মাস কয়েক আগের কথা। বিমানবন্দরের দু’নম্বর গেট পেরোনোর পরে যশোহর রোডটাই কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছিল। রাস্তা জুড়ে ছিল নানা আকারের গর্ত। দুর্ঘটনাও ছিল নিত্যসঙ্গী। দু’নম্বর গেট এলাকার দোকানি রবি বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। মোটরসাইকেলের পিছনে মেয়েকে বসিয়ে স্কুলে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। মোটরবাইকের চাকা গর্তে পড়ে যাওয়ায় রাস্তায় ছিটকে পড়েছিল একরত্তি মেয়েটি। রবিবাবু বলেন, “ঈশ্বরই সে দিন আমার মেয়েটাকে রক্ষা করেছিলেন।”
ওই এলাকারই বাসিন্দা সুবোধ দাসের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। যানজটে ফেঁসে দেরি করে বাড়ি ফেরাও ছিল রোজকার অভিজ্ঞতা।”
কিন্তু দুঃস্বপ্নটা বদলাতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে পুজোর আগে শুরু হয়েছে মেরামতির কাজ। ফলে গত কয়েক দিনে যশোহর রোডের যাতায়াতের ছবিটাও বদলেছে অনেকটা। যশোহর রোডের গর্তে তাপ্পি লাগানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র এক কর্তা জানান, পুজোর আগে রাস্তা পুরো মেরামত করে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই প্যাচওয়ার্ক বা তাপ্পি মেরে বড় বড় গর্তগুলি মেরামত করা হয়েছে। ওই সংস্থার আর এক ইঞ্জিনিয়ার জগন্নাথ সামন্ত বলেন, “বৃষ্টির মরসুম শেষ হলেই স্থায়ী মেরামতির কাজ শুরু হবে।” |
যশোহর রোড, ১ নম্বর গেটের কাছে। ছবি: শৌভিক দে |
রাস্তার স্থায়ী মেরামতির দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। কারণ, তাপ্পি মারা হলেও এখনও ছোটখাটো গর্ত রয়ে গিয়েছে। যা মোটরবাইক চালকদের বিপদের কারণ হতে পারে। পুজোর আগে অন্তত ওই ছোটখাটো গর্তগুলি ভরাটের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
যশোহর রোডের হাল খারাপ হলেও ভিআইপি রোড তুলনায় ভাল অবস্থাতেই ছিল। বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছে উড়ালপুল তৈরির জেরে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। সেগুলি অবশ্য এর আগেই মেরামত করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এক নম্বর গেটের কাছে বাসস্ট্যান্ডের হাল এখনও খারাপ। স্ট্যান্ডে ঢোকার মুখেই প্রায় এক হাত গর্ত। ভিতরের রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। মাস কয়েক আগেই ওই জায়গায় নিয়ন্ত্রণহীন বাসের ধাক্কায় মারা যান শান্তনু মজুমদার নামে এক ব্যক্তি। ভিআইপি রোডের জোড়ামন্দিরের কাছে উড়ালপুল তৈরির কাজ চলার জন্যও রাস্তার অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অবশ্য ওই রাস্তার ত্রুটি নেই। ‘ক্ষতস্থানে মলম’ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসেও। ওই দিকে কাদাপাড়া, সায়েন্স সিটি, অজয়নগর, কালিকাপুর অঞ্চলের রাস্তা প্রায় বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল নিত্যযাত্রীদের কাছে। অনেক জায়গাতেই পিচ উঠে গিয়েছিল। সেই এলাকাগুলিতেও তাপ্পি মারার কাজ শুরু করেছে কেএমডিএ। তাদের দাবি, উল্টোডাঙা থেকে কামালগাজি পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা তাপ্পি দিয়ে আপাতত মেরামত হয়েছে। বর্ষার পরে পাকাপাকি মেরামতি হবে। কেএমডিএ-র সিইও বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হবে। যার ফলে রাস্তা সহজে নষ্ট হবে না।”
তবে, কেএমডিএ মেরামতির কাজ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেও অনেক রাস্তাই এখনও খারাপ হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে পার্ক সার্কাস কানেক্টর ও তার সংলগ্ন ইএম বাইপাসের অবস্থা এখনও যথেষ্ট সঙ্গীন। ওই এলাকায় উড়ালপুলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাস্তার এমন হাল। পার্ক সার্কাস কানেক্টরে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়ে রয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টির জল জমায় পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই রাস্তায় একে তো বড় বড় গর্ত, তার উপরে যথেষ্ট আলোও নেই। দুইয়ে মিলে রাতে চলাচল করাই দায়। তাঁদের অভিযোগ, উড়ালপুল তৈরি করার সময়ে ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে জমা জলও বার করা যাচ্ছে না।
পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তার আগে রাস্তার একটু অন্তত উন্নতি হোক, চান এলাকাবাসী। |