বিষয়বস্তুটা একই। কলকাতা আর তার নিষিদ্ধ পল্লি। আরও এক বার আন্তর্জাতিক ছবির ফ্রেমে বন্দি হতে চলেছে এই জগতের কাহিনি।
জানা ব্রিস্কির তথ্যচিত্র ‘বর্ন ইনটু ব্রথেলস’ কয়েক বছর আগেই অস্কার জিতেছে। আর এক অস্কারজয়ী পরিচালক জেফ্রি ডি ব্রাউন এখন এই শহরে, এই নিয়েই আরও একটি নতুন গল্প বলবেন বলে। এ বার আর কোনও তথ্যচিত্র নয়, প্যাট্রিশিয়া ম্যাককর্নিকের পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস ‘সোল্ড’ অবলম্বনে একটি কাহিনিচিত্র বানাতে চলেছেন জেফ্রি।
১৯৮৬ সালে লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম বিভাগে ‘মলিজ পিলগ্রিম’ ছবিটির জন্য অস্কার জিতেছিলেন জেফ্রি। ‘দ্য ওয়ান্ডার ইয়ার্স’, ‘এল.এ ল’, ‘হুপারম্যান’ একাধিক টিভি সিরিজের পরিচালক তিনি। ‘ফেটাল অ্যাট্রাকশন’, ‘লোলিটা’ বা ‘আনফেথফুল’-এর মতো হিট ছবির পরিচালক এড্রিয়ান লিন-এর প্রথম ছবি ‘ফক্সেস’-এ সহকারী ছিলেন জেফ্রি। এ বার পূর্ণাঙ্গ কাহিনিচিত্রে হাত দিচ্ছেন। আমেরিকান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ঘরানার এই ছবির সহ-প্রযোজক হিসেবে আছেন অনুরাগ কাশ্যপ। ‘বর্ন ইনটু ব্রথেলস’ তো আছেই। কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লির পটভূমিকায় আরও একটি আন্তর্জাতিক ছবি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফ্লোরিয়ান গ্যালেনবার্গারের ‘শ্যাডোজ অফ টাইম’। এগুলোর চেয়ে ‘সোল্ড’-এর কাহিনি কতটা আলাদা?
এ ছবির কেন্দ্রে আছে বারো বছরের মেয়ে লক্ষ্মী। নেপালের একটি ছোট গ্রামের মেয়েটিকে অভাবের তাড়নায় তার সৎ বাবা তুলে দিয়েছিলেন এক মহিলার হাতে। কথা ছিল, লক্ষ্মী ভারতে এসে গৃহপরিচারিকার কাজ করবে। কলকাতায় এসে সে বুঝতে পারে, তাকে আসলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ পল্লিতে। রুচিরা গুপ্ত, যিনি এখানে বাস্তবের লক্ষ্মীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালান, তিনি বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমাদের বলা হয়েছিল যে, এ দেশে নেপাল থেকে অন্তত কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ নেপালি মেয়ে ভারতে পাচার হয় প্রতি বছর। এত দিনে সংখ্যাটা নিশ্চয়ই আরও অনেক বেড়েছে।” হলিউড অভিনেতা অ্যাশটন কুচার যখন ভারতে এসেছিলেন স্টিভ জোবসকে নিয়ে ছবি শ্যুট করতে, তখন উনি এই সংগঠনে এসেছিলেন লক্ষ্মীর মতো মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে। রুচিরা বলেন, “সেলিব্রিটিরা সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করেন। জেফ্রির সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। ‘সোল্ড’ ছবিটি হলে আশা করব যে, এ বিষয়ে সচেতনতা আরও বাড়বে।”
কলকাতার শ্যুটিং শুরু হতে হতে নভেম্বর। পরিচালক এখন ব্যস্ত তাঁর ওয়র্কশপ এবং শ্যুটিংয়ের লোকেশন ঠিক করা নিয়ে। তবে জেফ্রির সবথেকে কঠিন পরীক্ষা ছিল, লক্ষ্মীকে খুঁজে পাওয়া। চার মাস ধরে ৬০০ মেয়ের অডিশনের পর অসমের নিয়ার সাইকিয়াকে বেছে নিয়েছেন তিনি। সীমা বিশ্বাস অভিনয় করবেন লক্ষ্মীর মায়ের ভূমিকায়। লক্ষ্মীকে ভুলিয়েভালিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসবেন যিনি, সেই আন্টির ভূমিকায় থাকছেন ‘সাংহাই’-খ্যাত তিলোত্তমা সোম। বললেন, “আমি ভীষণ খুশি। গোটা নভেম্বর মাসটা কলকাতাতেই থাকব।” নিষিদ্ধ পল্লির ম্যাডাম মুমতাজের চরিত্রে দেখা যাবে সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়কে, যাঁকে অনেকেই মনে রেখেছেন ‘করমচাঁদ’ সিরিয়ালের ‘কিটি’ হিসেবে। এক যৌনকর্মীর ভূমিকায় থাকছেন প্রিয়ঙ্কা বসু, যিনি এর আগে ইটালো স্পিনেলি-র পরিচালনায় ‘গাংগোর’ নামে আরও একটি আন্তর্জাতিক ছবিতে কাজ করেছেন। তবে জেফ্রির ছবি দিয়েই আন্তর্জাতিক ছবিতে হাতেখড়ি হতে চলেছে কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের। পরমব্রতকে দেখা যাবে বিক্রমের চরিত্রে, যিনি খরিদ্দার সেজে লক্ষ্মীকে উদ্ধার করতে আসবেন। ডাক্তারের চরিত্রে থাকবেন ধ্রুব মুখোপাধ্যায়। ছবির লাইন-পরিচালকও কলকাতার, তানাজি দাশগুপ্ত।
যদিও জেফ্রি নিজে শ্যুট করতে চেয়েছেন সোনাগাছিতে। বহু বার গিয়েছেনও সেখানে। তবে শেষমেশ হয়তো কোনও একটা বাড়ি ভাড়া করে সেট ফেলেই শ্যুটিং হবে বলে অধিকাংশের ধারণা। কলকাতার শ্যুটিং শিডিউল শেষ হয়ে গেলে জেফ্রি চলে যাবেন নেপাল। ওখানে ছবিটির বাকি অংশ শেষ করবেন উনি।
|
ফিল্ম সিটি গড়ছে ঝাড়খণ্ড। রাজধানী শহর রাঁচি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা, রামগড়ের পাতরাতু এলাকায় প্রায় ২২৫ একর জমির উপরে গড়ে উঠছে ঝাড়খণ্ডের ফিল্ম সিটি। সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রকল্পের আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে জোর কদমে। নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করতে ইতিমধ্যেই ১১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য জমি নিয়ে অবশ্য কোনও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না ঝাড়খণ্ড প্রশাসনকে। সরকারি সূত্রের খবর, রামগড়ের পাতরাতু অঞ্চলে শিল্প দফতরের জমিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে ফিল্ম সিটি। পাহাড়-নদী-জঙ্গলে ঘেরা পাতরাতুর প্রাকৃতিক পরিবেশ। আধুনিক ব্যবস্থা-সহ উন্নতমানের মানের ফিল্ম সিটি তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্য প্রশাসনের ধারণা, ফিল্ম সিটি চালু হলে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পর্যটক, উভয়কেই আকর্ষণ করবে। |