|
|
|
|
হলদিয়া বন্দরের অচলাবস্থা কবুল প্রচারপত্রে |
|
মমতার দাবি ওড়াল
তৃণমূলেরই ইউনিয়ন
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া ও কলকাতা |
|
মুখ্যমন্ত্রী হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বললেও তাঁর দলের শ্রমিক সংগঠনই প্রচারপত্র বিলি করে জানিয়ে দিল, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, কাজের পরিবেশও নেই। ওই সংগঠনের সভাপতি তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। যিনি মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে হলদিয়া বন্দরের সব বার্থে কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন। ঘটনাচক্রে মাল খালাসকারী সংস্থা এবিজি এ দিনও তাদের কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
মঙ্গলবার হলদিয়ায় এসে সেখানকার বন্দরে কোনও সমস্যা নেই বলে দাবি করেছিলেন মমতা। একই মঞ্চ থেকে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু। তাঁরা সকলেই অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকারের বদনাম করতেই বন্দরে অচলাবস্থা চলছে বলে কুৎসা রটানো হচ্ছে। কিন্তু এ দিন শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনই প্রচারপত্র বিলি করে অচলাবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব বিব্রত। প্রচারপত্রের নীচে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অসীম সূত্রধরের নাম রয়েছে। তিনি শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। |
|
হলদিয়া বন্দরে কাজের পরিবেশ ফেরানোর ডাক দিয়ে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের প্রচারপত্র। |
তাঁর সংগঠনের সম্পাদকই কী ভাবে উল্টো কথা বললেন প্রচারপত্রে? শুভেন্দু বলেন, “অসীম সূত্রধর প্রচারপত্রে কী বলেছেন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” উল্টে হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক বলে এ দিনও দাবি করেছেন তিনি। শুভেন্দুর কথায়, “বন্দর স্বাভাবিক রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পণ্য আসছে-যাচ্ছে।”
অসীম সূত্রধর অবশ্য প্রচারপত্রের দায় স্বীকার করে হলদিয়া বন্দরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এবিজি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, “এবিজি-র ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহাল করা হয়নি। ফলে অন্যদের মনে আশঙ্কা বাড়ছে। বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য গত ৪ অক্টোবর থেকে আমরা ওই লিফলেট বিলি করছি।”
অন্য দিকে, এবিজি-র পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তমলুকের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন সিটু। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় হাজিরা দিতে এ দিন তমলুকে এসেছিলেন লক্ষ্মণবাবু। তিনি বলেন, “শ্রমিক ছাঁটাই কখনওই বাঞ্ছনীয় নয়। তবে, এবিজি চলে গেলে হলদিয়া বন্দরের পাশাপাশি রাজ্যেরও ক্ষতি হবে। বন্দর-কর্তৃপক্ষের উচিত এবিজি-কে বেশি করে কাজের সুযোগ করে দেওয়া। কারণ ওরা অল্প সময়ে বেশি পণ্য খালাস করতে পারে।” লক্ষ্মণবাবুর দাবি, হলদিয়া বন্দরের অন্য বার্থে যেখানে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পণ্য খালাস হয়, সেখানে ২ এবং ৮ নম্বর বার্থের প্রতিটিতে ২০ হাজার টন করে পণ্য খালাস করা সম্ভব।
হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি এ দিন আরও জটিল হয়েছে দু’টি ঘটনায়। প্রথমত, একটি বিবৃতি দিয়ে এবিজি-র সিইও গুরপ্রীত মালহি অভিযোগ করেছেন, বুধবার দু’দফায় তাঁদের কর্মীদের উপর আক্রমণ হয়েছে। এক বার তাঁদের অফিসে। দ্বিতীয় বার বন্দরে দু’নম্বর বার্থের কাছে। বিবৃতিতে রাজ্য সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন মালহি। তাঁর মতে, তা না হলে রাজ্যের শিল্প পরিবেশ নিয়ে ভুল বার্তা যাবে। |
|
বন্দরের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের অনশন-অবস্থান। ছবি: আরিফ ইকবাল খান |
পাশাপাশি, অচলাবস্থা কাটাতে বন্দর চেয়ারম্যানের গড়ে দেওয়া ৯ সদস্যের কমিটির বৈধতা নিয়েও এ
দিন প্রশ্ন তুলেছে এবিজি। মালহি বলেন, “গত ৬ এবং ৭ অক্টোবর বন্দর কর্তাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছিল। তার পর যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের মতামতও তাতে লেখা হয়নি। ফলে এই সুপারিশগুলির সঙ্গে আমাদের
কানও সর্ম্পক নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বাড়তি পণ্য নামানোর ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পুর্ননিয়োগ করতে পারি।”
এই অভিযোগ মানতে রাজি নন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান, হলদিয়া বন্দরের ট্রাফিক ম্যানেজার দামোদর নায়েক বলেন, “দু’পক্ষের সঙ্গে আলাদা ভাবে এবং একসঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সবটাই ছিল সরকারি বৈঠক। এখন কোনও পক্ষ সেই বৈঠকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে কী আর করা যাবে।”
বন্দরের চেয়ারম্যান মণীশ জৈন বলেন, “কমিটির সুপারিশগুলি উভয় পক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। এবিজি লিখিত ভাবে আমাকে কিছু জানায়নি। এবিজি তাদের বক্তব্য জানালে সে সব নিয়ে ভাবা যাবে। তবে কমিটির সুপারিশ যথেষ্ট ভারসাম্য রেখেই করা হয়েছে। এবিজি-কে বিপণনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ওরা নিজেরা কার্গো এনে ব্যবসা করুক, আমাদের আপত্তি নেই।”
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য গত দু’দিন বন্ধ থাকার পরে বুধবার ফের আন্দোলনে নেমেছেন হলদিয়া বন্দরের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। বিকেল থেকে বন্দরের প্রশাসনিক ভবন ‘জওহর টাওয়ারে’র গেটের বাইরে মঞ্চ বেঁধে অনশনে সামিল হন শ্রমিকদের একাংশ। তাঁরা সবাই তৃণমূল আইএনটিইউসি-র সদস্য-সমর্থক। শুভেন্দু অবশ্য দাবি করেন, ওই অনশনের বিষয়টিও তাঁর জানা নেই। ঘটনাচক্রে এ দিন রাতেই উঠে যায় অনশন।
আন্দোলনকারী শ্রমিক সংগঠন এবং বন্দর সূত্রের খবর, এ দিনও হলদিয়া বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে মাল ওঠানো নামনোর কাজ হয়নি। বন্দর সূত্রে বলা হয়, বুধবার হলদিয়া বন্দরে ঢোকার জন্য মোহনায় অপেক্ষা করছিল ৬টি জাহাজ। বছরের অন্য সময়ে যে সংখ্যাটা থাকে অন্তত ১৫। সাম্প্রতিক গোলমালের জেরে হলদিয়া বন্দরে যে জাহাজ আসা কমছে, এটা তারই প্রমাণ বলে বন্দরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলের বক্তব্য। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ব জুড়ে চলা মন্দার প্রভাবেই জাহাজের সংখ্যা কমেছে। |
|
|
|
|
|