সম্পাদকীয় ২...
উন্নয়নের সাইকেল
প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং উদ্যোগ লইয়াছেন, যাহাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের শিক্ষালাভের সুবিধার জন্য মাথাপিছু সাইকেল বণ্টনের পরিকল্পনাটি গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী সলমন খুরশিদের প্রস্তাবটি যোজনা কমিশন প্রাথমিক স্তরেই বাতিল করিয়াছিল, তাহাতেই প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। স্বভাবতই ইহা আবার নূতন করিয়া বিবেচনার স্তরে উঠিয়া আসিয়াছে। বিষয়টি খুবই জরুরি, যত দ্রুত সম্ভব ইহা কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। আর্থিক ভাবে অসচ্ছল, অনুন্নত সংখ্যালঘু সমাজের কন্যারা যদি-বা কোনও মতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া চালাইতেও পারে, তৎপরবর্তী স্তরে উচ্চ বিদ্যালয়গুলি তুলনায় দূরবর্তী হওয়ায় বহু ক্ষেত্রেই তাহাদের শিক্ষালাভ অসম্ভব হইয়া যায়। সাইকেল বিতরণ এই সমস্যার একটি অত্যন্ত সম্ভাব্য সমাধান। সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাইতে হইলে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ কত জরুরি, তাহা নূতন করিয়া বলিবার প্রয়োজন নাই। অসচ্ছল, পশ্চাৎপর সমাজের জন্য ইহা আরও প্রাসঙ্গিক। কিছু রাজ্যে এই কাজটি ইতিমধ্যে হইয়াছে বলিয়া কেন্দ্রীয় প্রস্তাবটিকে আগাগোড়া বাতিল করা যুক্তিহীন, গামলার জলের সঙ্গে বাচ্চাটিকেও ছুড়িয়া ফেলিয়া দিবার সামিল। দরকার প্রয়োজনীয় বোঝাপড়া এবং সমন্বয়সাধন: দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য এইটুকু অতিরিক্ত শ্রম না-হয় করিলই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংখ্যালঘু দফতর।
তবে ঠিক এই কারণেই, কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রস্তাবটিকে সীমিত না রাখিয়া দেশের সকল অনুন্নত ও অর্থনৈতিক ভাবে পশ্চাৎপর সমাজের জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ হইলে আরও উত্তম হইত। কেবল পশ্চাৎপরই বা কেন? কাগজে কলমে যাহারা দারিদ্ররেখার উপরে, সেই বিস্তীর্ণ গ্রামসমাজেই বা কোথায় অষ্টম শ্রেণির পর ছাত্রছাত্রীদের, বিশেষত ছাত্রীদের, উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুব্যবস্থা রহিয়াছে? নীতি-প্রণেতারা কি জানেন না যে, প্রত্যহ কত কিলোমিটার পায়ে হাঁটিয়া অমানুষিক শ্রমে ইহারা বিদ্যাশিক্ষার প্রয়াস করিয়া থাকে? এই অমানবিক পরিস্থিতির পরিবর্তনকল্পে দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল বিপ্লব নিশ্চয়ই কঠিন কাজ ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল বিতরণের ব্যয় তাহার অপেক্ষা অনেক সহজসাধ্য। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার কিন্তু এই কাজটিই করিয়াছেন। রাজ্যের সকল নবম শ্রেণিপাঠী ছাত্রীদের জন্যই সাইকেল বরাদ্দ করিয়াছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও একদা এই ভাবনা, এই কার্যক্রমের সূচনা দেখা গিয়াছিল, তবে এ রাজ্যের রীতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, কোনও এক অজানা প্রহরে তাহা স্তব্ধতার সাগরে ডুবিয়া যায়। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের সাইকেল বিলির কাজটি শুরু করিয়াও উনিশটির মধ্যে দুইটি জেলার বেশি অগ্রসর হইতে পারে নাই, যদিও নীতির স্তরে এমনকী ‘কলিকাতা জেলা’র জন্যও এই প্রকল্প উদ্দিষ্ট হইয়াছিল। কিছু দূর কাজটি আগাইয়াছে জঙ্গলমহল অঞ্চলে, অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক তাড়নায়। তবে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক, যে কোনও তাড়নাতেই যে কাজটি রাজ্যব্যাপী সারিয়া ফেলা দরকার ছিল, সংখ্যালঘু উন্নয়ন-লক্ষ্যে ইমামদের অর্থ-বিতরণের অপেক্ষা ইহা যে অনেক বেশি জরুরি, গঠনমূলক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ হইত, কে-ই বা তাহা রাজ্য সরকারের কর্ণকুহরে প্রবেশ করাইবে। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ-গ্রহণের সংবাদেও নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একচুলও প্রভাবিত হইবেন না!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.