বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করায় নিজের মেয়েকেই কুপিয়ে খুন করেছিলেন বাবা শ্মশান ঘোষ। কৃষ্ণনগরের ওই মর্মাম্তিক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার মুর্শিদাবাদের সুতি থানার আহিরণে এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মেয়ের প্রেমিক এক কিশোরকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল ওই কিশোরীর পরিবারের বিরুদ্ধে। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ দাস (১৮)। ওই ঘটনায় পুলিশ অবশ্য এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে আহিরণ হল্ট স্টেশনের ২১৮ নম্বর রেলপোস্টের কাছে দুটি রেললাইনের মধ্যে ওই কিশোরের দেহ পড়ে ছিল। আজিমগঞ্জ রেল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ওসি দুলাল মজুমদার বলেন, “ধারাল কোনও কিছু দিয়ে ওই কিশোরকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষত রয়েছে। তবে ওই কিশোরকে অন্য কোথাও খুনের পরে মৃতদেহ দুটি রেল লাইনের মধ্যে দুষ্কৃতীরা ফেলে রেখে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। ওই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।”আহিরণ বাবুপাড়ার বাসিন্দা স্বাধীন দাস জাতিতে মাহিষ্য। তাঁরই ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে ফরাক্কায় লরি চালকের কাজ করছিল। বিশ্বজিতের মা সুজাতা দাস বলেন, “নবগ্রামের আইরা গ্রামে ওই মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা-মা। কিন্তু সেখান থেকে ঘর না করে পালিয়ে আসে সে। ফলে আবার মেলামেশা শুরু হয় ছেলের সঙ্গে। এ নিয়ে অশান্তি হতে পারে আশঙ্কায় বার বার ছেলেকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সে শোনেনি।”
সুজাতাদেবী বলেন, “সোমবার জানতে পারি আমার ছেলে ওই বিবাহিত কিশোরীকে নিয়ে পালিয়েছে। মেয়ের পরিবারের লোকজন ওই ঘটনায় আমাদের বাড়ি চড়াও হয় সেদিনই। আমাকে মারধর, গালিগালাজ করে শাসায় মেয়েকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে না এনে দিলে গোটা পরিবারের লোকজনকেই শেষ করকে দেবে। ভয়ে আমরা ছেলে ও মেয়ের খোঁজখবর শুরু করতে থাকি। বুধবার মালদহে এক জায়গা থেকে উদ্ধার করি তাদের। সন্ধ্যে নাগাদ আহিরণের বাড়িতে ফিরিয়ে আনি। ভেবেছিলাম থানায় গিয়ে মেয়েকে ওদের হাতে তুলে দেব তা হলেই সব মিটে যাবে। কিন্তু ভালবাসার দাম যে ছেলের এভাবে দিতে হবে ভাবতে পারিনি!”
বিশ্বজিতের কাকা প্রেমকুমার দাস জানান, এর পর রাতেই তাঁরা বিশ্বজিৎ ও মেয়েকে আহিরণ পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। সেখানে মেয়ের পরিবারের লোকজন হাজির হয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ নেই জানিয়ে মেয়েকে নিজেদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, “যথারীতি পুলিশ আমার ভাইপোকে তার বাবা ও আমার হাতে ছেলে দেয়। কিন্তু রাত ১০টায় ওই কিশোর ভয়ে বাড়ি ফিরতে রাজি হয়নি। আমাকে বলে বাড়ি ফিরলে মেয়ের বাড়ির লোকেরা হামলা করবে, আমাকে মারবে তাই তোমাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরব না। রাতে অন্য কোথাও থেকে যাব। এর পরেই আমরা বাড়ি ফিরে আসি।”
যেহেতু ছেলে নিজেই অন্য কোথাও রয়েছে, তাই রাতে আর তার খোঁজ করিনি। বাবা স্বাধীনবাবু বলেন, “সকালেই জানতে পারি বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিমি দূরে শ্মশানের কাছে দুটি রেল লাইনের মধ্যে ছেলের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে আছে। সারা শরীরে, মাথায়, হাতে হাঁসুয়ার ধারালো অস্ত্রের কোপের ক্ষত।” এর পরেই ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়। আহিরণের পুলিশ ফাঁড়ি ও রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে। শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশই তদন্ত ভার হাতে নিয়ে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করায়। ঘটনার পর থেকে ওই ‘প্রেমিকা’ কিশোরী-সহ তার পরিবার গা ঢাকা দিয়েছেন। |