কোথাও টাকডুমাডুম বাদ্যি বাজে। কোথাও আবার পথের পাঁচালি। বর্ধমান শহরে গত কয়েক বছর ধরেই থিম পুজোরই রমরমা। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখব, বেছে নেওয়া দায়।
আলমগঞ্জ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় এ বার নেপথ্যে থাকা ঢাক, ঢোল কাঁসি-সহ নানা বাজনদার, দেব- দেবীদের বাহনদের প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে। মণ্ডপে দেখা যাবে তাদেরই বিশাল মূর্তি। আলমগঞ্জ বারোয়ারির সম্পাদক মনীশ সিংহ বলেন, “প্রতি বারই পুজো হয়। কিন্তু পুজোর নেপথ্য থাকা শিল্পীরা, যাঁরা পরিশ্রম করে মানুষকে আনন্দ দেন, তাঁদের কথাই ভাবা হচ্ছে। প্রতিমার সঙ্গে তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।” মণ্ডপে ঢোকার মুখেই থাকবে ১২ জন বাজনদারের মূর্তি। থাকবে ছ’টি পরির মূর্তি। যাদের দেবীদের সখী হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ৩০ ফুটের ময়ূর। থাকছে ষাঁড়, ইঁদুর, হাঁস, প্যাঁচা-সহ দেবতাদের বাহনদের মূর্তি। কর্তৃপক্ষের দাবি, দেবদেবীর সাজসজ্জার জাঁকজমকে প্রধানত নজর দেওয়া হয়, ফলে নীচে থাকা বাহনদের তেমন ভাবে চোখেই পড়ে না। তাই এ বার ওরাই ‘ফোকাস’-এ! বাঁশ ও বেত দিয়ে মূর্তিগুলি তৈরি করছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পী রবীন্দ্রনাথ মাইতি। মণ্ডপে থাকবে সাবেকি প্রতিমা। |
বনদুর্গার আবাহনই বড়নীলপুরের আনন্দপল্লি মিলন সমিতির এ বারের থিম। পরিবেশ দূষণ রোধে এই পুজো মণ্ডপে থাকছে নানা আবেদন। বলা হচ্ছে, ‘প্রত্যেকে অন্তত একটি বৃক্ষ শিশুর দায়িত্ব নিন। সন্তানস্নেহে পালন করে তাকে বৃক্ষ হতে দিন।’ পুজো কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, “চতুর্দিকে যেভাবে বৃক্ষনাশ ঘটছে, তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে। তাই দুর্গাপুজোর মাধ্যমে আমরা চাইছি, মানুষ গাছ বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।”
অপু-দুর্গার কাশবনের ভেতরের থেকে প্রথম রেলগাড়ি দেখার অভিজ্ঞতার স্বাদ ছবি এ বার তুলে ধরতে চায় ঝাঁপানতলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। এ বার তাদের পুজো ৪৪ বছরে পা দিল। এ বার সত্যজিত রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ সিনেমার সেই অমর দৃশ্য ছাড়া রয়েছে কাশবনে অপুর আঁখ খাওয়া, হাতে লাট্টু ঘোরানোর দৃশ্যও। আরও থাকছে গ্রামের দুর্গাপুজোর মঙ্গলঘট স্থাপন। বর্ধমানের স্থানীয় শিল্পী শঙ্কর দে ও পলাশ বিশ্বাস প্রায় দু’মাসের পরিশ্রমে পাটকাঠি, মাদুর, কাশফুল, তুল, সুতো, বালি আর তালপাতার সাহায্যে ফুটিয়ে তুলছেন এই দৃশ্যগুলি। দেবী পরনে তাঁতের শাড়ি। উদ্দেশ্য, বাংলার তাঁতের কাপড়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই শিল্পকে বাঁচানো। প্রতিমা সাবেকি গ্রাম্যদেবীর সাজে। মঙ্গলঘটের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজো কমিটির অন্যতম দুই সদস্য সনৎকুমার সিংহ ও পার্থ দে-র কথায়, “বিশ্ব তথা ভারতবাসীর মঙ্গল কামনায় মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে মঙ্গলঘটের আদলে।” |