বাঁকা নদীর দু’পাশে সেচ দফতরের জায়গা দখল করে নির্মাণের অভিযোগ তুলেছেন বর্ধমানের ভাতছালা বাঁশতলার বাসিন্দারা। বিনা অনুমতিতে একের পর এক বাড়ি উঠলেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে তাঁদের দাবি। প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ায় অবৈধ নির্মাণে জড়িত লোকজন তাঁদের ভয় দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
বর্ধমান শহরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই বাঁকা নদী। পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাতছালা বাঁশতলা এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, নদীর পূর্ব পাড় বরাবর খুঁটি পুঁতে জমি ভাগ করা হয়েছে। সেই জমিতে বাঁশের খুঁটির উপরে বসেছে অ্যাসবেস্টসের চালাঘর। স্থানীয় মানুষের দাবি, জায়গা দখল করে তৈরি চালাঘরগুলি পরে পাকাবাড়িতে রূপান্তর করা হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা এই কাজে জড়িত বলে তাঁদের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর সোমের দাবি, “আমরাও তৃণমূল করি। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পরে দলে যে সব নেতা-কর্মীরা এসেছেন, তাঁদের মদতেই এই অবৈধ নির্মাণ চলছে। সব জেনেও চুপ প্রশাসন।” আর এক বাসিন্দা প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ভাতছালায় দলের নেতা পল্লব দাস ও মহম্মদ বাদলের নেতৃত্বে এই নদীর পাশে সেচ দফতরের জায়গা বহিরাগতদের বেচে দেওয়া হচ্ছে।” পল্লব দাস, মহম্মদ বাদলেরা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা পাল্টা বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। আমরাও দেখছি, কিছু লোক বাঁকার পাড়ে সেচ দফতরের জমিতে নির্মাণ করছেন। প্রশাসন এ সব বন্ধ করুক।” |
বাসিন্দারা জানান, এই অবৈধ নির্মাণের ব্যাপারে গত মে মাসের শেষ দিকে তাঁরা পুরপ্রধান, দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও নদীর পাড়ের জায়গা দখলমুক্ত করার কোনও উদ্যোগ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য এই অভিযোগের কথা শুনে বলেন, “আমি আপাতত ছুটিতে রয়েছি। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।” পুরপ্রধান আইনুল হক বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত করে জেনেছি, প্রতিটি নির্মাণই হচ্ছে সেচ দফতরের জায়গায়। ওখানে কোনও বাড়ি করতে পুরসভা অনুমতি দেয়নি, দিতে পারেও না। আমরা সেচ দফতরকে জানিয়েছি, ওই নির্মাণ ভেঙে দিতে হবে। প্রয়োজনে তারা আমাদের সাহায্য নিতে পারে।”
সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “স্থানীয় মানুষের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমি পুলিশকে চিঠি লিখে ওই নির্মাণ ভাঙতে সাহায্য চেয়েছি। জেলা প্রশাসনের কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।” যদিও বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা অবৈধ নির্মাণের ব্যাপারে কোনও সরকারি দফতর বা স্থানীয় মানুষের অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ব্যাপারে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |