তাঁরা দল বেধে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে তাঁদের নিয়ে যান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বেশ কিছু ক্ষণ বৈঠক চলার পরে করিডর দিয়ে হেঁটে প্রায় প্রেস কর্নার পর্যন্ত তাঁদের পৌঁছেও দিয়ে যান শিল্পমন্ত্রী। কিন্তু সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দলের প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের কাছে মমতা-সরকারের কাজকর্মের তীব্র সমালোচনা করে গেলেন। ওই নেতাদের দাবি, সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যখন লিবারেশন নেতৃত্বের বৈঠক চলছে, প্রায় একই সময়ে পাশের মুখ্যসচিবের ঘরে বৈঠকে হাজির হন বণিকসভা অ্যাসোচেম-এর প্রতিনিধিরা। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার পরেই লিবারেশনের নেতারা সেখানে হাজির হন। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার আগে মমতা বলেছিলেন, দলতন্ত্র থাকবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে গণতন্ত্র। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থ ঘোষের সই করা একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে: রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের হাতে নারী-নির্যাতন এবং হিংসার ঘটনা ঘটছে। ঋণের দায়ে এ বছরই ৬২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বর্গাদার ও পাট্টাদারেরা উচ্ছেদ হচ্ছেন। পুলিশ কোনও অভিযোগ নিচ্ছে না। দুষ্কৃতীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বারাসত দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে গিয়েছে। নেতারা অভিযোগ করেন, “রাজ্যে বহু কলকারখানা বন্ধ। সেগুলি খোলার কী হল, আমরা জানতে চেয়েছি। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। দুষ্কৃতীরা যাতে পরিবেশ নষ্ট করতে না-পারে, সেই ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”
লিবারেশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ১৯৯৩ সালের ৩১ মে বর্ধমানের করন্দা গ্রামে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ছ’জন খেতমজুর খুন হন। সেই খুনের কিনারা হয়নি এখনও। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর পরে তিনি আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটককে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে আন্দোলনের সময় বহু মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ লিবারেশনের। সেগুলো প্রত্যাহার করার দাবি তুলেছেন সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়াও সিঙ্গুরের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাত হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ৬২ জন কৃষকের আত্মহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি। কাশীপুর-বরাহনগর গণহত্যার তদন্তে গঠিত কমিশনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী সব শুনেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিতে হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।” |