সিটুর আন্দোলনে উৎপাদন বন্ধ, বিদেশি বরাত হারানোর আশঙ্কা
টানা ১৪ দিন ধরে সিটুর বিক্ষোভে মালদহের একটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১০ লক্ষ টাকার সিল্কের সুতো। তা ছাড়া, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জাপানে সাড়ে চার টন এবং ইতালিতে ১২ টন সুতো পাঠানোর কথা ছিল এই কারখানার। তার প্রায় ৯০ শতাংশ তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সিটুর আন্দোলনের জন্য তা কারখানা থেকে বার করা যাচ্ছে না। ইস্ট এন্ড নামে ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনোজ জৈন বলেন, “আমাদের সুনামের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এ বার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হলই, এর ফলে পরেও আর বিদেশি সংস্থাগুলির কাছ থেকে বরাত পেতে অসুবিধা হবে।”
সিটুর দাবি, নারায়ণপুরের এই কারখানার শ্রমিকদের তিন বছরে দফায় দফায় মোট ২৮০০ টাকা করে বেতন বাড়াতে হবে। মালিকপক্ষ রাজি মোট ২১০০ টাকা করে বেতনবৃদ্ধিতে। ওই সাতশো টাকার ব্যবধান ঘোচানোর দাবিতে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলনে নেমেছে সিটু। তার পর থেকেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল শিল্পায়নে বাধা দিয়েছে বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। সেখানে তাদেরই শ্রমিক সংগঠন ১৪ দিন ধরে একটি কারখানা যে বন্ধ করে রেখেছে, দলের রাজ্য নেতৃত্ব তা জানেন না। সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। তাই তিনি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সিটুর রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, স্থানীয় স্তরে কোনও কারখানার ইউনিটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্তরেই সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ করার পরিস্থিতি হলে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে শাসক দল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, “কোনও কারখানাই আমরা বন্ধ রাখতে দিই না। এই ঘটনাটি জানার পরেই শ্রম দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছে। ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কারখানা খোলার জন্য দরবার করা হয়েছে। শ্রম কমিশনার দু-এক দিনের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। আশা করছি, সমস্যা মিটে যাবে।”
প্রশাসন অবশ্য ইতিমধ্যেই দু’দিন ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছিল। কিন্তু তাতে সিটু নেতারা যোগ দেননি। জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার দেবু কর বলেন, “কারখানার সমস্যা মেটানোর জন্য জেলা প্রশাসন দু’বার বৈঠক ডেকেছিল। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের কেউ বৈঠকে হাজির হননি। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?”
কেন যাননি তাঁরা বৈঠকে? সিটুর মালদহ জেলা সম্পাদক মেঘবরণ সেন বলেন, “আমাদের দাবি পুরো মানা হবে, এই আশ্বাস পেলেই বৈঠকে যাব। প্রশাসনের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে নয়, আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে কারখানার সমস্যার সমাধান করতে চাই।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের শ্রমিকেরা কর্মবিরতি করছেন। কারখানার মালিকপক্ষ কিছু শ্রমিকদের বেতন দিলেন কিন্তু আন্দোলনকারী শ্রমিকদের কেন ২৬ তারিখ পর্যন্ত বেতন দিলেন না? শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা খোলানোর ব্যাপারে আমরা কোনও বৈঠকে যোগ দেব না।” কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অফিস ঠিক মতো চালানো যাচ্ছে না, তাই সকলকে বেতন দেওয়াও যাচ্ছে না।
মনোজবাবু বলেন, “২০০৮ সালে সিটু বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ ভাবেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে ৮ দিনের মধ্যে কারখানা খুলে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু এখন ১৪ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কারখানা খোলার ব্যাপারে কেবল বৈঠক ডাকা ছাড়া জেলা প্রশাসন কিছুই করল না।” তবে জেলাশাসক শ্রীমতী অর্চনা বলেন, “সিল্কের সুতোর কারখানা খোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। দ্রুত কারখানা খোলানোর জন্য সদর মহকুমাশাসককে বলেছি। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বসে বেতনবৃদ্ধির সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.