কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে পুজো এসে যাওয়ার আগমনী সুর। সেই সুরের ছন্দে তাল মেলাতে প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত নানা রঙের সাজে। আর সব কিছুর উপরে যা নিয়ে সকলেই ব্যস্ত তা হল পুজোর বাজার।
অন্যান্য বছর সবাই শরতের এই মহোৎসবে মেতে উঠলেও মন খারাপ করে বলে থাকতে হত বনগাঁর মানুষকে। যার কারণ ছিল প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। প্রায় ফি বছর পুজোর সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, হাবরা-সহ প্রভৃতি এলাকায় বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টির কারণে ডুবে যেত চাষের খেত। মাথায় হাত পড়ত চাষিদের। কিন্তু এ বছর মুখ তুলে চেয়েছেন দেবী। বৃষ্টি হলেও অতিবৃষ্টির নাকানি চোবানি খেতে হয়নি তাঁদের। মাঠের ভরা ফসল হাসি ফুটিয়েছে চাষির মুখে। আর সেই হাসিই ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা বনগাঁ মহকুমায়।
মহালয়া আসতে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি। কিন্তু তার আগে থেকেই বনগাঁ ও হাবরার কাপড়ের দোকানগুলিতে এবছর জমজমাট ভিড়। অবস্থা এমনই যে কাপড়ের দোকানের মালিকেরা কর্মচারিদের দুপুরের ছুটি বাতিল করে দিয়েছেন। পোশাক তৈরির দোকানগুলিতেও অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। |
বনগাঁর কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শিবপ্রসাদ বসু বলেন, “এ বার আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে ঈদের সময় থেকেই বাজার বেশ ভাল। জিনিসপত্রের দাম হয়তো একটু বেশি, তবে মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন।”
অন্যান্য বছর বনগাঁ মহকুমার দোকানগুলিতেও পোশাক তেমন মজুত থাকত না। এবছর বিক্রি বাড়ায় পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্য।
অন্যান্য চাষের সঙ্গে এবার বেশ ভাল হয়েছে ফুলের চাষও। ফুলচাষি ইন্দ্রজিত দাস জানালেন, বাজারে এখন কেজি প্রতি গাঁদার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। তাঁর আশা পুজোর সময় এই দাম আরও বাড়বে। শুধু ফুল চাষই নয়, ধান, পাট থেকে সবজি সব চাষই এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ ভাল হয়েছে। এলাকার চাষিরা জানালেন, প্রতি বছর এই সময় খেত জলের তলায় চলে যায়। ২০০০ সালের পর এ বারই ব্যতিক্রম।
গরুপাচার থেকে চোরাচালান- নানা সমস্যায় জর্জরিত বনগাঁ-হাবরায় এখন সত্যিই একটু মুক্তির হাওয়া। অন্যান্য বছর মহালয়ার পরই শুরু হত কেনাকাটা। তাও তেমন জমত না। এ বছর মহালয়া আসতে এখনও কিছু দিন বাকি। ভিড় বাড়ছে পার্লারগুলিতেও। সকাল দেখে যদি দিন বোঝা যায় তা হলে বলতেই হচ্ছে এ বার বনগাঁ মহকুমার পুজো সত্যিই ‘আনন্দের উৎসব’। এখন শুধুই বোধনের অপেক্ষা। |