পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে তাদের হারানো জমির খোঁজে এইমস-আন্দোলনকে শুধু রায়গঞ্জ বা উত্তরবঙ্গে বেঁধে না রেখে তার আড়ালে কার্যত দলের স্বাস্থ্যোদ্ধারে নেমেছে কংগ্রেস।
উত্তরবঙ্গের চাঁচল থেকে জলপাইগুড়ি, একের পর এক জনসভায় স্থানীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি তাই হাজির থাকছেন প্রদেশ নেতারাও। দলীয় সূত্রে খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশকে এইমসের দাবিতে দলে ফেরানো সম্ভব বলে মনে করছেন প্রদেশ নেতারা। আর তাই, এইমস আঁকড়েই পঞ্চায়েত নিবার্চনের আগে উত্তরবঙ্গ উত্তাল করার পাশাপাশি দলের নীচুতলার কর্মীদের মনোবল ফেরাতে চাইছে কংগ্রেস।
সেই লক্ষ্যে এইমস গড়ার আন্দোলনের রেশ তাঁরা পৌঁছে দিতে চাইছেন কলকাতাতেও।
রায়গঞ্জের পানিশালায় উপচে পড়া সভায় বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ দিন এইমস-আন্দোলন নিয়ে তাঁর ‘কলকাতা চলো’ অভিযান ঘোষণার পাশাপাশি, এক ধাপ এগিয়ে রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সির হুঁশিয়ারি, “রাজ্য সরকার পানিশালার জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু না-করলে শুধু কলকাতা চলো নয়, মহাকরণ ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেওয়া হবে।” রায়গঞ্জের কাছে এই পানিশালাতেই এইমস গড়তে ১০০ একর জমি দিতে চাষিরা রাজি হয়েছেন বলে কংগ্রেসের দাবি।
গত এক মাস ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেসের এইমস-আন্দোলনে শুধু স্থানীয় নেতারা নন, দেখা গিয়েছে প্রদেশ নেতৃত্বকেও। দলীয় সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ‘বরাদ্দ’ এইমস কেন দক্ষিণবঙ্গে যাবে--এই প্রশ্নে বালুরঘাট থেকে কোচবিহার, কালচিনি থেকে শিলিগুড়ি, ক্রমান্বয়ে জনসভা করে আন্দোলনের প্রসার চাইছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই মরিয়া আন্দোলনে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। এইমস প্রশ্নে বিরোধিতা করা যে উত্তরবঙ্গে কার্যত ‘জমি হারানো’র সামিল, তা মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের দলীয় নেতৃত্বের অনেকেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা রাজ্য সরকারের অনড় মনোভাবে তারা কিঞ্চিৎ বিব্রত। পাশাপাশি, সিপিএম ও তার শরিক দলগুলিও উত্তরবঙ্গের ‘মন পেতে’ ওই দাবির বিরোধিতা করতে পারছে না।
রায়গঞ্জে এইমস নয় কেন? তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা নেতাদের অনেককেই এখন এ প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। অস্বস্তি এড়াতে তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক তথা রায়গঞ্জের প্রবীণ নেতা অসীম ঘোষ এখন নিয়ম করে বিবৃতি দিচ্ছেন, “আমরাও চাই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হোক। তবে মুখ্যমন্ত্রী জোর করে জমি অধিগ্রহণ করার পক্ষে নন।”
জমি অধিগ্রহণের যুক্তিতে তৃণমূলের পাল্টা জবাব দেওয়ার এই চেষ্টা যে বিশেষ স্বস্তিদায়ক নয়, জেলা নেতৃত্ব তা আড়ালে কবুলও করছেন। রায়গঞ্জের একাধিক তৃণমূল নেতা স্বীকার করেছেন, এইমস গড়তে কংগ্রেসের আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সিপিএমের উত্তর দিনাজপুরের জেলা নেতৃত্বও এইমস নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’-এর কথা বললেও কংগ্রেসের বিরোধিতা কী ভাবে করা হবে সেই ‘কৌশল’ এখনও খুঁজে পাননি। তবে কংগ্রেসের সমালোচনা করে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে দ্রুত হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দীপাদেবীরা। এখন সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাই কংগ্রেস লোক দেখানো আন্দোলন করছে।”
রায়গঞ্জে সমাজবাদী পার্টির সংগঠনও বেশ মজবুত। তারা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কিরণময় নন্দ বলেন, “রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে আমাদের অবস্থান আলোচনা করে ঠিক করা হবে।” আর, এ ব্যাপারে বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরীর উত্তর, “তৃণমূলের চাপে কংগ্রেস এখন কোণঠাসা হয়ে এমন আন্দোলন করছে।” তবে, পাল্টা আশ্বাসও দিয়ে রাখছেন তিনি, “এনডিএ ক্ষমতায় এলে রায়গঞ্জেই প্রথম এইমস গড়ব আমরা।” |