পুজোর টুকরো খবর
সম্প্রীতির আয়োজন রতুয়ায়
পুজোর প্রতিষ্ঠাতা জহর খান নামে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। গল্প প্রচলিত রয়েছে, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালিন্দ্রী নদীর ঘাটে আটকে থাকা দেবীর কাঠামো তুলে এনে পুজোর আয়োজন করেন তিনি। ৩০০ বছরের পুরনো মালদহের রতুয়া বাজার সর্বজনীন পুজো তাই এখানে সম্প্রীতির পুজো হিসেবে পরিচিত। পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা ১১০২ সালে জহর খান পুজো শুরু করেন। একচালার প্রতিমা গড়ে পুজো হয় স্থায়ী মন্দিরে। সপ্তমী থেকে ৪ দিন মেলা বসে। পুজো কমিটি সম্পাদক দিলীপ সাহা বলেন, “পুজো ঘিরে পুজোর কটা দিন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠেন।”

জমক নয়, নজর টানে নিষ্ঠাই
রথের দিন কাঠামো পুজো থেকে ময়নাগুড়ির আনন্দনগরের তালুকদার পরিবারে শুরু হয়ে যায় দেবী বরণের প্রস্তুতি। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রতিমা। এখানে দেবী ডাকের সাজে। জমক নেই। রয়েছে নিষ্ঠার আকর্ষণ। পুজো ২৯ বছরে পা রাখছে। আয়োজক পরিবারের সদস্য রাজু বীরেন তালুকদার বলেন, “পুজোর তিনদিন খিচুড়ি ভোজের আয়োজন থাকবে।”

মহালয়া থেকে শুরু চণ্ডীপাঠ
জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো হয়। মহালয়ায় ঘট ভরে দেবীর আরাধনার পাশাপাশি শুরু হয় চন্ডীপাঠের আসর। শারদ উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে লাগোয়া ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা। মালদহের চাঁচলের ডুমরো এলাকার মিশ্রবাড়ির পুজো তাই পারিবারিক হয়েও সর্বজনীন। পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৯৫ বছরের পুরনো ওই পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গোলকনাথ মিশ্র। একচালার প্রতিমা গড়ে পুজো হয় স্থায়ী মন্দিরে। পুজোকে ঘিরে অষ্টমী থেকে তিন দিন ধরে চলে মেলা। নবমীতে নরনারায়ণ সেবা। পুরনো প্রথা মেনে দশমীতে দেবী বিসর্জন হয় স্থানীয় কুসুমকামিনী ঘাটে।

মাটির নীচে পুজিত পাতালচণ্ডী
মাটির তলায় স্থায়ী মন্দিরে পুজো হয় ধাতুর তৈরি পাতালচন্ডী দেবীর। উপরে পুজিতা হন মৃন্ময়ী। এ ভাবে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে দুই দেবীর পুজো হচ্ছে মালদহের রতুয়ার কাহালায়। স্থানীয় বাসিন্দা শক্তি মিশ্র পুজো শুরু করেন। যদিও ১৯৬৮ সাল থেকে তা সর্বজনীন। পাতালচন্ডীর পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরদিন বৈষ্ণব মতে। মৃন্ময়ীর পুজো হয় শাক্ত মতে।

• প্রতিমার বায়না থেকে চাঁদা আদায় সবই করছেন হাসি মুখে। বিকেল হতে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তাঁদের মণ্ডপে যেতে। সংসার সামলে ‘পীযূষ স্মৃতি দুর্গাপুজো’ কমিটি নামে সংস্থা গড়ে এ ভাবে পুজো আয়োজন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার এক দল গৃহবধূ। তিন বছরের ওই পুজোর প্রথম দু’বছর এলাকার ছেলেরা নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু গত বছর বিসর্জনের পরে মহিলারা সিদ্ধান্ত নেন নিজেরাই পুজোর আয়োজন করবেন। সিদ্ধান্ত মতো কাজ। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, “সংসার সামলেও যে মহিলারা পুজোর আয়োজন করতে পারে সেটা দেখাতে চাই।” মহিলাদের ওই উদ্যোগে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আদেশ মাহাতো। তিনি বলেন, “ওয়ার্ডের দেড়শো মহিলা ছেলেদের সাহায্য ছাড়া পুজোর আয়োজন করছেন। এটা ভাল উদ্যোগ।” বাজেট ৭০ হাজার টাকা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ৩০ মহিলার পৃথক দুটি দল চাঁদা সংগ্রহ করছেন। প্রতিমার বায়না হয়েছে। মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। ষষ্ঠীর দিন সকালে তাঁরা নিজেরা ট্রাকে তুলে প্রতিমা মণ্ডপে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুজোয় মণ্ডপে খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকবে। দশমীতে মহিলারা ব্যান্ড বাজিয়ে প্রতিমা তুলে কুলিক নদীতে যাবেন বিসর্জনে। পুজো কমিটির সহ সম্পাদক রীণা মাহাতো বলেন, “বছরভর সংসারের কাজে মহিলারা ব্যস্ত থাকেন। পুজোর চারদিন ঘরে কাজ নেই। সংসারের বাইরে একটু আনন্দে মেতে উঠতে এমন উদ্যোগ।” পুজো কমিটির সম্পাদক মিঠু দাসের আক্ষেপ, যদি পুরোহিত ও ঢাকিরা মহিলা হতেন আরও ভাল হত।
তথ্য: গৌর আচার্য।

• জমিদার নেই জমিদারি প্রথাও বিলীন। কিন্তু জমিদারের পুজো আছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের মনোহলি গ্রামে প্লাস্টার খসে ইট বার হয়ে পড়া বড় বড় থাম বিরাট দালান বাড়ি প্রায় ভগ্নদশা। তাতে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে দেবী বন্দনার ছোঁয়া। পদ্ম শালুক কাশ ফুলের হাওয়ায় দুলে কচিকাচারা আনন্দে মেতে ওঠে জীর্ণ দালান কোঠার নীচে খড়ের কাঠামো থেকে ধীরে ধীরে দেবী-রূপের দৃশ্য হয়ে ওঠার সাক্ষী থাকতে। এই সময় সারা বছরের নিস্তব্ধতা কেটে বালক বালিকার ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে জমিদার বাড়ির চত্বর। একদা জমিদার বাড়ির পুজো আজ সর্বজনীনে পরিণত হয়ে এ বার ১১৮ বছরে পা রাখল। মনোহলির প্রয়াত জমিদার যোগেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯২ সালে পারিবারিক দুর্গাপুজো চালু করেন। জমিদারি চলে যাওয়ার পর পরবর্তী প্রজন্ম ভিন দেশে চলে যান। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় এলাকার একমাত্র এই প্রাচীন পুজো। মুখভার হয়ে পড়ে কচিকাঁচাদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসেন বাসিন্দারা। প্রস্তুতি থেকে আয়োজনের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নেন। এরপরই বারোয়ারী পুজোতে পরিণত হয় মনোহলির জমিদার বাড়ির পুজো। গ্রামের বাসিন্দারা পুজো কমিটি তৈরি করে এবারেও মেতে উঠেছেন পুজোর আয়োজনে। প্রবীণ হরিহর রায়, শ্যামচন্দ্র বর্মনেরা জানান, জমিদারি আমলের সেই জাঁকজমক নেই। তবে তিথি পঞ্জিকা মেনে পুজোর আয়োজনে কোনও ঘাটতি হয় না। বর্তমান জমিদার বাড়ির বংশধর রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রথা মেনে আজও দালান বাড়ির বারান্দায় প্রতিমা তৈরি হয়। দেবী এখানে মৃন্ময়ী। বাসিন্দাদের নিষ্ঠা-ভক্তিতে আজও অটুট এই পুজো।”
তথ্য:অনুপরতন মোহান্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.