সিটুর জেলা সভাপতি মেঘবরণ সেনের নেতৃত্বে মালদহের ইস্ট এন্ড সিল্ক ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের শ্রমিকেরা কারখানার উৎপাদন ১৫ দিন ধরে বন্ধ করে রাখায় অস্বস্তিতে পড়েছে সিটুর রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশ। এক দিকে সিটুর রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব বলছেন, ওই কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য দিকে, দলের মালদহ জেলা সভাপতি মেঘবরণ সেন নিজেই ওই কারখানার ইউনিয়নেরও সভাপতি। যদিও তাঁর দাবি, সিটু নেতা হিসেবে এই আন্দোলনে তিনি যুক্ত নন। গোটা ঘটনাপ্রবাহে জেলার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় নেতারা কি এখন বিপাকে পড়েই এই আন্দোলনের সঙ্গে সিটুর সম্পর্ক অস্বীকার করতে চাইছেন? আইএনটিইউসি’র জেলা সভাপতি কাজি নজরুল ইসলামের দাবি, “ওই কারখানার ইউনিয়নটি সিটুই নিয়ন্ত্রণ করে। এখন বিপাকে পড়ে তারা বলছে, আন্দোলন সম্বন্ধে কিছুই জানে না। এটা পরিষ্কার দ্বিচারিতা।”
সিটুর দাবি, তারা কারখানা বন্ধ করে কোনও আন্দোলন করছে না। সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী এই দিন বলেন, “জেলা থেকে আমাদের নেতৃত্ব আমাকে জানিয়েছেন, ওই সিল্ক কারখানার আন্দোলনের সঙ্গে সিটুর কোনও সম্পর্ক নেই। ওখানে যে ইউনিয়ন রয়েছে, সেটি সিটুর নয়।” প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এই কারখানা বন্ধ করে সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিটুর জেলা সভাপতি মেঘবরণ সেন? কেনই বা কারখানা খোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও শ্রম দফতর সিটুর জেলা সভাপতিকে বারবার বৈঠকে ডাকছেন? এ ব্যাপারে সিটুর জেলা সম্পাদক প্রণব দাসের সাফাই, “ওই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সভাপতির ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।”
কী বলছেন জেলা সিটুর সভাপতি মেঘবরণবাবু? বুধবারই তিনি বলেছিলেন, সিটু এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এই দিন তাঁর কথায় অন্য সুর। তাঁর বক্তব্য, “সিটু এই আন্দোলনে যুক্ত নয়। কিন্তু আমি এই কারখানার জন্মলগ্ন থেকেই এই ইউনিয়নের সভাপতি।” কিন্তু সিটুকে না জানিয়েই বা দলের অনুমতি ছাড়াই তিনি কী করে এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন? মেঘবরণবাবু বলেন, “শ্রমিকেরা আমার কাছে এসেছিলেন, তাঁদের কী করে ফেরাব?” সেক্ষেত্রে, প্রশ্ন ওঠে, সিটু কারখানা বন্ধ করে আন্দোলনের পক্ষপাতী নয়, তা জেনেও তিনি কেন কারখানা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন? মেঘবরণবাবুর কথায়, “ন্যায্য দাবি আদায় করতেই আন্দোলন করতে হচ্ছে।” কিন্তু জেলা সিটু সে কথা জেনেও কেন তাঁকে নিবৃত্ত করেনি? জেলা সম্পাদক প্রণববাবুর জবাব, “সভাপতি কোথায় কী করছেন, তা আমার জানার কথা নয়।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতিমানব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই আন্দোলনে আগাগোড়া সিটুর পতাকা ও ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে কী করে সিটু এই আন্দোলন থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে?” এই প্রসঙ্গে মেঘবরণবাবু বা প্রণববাবু কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন কারখানা খোলার জন্য জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার দেবু কর নারায়ণপুরে যান। পরে তিনি বলেন, “দু’পক্ষ নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় কোনও আলোচনাই হয়নি। কারখানা থেকে ফিরে সদর মহকুমাশাসককে রিপোর্ট দিয়েছি।” কারখানার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর মনোজ জৈন বলেন, “কারখানায় আলোচনার পরিবেশ নেই। আমরা শ্রমিকদের বলেছি কারখানা খুলুন। আমরা বেতন তৈরি করি। পাশাপাশি আলোচনাও চলুক। কিন্তু ওঁরা মানতে চাইছেন না। যা অবস্থা চলছে, আমাদের চেয়ারম্যান কারখানা খোলার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন।” |