এর থেকে উপযুক্ত দিন আর কী-ই বা হতে পারত? যে দিন পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য পা দিলেন সত্তরে, সেই দিনেই বিশ্ববাসীর আশ মিটিয়ে বচ্চন পরিবার আলাপ করিয়ে দিল তাদের সর্বকনিষ্ঠা সদস্য আরাধ্যার সঙ্গে। তবে অমিতাভ তো শুধু বচ্চন পরিবারের নন, তাঁর পরিবার অনেক বড়। তিনি তামাম ভারতবাসীর।
অমিতজির জন্মদিন উপলক্ষে ‘বি সেভেনটি’ বইটি প্রকাশের সময়ই জয়াজি বলছিলেন, “আরাধ্যাকে সঙ্গে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও এখন ঘুমিয়ে কাদা। ঘুম ভাঙলেই ওকে নিয়ে আসব।” খুশিতে ডগমগ ঠাম্মার স্বর জয়াজির গলায় “আমরা সবাই দেখতে চাই আরাধ্যা ওর দাদুভাইকে ‘হ্যাপি বার্থডে’ উইশ করে কি না!” জয়াজির এই আশ্বাসেই প্রত্যাশার পারদ এক লাফে চড়ে গিয়েছিল আমাদের।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত বারোটা ছুঁইছুঁই। কেক কাটার ঠিক আগের মুহূর্তে ঐশ্বর্যার কোলে চড়ে ঢুকল খুদে আরাধ্যা। তাকে কোলে নিয়ে পুরো হলটা হেঁটে স্টেজে উঠলেন ঐশ্বর্যা। পথে কত জনের আদরই না পেল আরাধ্যা! কেউ গাল টিপে দিচ্ছে, কেউ হাতটা ধরছে হাত একফোঁটাও আপত্তি জানায়নি একরত্তি মেয়ে। |
জন্মদিনে আমাদের সবাইকে দেওয়া অমিতজির সবচেয়ে বড় প্রত্যুপহার নিঃসন্দেহে এটাই। তবে চমক ছিল আরও। ভারতের কোনও তারকার জন্মদিনই হয়তো এর আগে এই ভাবে, এই মাপে পালন করা হয়নি। পুরো কৃতিত্বটাই জয়াজির। এত বড় একটা অনুষ্ঠান। তা-ও কোথাও কোনও প্রাচুর্যের অহমিকা নেই, আছে একটা মর্যাদাপূর্ণ মাধুর্য। যা তাঁদের কৃতিত্বেরই স্বাক্ষর। নীরব, অথচ সপ্রতিভ।
মাঝরাতে মুম্বইয়ের গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিতে রিলায়্যান্স মিডিয়া সেন্টারে ভিড় কম ছিল না। পরপর ঢুকছিল অতিথি-অভ্যাগতদের গাড়ি। তার মধ্যেও কোথাও একটা অদ্ভুত শান্ত ভাব। হয়তো বা সেটা অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিচারেই। অমিতাভ বচ্চনের ৭০তম জন্মদিন উদ্যাপন বলে কথা!
অতিথি তালিকায় স্বভাবতই নক্ষত্রসমাবেশ। কে নেই? হুইলচেয়ারে এলেন শশী কপূর। পাশাপাশি দিলীপ কুমার, সায়রা বানু, যশ চোপড়া, ওয়াহিদা রহমান, রজনীকান্ত, হেমা মালিনী। সস্ত্রীক শাহরুখ খান। শ্রীদেবী আর বনি কপূর। অজয় দেবগন আর কাজল। কোকিলাবেন এবং প্রয়াত শাম্মী কপূরের স্ত্রী-ও।
হলে ঢুকলে যেন অন্য জগৎ। চার দিকের দেওয়াল জুড়ে পোস্টারে কেবলই উনি। সেই সত্তরের দশকের অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান থেকে আজকের বুডঢা হোগা তেরা বাপ। অভ্যর্থনায় অমিতাভ স্বয়ং। ঢুকতেই জড়িয়ে ধরলেন। রেড কার্পেট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শুনছিলাম অর্কেস্ট্রা বাজাচ্ছে তাঁর বিখ্যাত সব হিট গান। প্রোজেক্টরে ভেসে উঠছে তাঁর অবিস্মরণীয় সব ডান্স নাম্বার। সব ক’টা টেবিলের নাম তাঁর এক একটা ছবির নামে। কোনওটা ‘শোলে’, কোনওটা ‘মহব্বতে’, কোনওটা ‘আনন্দ’। আমাদেরটা ছিল ‘ডন’। |
কর্ণ জোহরের সঞ্চালনা ছিল মনকাড়া। অনেক শো-এর মতো স্টেজে ধুমধাড়াক্কা বাজি ফাটেনি। বাজির বাহার দেখা গেল বরং পর্দায়। আর একটা মজা ছিল অনুষ্ঠানে। তিনটি মেয়ের গলায় অমিতাভের ছবির গান। ওদের মুখে ‘ম্যায় হুঁ ডন’ থেকে ‘আপ কা ক্যায়া হোগা’ শুনে মুগ্ধ হলাম আমরা সবাই।
সময় যত গড়াচ্ছিল, ততই যেন বুঝতে পারছিলাম অমিতজির এই দীর্ঘ পথ চলা। ‘সাত হিন্দুস্তানি’র এক জন থেকে তিনি হয়েছেন সেই হিন্দুস্তানি, যাকে বিশ্ব এক ডাকে চেনে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিলেন অমিতজি স্বয়ং। কিচ্ছুটি তাঁর চোখ এড়ায় না! অনুষ্ঠানে ওঁর জন্মদিনের সেলিব্রেশন যেমন গুরুত্ব পেল, সেই একই গুরুত্ব দিয়ে জানানো হল সে দিনই দিলীপকুমার ও সায়রা বানুর বিবাহবার্ষিকী, রনিত রায়ের জন্মদিন। উষ্ণ আন্তরিকতায় অমিতাভ ছুঁয়ে গেলেন সকলকে। খাবারদাবারের এলাহি সম্ভারকেও যেমন ছাপিয়ে গেল পরিবেশনার মাধুর্য। প্রত্যেককে আলাদা মনোযোগ দিয়ে খাওয়াচ্ছিলেন ওঁরা। অতিথিরা তো বটেই, এমনকী তাঁদের গাড়িচালকদের জন্যেও ছিল ঢালাও আয়োজন।
তবে সবচেয়ে বড় পাওনা ছিল, ‘মধুশাল থেকে অমিতজির গায়কি। এটা রেকর্ড করতে অমিতাভকে সঙ্গ দিয়েছিলেন সুরকার আদেশ শ্রীবাস্তব। ৪০ মিনিটের গানের সঙ্গে ছিল ময়ূরীর ব্রডওয়ে স্টাইলের কোরিওগ্রাফি। মনে হচ্ছিল যেন মেরি পপিন্সের শো দেখছি। |
রাত যত বাড়ছিল ততই আরও জমাটি হচ্ছিল পার্টি। শুনেছি, আমি চলে আসার পরে শাহরুখও ডান্স ফ্লোরে পা মেলান বিগ বি’র ছন্দে। ফেরার পথে মনে হচ্ছিল দ্য রাইপ ওল্ড এজ অফ সেভেনটি জাস্ট গট ইয়ংগার অন ওয়েডনেসডে। চেহারা এবং আচরণে বিগ বি কেবল রকস্টারই নন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি আরও অনেক বছর ধরে আরও অনেক শৃঙ্গ জয় করবেন। অমিতজি বলছিলেন, এটাই ওঁর সেরা জন্মদিন। এ রকম বোধহয় আর কোনও দিন হবে না। কিন্তু আমরা সবাই বলেছি, না না তা কী হয়? এর পরের সেলিব্রেশন ৭৫-এ। তার পর ৮০।
তার পর আরও কত। পিকচার আভি বাকি হ্যায়...। |