে উইশ করেছিলাম। হেসে এ-ও বলেছিলাম ট্রাই নট টু ফাইট উইথ ইওর ওয়াইফ।
কোয়েল-রানের বিয়ের জন্যও রইল শুভেচ্ছা। আই উইশ দেম দ্য ভেরি বেস্ট ফর আ হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।”
শ্যুট শেষের দিকে। গ্র্যান্ড ফিনালেতে একটা মক দাদাগিরি। জিতল কে? অবশ্যই পুজো স্পিরিট।

ড্রেসিং রুম
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: হর্ষবর্ধন নেওটিয়া
ফোটোগ্রাফার: দেবাশিস মিত্র
সহকারী ফোটোগ্রাফার: কৌশিক সরকার
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মেকআপ ও হেয়ার: সুভাষ বেরা
দেবের মেকআপ ও হেয়ার স্টাইল: সোমনাথ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-এর মেকআপ: রাম রজ্জক
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, দেব, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পোশাক ও স্টাইলিং: অজপা মুখোপাধ্যায়
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের পোশাক: রাধিকা সিংহি
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের স্টাইলিং: রজত-কৌশিক
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের হেয়ার স্টাইল: আরতি চন্দ
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মেকআপ: নবীন দাস
স্বস্তিকার মুখোপাধ্যায়ের জুয়েলারি: অঞ্জলি জুয়েলার্স
কোয়েলের হেয়ার স্টাইল: অরুণ ও চুমকি
প্রপস্: গৌতম বসু
হসপিটালিটি পার্টনার: স্পেশালিটি রেস্টুরেন্টস লিমিটেড
(মেনল্যান্ড চায়না এবং ও! ক্যালকাটা)
বিশেষ সহায়তা: নীতেশ শর্মা
সহায়তা: পিয়া সেনগুপ্ত
পরিকল্পনা: গৌতম ভট্টাচার্য
রূপায়ণ ও বিন্যাস: ইন্দ্রনীল রায়
সংযোগসুত্র ও জোগাড়যন্ত্র: সংযুক্তা বসু ও
অরিজিৎ চক্রবর্তী
ডিজাইনার: শমিত চন্দ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.