অন্য দিনের মতোই শুক্রবারও রেললাইনের ধারে বেড়াতে এসেছিল তিন বন্ধু। লাইনের দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ! বর্ধমান-হাওড়া লাইনে গাংপুর ও বর্ধমান স্টেশনের মধ্যে লাইনের এক জায়গায় ইঞ্চি চারেকের ফাটল। ওই লাইন দিয়েই ছুটে আসছে আপ হাওড়া-বালিয়া এক্সপ্রেস। কী করবে বুঝে না পেরে কোমরে জড়ানো গামছা খুলেই প্রাণপণে নাড়াতে শুরু করে ওরা। দেখতে পেয়ে চালক এমার্জেন্সি ব্রেক কষেন।
ওরা হিরণ হাজরা, বাবু দাস ও শিবশঙ্কর চৌধুরী। ওদের মধ্যে একমাত্র হিরণই স্কুলে যেতে পেরেছে। বাকিরা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেলে রায়নগর এলাকার কাছে আপ লাইনে ফাটলের জেরে লাইনটি দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ওই তিন যুবক গামছা নেড়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। মেরামতির কারণে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বিকেল সোয়া ৪টে থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। রাতেও রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে। তবে ট্রেন চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। |
বর্ধমান স্টেশনের ম্যানেজার অসীমকুমার রায় বলেন, “লাইনটা দু-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। কোনও মতে ওই ট্রেনটিকে লাইনে জোড়াতলি দিয়ে পার করিয়ে দিই। তার পরে ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর মেরামতির কাজ শুরু করে।” তিন বন্ধুকে পুরস্কৃত করার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই গামছা নেড়ে ট্রেন দুর্ঘটনা রোখেন। তবে বিষয়টি জানিয়ে আমরা পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠাব। ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরও পাঠাবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষই নেবেন।”
যাত্রীদের কাছে কিন্তু এখন এইতিন বন্ধুই ‘হিরো’। বর্ধমানের বাসিন্দা অনিমা দফাদারের কথায়, “লাইনে ফাটল দেখে খুবই আতঙ্কিত। যদি ওই তিন যুবক গামছা না ওড়াত, তাহলে হয়তো প্রাণে মরতে হত। ওদের কাছে কৃতজ্ঞ।” |