মূল ৩টি ধারাই বাদ
কার্টুন-চার্জশিটে নেই
মানহানির অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রীর মানহানি-সহ চার-চারটে ধারায় মামলা দায়ের করে রাতভর থানার লক-আপে আটকে রাখা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সেনগুপ্তকে। কিন্তু তার মূল তিনটে ধারাই বাদ দিয়ে ওঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ‘মুখ্যমন্ত্রীর মানহানি’র মূল অভিযোগটাই কার্যত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ-সূত্রের খবর।
ঘটনায় পুলিশি ভূমিকার সমালোচনা করে অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্যকে সুপারিশ পাঠিয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। সরকার অবশ্য মানেনি।
তৃণমূলকর্মী পরিচয়ে ১২ এপ্রিল রাতে পূর্ব যাদবপুর থানায় অম্বিকেশ-সুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন অমিত সর্দার নামে এক যুবক। নিউ গড়িয়ায় অম্বিকেশবাবুদের সমবায় আবাসন-কমিটির সম্পাদক ছিলেন সুব্রতবাবু। অম্বিকেশবাবু ছিলেন কমিটির সহ-সম্পাদক। অমিতের অভিযোগ ছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে ‘অশ্লীল’ ই-মেল ফরওয়ার্ড করে মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রহনন করেছেন ওঁরা। তার ভিত্তিতে সে রাতেই দু’জনকে থানায় এনে লক-আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০৯, ১১৪ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ(বি) ধারায় (মানহানি, মহিলার সম্মান ও শালীনতায় আঘাত, প্ররোচনা ও দুষ্কর্মের সময়ে হাজির থাকা, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে অশ্লীল ছবি পাঠানো) মামলা রুজু করে পুলিশ। পর দিন আদালত দু’জনকে জামিন দেয়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতে বিতর্ক দানা বাঁধে। সমাজের নানা স্তর থেকে প্রতিবাদ ওঠে। মামলা ধোপে টেকে না বলে মত প্রকাশ করেন প্রথমসারির বহু আইনজীবী। কিন্তু শাসকদলের নেতারা বলেন, অম্বিকেশবাবুরা মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রহননই করেছেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও পুলিশের পাশে দাঁড়ান। তা হলে চার্জশিটে মানহানির নালিশ নেই কেন?
আইনজীবীমহলের একাংশের ব্যাখ্যা: মানহানি মামলায় যাঁর মানহানি হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁকে বা তাঁর পরিজনকে কোর্টে অভিযোগ দাখিল করতে হবে। না-হলে বিচারকের কাছে তদন্তের অনুমতি নিয়ে এগোতে হবে পুলিশকে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ সেই নিয়ম মানেনি। এই দুর্বল মামলা আইনের চোখে টিকবে না বুঝেই পুলিশ চার্জশিটে ধারাগুলো বাদ দিয়েছে বলে এই মহলের দাবি। হাইকোর্টের ফৌজদারি আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এমনই তো হওয়ার কথা ছিল।” তবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দাখিল অভিযোগটি চার্জশিটে রয়েছে। এতে বৈদ্যুতিন মাধ্যম দিয়ে অশ্লীল ছবি পাঠানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ১১ জন সাক্ষীর বয়ান সংগ্রহের বৈধতা নিয়ে সংশয়ে আইনজীবীদের একাংশ। অম্বিকেশবাবুর কৌঁসুলি সঞ্জীব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ব-যাদবপুর থানার তদন্তকারী অফিসার ফোনে ওই ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। এই বয়ান আদালতে গ্রাহ্য নয়।”
সাক্ষীর বয়ান নেওয়ার নিয়মটা কী? হাইকোর্টের আইনজীবী শেখর বসু বলেন, “সিআরপিসি-র ১৬১ ধারায় সাক্ষ্য নিতে সাক্ষ্যগ্রহণকারীর সামনে হাজির হতে হবে তদন্তকারীকে। ফোনে সাক্ষ্যগ্রহণ আইনসম্মত নয়। কেউ মিথ্যে পরিচয় দিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। তাতে তদন্ত বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা।” উল্লেখ্য, সম্প্রতি সিআরপিসি-র ১৬১ ধারা সংশোধন করে গুরুত্বপূর্ণ বা বির্তকিত ঘটনার তদন্তে সাক্ষ্যগ্রহণের ভিডিও রেকর্ডিং করার কথাও বলা হয়েছে।
চার্জশিটে সাক্ষীদের মধ্যে আছেন অম্বিকেশবাবুর প্রতিবেশী কুণাল রায়। কুণালবাবু বলেন, “পূর্ব যাদবপুর থানার এক অফিসার আমাকে ফোন করে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে নানা কথা জানতে চান। কিন্তু তা যে সাক্ষ্য হিসেবে কোর্টে পেশ করতে, সেটা জানানো হয়নি।”

নালিশনামা
যা ছিল
• মানহানি, মহিলার সম্মান-শালীনতায় আঘাত
(ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০৯ ধারা)
• প্ররোচনা ও দুষ্কর্মে উপস্থিতি
(ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১৪ ধারা)
• বৈদ্যুতিন মাধ্যমে অশ্লীল ছবি প্রেরণ ও অপপ্রচার
(তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ-বি ধারা)
যা হল
• বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাহায্যে অপপ্রচার ও প্ররোচনা
(তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ(বি)(সি) ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা)
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.