|
|
|
|
বছরভরের মলিনতা মুছে যায় চার দিনের আড়ম্বরে
সুশান্ত বণিক • কুলটি |
চারিদিকে অযত্ন আর মলিনতার ছাপ। সারা বছর আলো জ্বলে না। আলকাতরার প্রলেপ নেই রাস্তায়। নিকাশির বেহাল দশায় দুর্বিষহ নাগরিক জীবন। তবু পুজোর কয়েকটা দিন সব ভুলে আনন্দে মেতে ওঠেন কুলটি কারখানার আবাসন এলাকার বাসিন্দারা। সাধ্য অনুযায়ী আয়োজনের কোনও ক্রুটিও রাখেন না।
কুলটির শিমুলগ্রাম আবাসন সংলগ্ন ওয়েস্ট টাউন পুজো কমিটির দুর্গোৎসব এ বার ৪৯ বছরে পা দিল। কয়েকটা বছর ছাড়া বরাবরই এই পুজো করে এসেছেন উদ্যোক্তারা। অর্থসঙ্কটের মুখে পড়ে বেশ কয়েক বছর পুজো হয়েছে কোনও রকমে। এ বছর পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। কমিটির সহ-সভাপতি দেবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পুরনো স্মৃতি রোজ তাড়া করে বেড়ায়। এ বারের পুজোয় সেই অতীত ফিরে পেতে চাই আমরা।” তিনি জানান, এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। নামি শিল্পীদের দিয়ে পুজোর উদ্বোধন করানো হবে। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে সেজে উঠছে তাঁদের মণ্ডপটি। সঙ্গে রয়েছে বর্ণময় আলোকসজ্জা। পুজো কমিটির সভাপতি পবিত্র বিশ্বাস বলেন, “সারা বছরই ইস্কো আবাসন এলাকার বাসিন্দারা নেই রাজ্যে কাটান। আমরা চাই পুজোর কয়েকটা দিন তাঁরা আনন্দে মেতে উঠুন।”
গত বছরের তুলনায় এ বার আড়ম্বর একটু কমলেও প্রস্তুতির খামতি নেই কুলটি স্টেশনপাড়া সর্বজনীন পুজো কমিটির। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার তাঁদের মূল আকর্ষণ ডাকের সাজের সাবেকি প্রতিমা। কাল্পনিক অথচ দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির অপূর্ব কারুশৈলীতে ভরা মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। কমিটির সম্পাদক বাবন রায়ের কথায়, “এক দিকে জিনিসের দাম বেড়েছে। অন্য দিকে, কমছে চাঁদার বহরও। তাই মণ্ডপের আড়ম্বর কিছুটা হলেও কমেছে। তবে আশপাশের মণ্ডপগুলিকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত আমরা।”
ইস্কো আবাসন এলাকা সংলগ্ন শ্রীপুর রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোর প্রস্তুতিও তুঙ্গে। কারখানার কর্মীরাই এক সময়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। পরে বহিরাগতরাও তাতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আজও পুজোর রাশ রয়েছে ইস্কো কারখানার প্রাক্তন কর্মীদের হাতেই। এমনই এক জন কর্মকর্তা তারক রায় বললেন, “কারখানা যখন চালু ছিল তখন পুজোর চাঁদা নিয়ে ভাবতে হয়নি। এখন খরচ জোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। যদিও তাতেও পুজোতে কোনও খামতি রাখতে চাই না আমরা। কষ্ট করে হলেও প্রতি বছর অল্প কিছু বাজেট বাড়িয়ে পুজোটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করি।” উদ্যোক্তারা জানান, এ বার তাঁদের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে থার্মোকল দিয়ে।
কুলটি পুরসভা এলাকায় বিভিন্ন সংগঠনের তরফে একাধিক বার সেরার শিরোপা জিতেছে সাঁকতোড়িয়ার ঝালবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজো। এ বারও জোরকদমে সেরার লড়াইতে টিকে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আকর্ষণীয় মণ্ডপ তৈরি করতে হলে খরচ তো হবেই। সে সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। একটু বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে ঠিকই। তবে খরচ উঠে যাচ্ছে।” উজ্জ্বলবাবু বলেন, “এ বার প্রশাসনের হাত থেকে সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।” এ বার তাঁদের আকর্ষণ মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে সাবেকি প্রতিমা। সঙ্গে থাকছে আলোকসজ্জা। |
|
|
|
|
|