বিমান থমকে রানওয়েতে পাখিদের মহাভোজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভরা শরৎকাল। কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে রানওয়ের আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় থরে থরে ফুটেছে কাশফুল। বুধবার সেই কাশের জঙ্গল সাফ করতে গিয়েই দেখা দিল এক উটকো বিপত্তি। যার জেরে কি না রানওয়েতে নামতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ আকাশে ঘুরপাক খেতে বাধ্য হল বেশ কয়েকটি বিমান।
কারণ, রানওয়ে জুড়ে তখন চলছিল পাখিদের মধ্যাহ্নভোজ!
পোকা দিয়ে।
ব্যাপারটা কী? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কাশফুল কাটা শুরু হতেই দলে দলে পোকা বেরিয়ে আসতে থাকে গাছের ভিতর থেকে। আর সেই পোকার লোভে নেমে আসে পাখির ঝাঁক। রানওয়ের উপরে বসেই টপাটপ পোকা ধরে খাওয়া শুরু করে তারা। মাথায় হাত পড়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারদের! কলকাতায় নামার জন্য তখন মাথার উপরে চলে এসেছে চারটে বিমান। কিন্তু রানওয়েতে পাখির মাঝখানে এক বার তারা নেমে এলে তো ভয়ানক বিপদ হবে! তাই পত্রপাঠ নামতে নিষেধ করে দেওয়া হয় বিমানগুলোকে।
পাখিরা যে এমন একটা গণ্ডগোল পাকাতে চলেছে, সকালেই তার আঁচ পেয়েছিলেন এক পাইলট। ১৭ নম্বর বে থেকে রওনা হওয়ার আগে মজা করে তিনি বলেছিলেন, “মনে হচ্ছে কোনও পাখিরালয় থেকে বিমান ছাড়ছি।” গত কয়েক দিন আগে শুরু হয়েছিল মৌমাছিদের দৌরাত্ম্য। বিমানের আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে মৌমাছির দল ছুটে আসছিল বিমান লক্ষ করে। সে বার বিশেষজ্ঞরা অন্তত তেমনই সন্দেহ করেছিলেন। আর বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় পাখিদের উৎপাত। থেকে থেকেই রানওয়েতে ঘুরঘুর করছিল তারা। খবর পেয়ে বিমানবন্দরের অফিসারেরা পাখি তাড়িয়ে তখনকার মতো একটা সমাধান করেছিলেন। কিন্তু তখন কে জানত, আরও বড় ভোগান্তির ছক কষেছে পক্ষীকুল? |
এ দিন প্রধান রানওয়ে বন্ধ রেখে সারাইয়ের কাজ হচ্ছিল। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ওই রানওয়ে। সেই সময়ে দ্বিতীয় রানওয়ে থেকে বিমান ওঠানামা করছিল। সেই রানওয়ের পাশেই ছিল কাশের জঙ্গল। সঙ্গে বড় বড় ঘাস। দুপুর নাগাদ ট্রাক্টরের মতো একটা যন্ত্র দিয়ে সেই ঘাস ও কাশফুল কাটার কাজ শুরু হয়। কাজ একটু এগোতেই জঙ্গল থেকে বেরোতে থাকে পোকার ঝাঁক। বিমানবন্দরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, আশপাশে মূলত কাক আর বকের আনাগোনা ছিল। এ বার তারা সুযোগ বুঝে মুখে পোকা তুলে নিয়ে দ্বিতীয় রানওয়েতে বসে যায়। দুপুর তখন প্রায় তিনটে পঞ্চাশ। যে বিমানটি কলকাতায় নামার জন্য বিমানবন্দরের একেবারে কাছে চলে এসেছিল, তড়িঘড়ি তার মুখ ঘুরিয়ে দেন এটিসি অফিসারেরা। পিছনে আরও তিনটে বিমান নামার জন্য তৈরি। তাদেরও অপেক্ষা করতে বলা হয়। কলকাতা থেকে ছাড়ার জন্যও তখন প্রস্তুত দু’টি বিমান। সে দু’টিকেও দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে পাখি তাড়ানোর জন্য বিমানবন্দরে ‘গান-ম্যান’ থাকতেন। ঘাস কাটার যন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে বন্দুক নিয়ে তিনিও ঘুরতেন। পোকা দেখে পাখি মাটির দিকে নামার চেষ্টা করলেই গুড়ুম শব্দে পাখিদের ভয় পাওয়াতেন। নিয়ম-নীতির ফাঁসে বন্দুকবাজের বন্দুক গিয়েছে। এখন আর গুলি ছুড়ে পাখিদের ভয় পাওয়ানো যায় না। অফিসারেরা তাই পাখি-তাড়ানোর বিশারদদের নিয়ে ছুটলেন দ্বিতীয় রানওয়েতে। খুব জোরে জিপ ছুটিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হল আহারে ব্যস্ত পাখিদের। তার পরে বোমা ফাটিয়ে একেবারে এলাকা ছাড়া করা হল তাদের। চারটে নাগাদ স্বাভাবিক হল বিমান চলাচল।
ঝঞ্ঝাটের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিমানবন্দরের অফিসাররা বলেছেন, বড় ঘাস বা উঁচু কাশফুল থাকলে স্বাভাবিক ভাবে সেখানে পোকা থাকবে। তার টানে পাখিও আসবে। অসুবিধেটা সেখানেই। গাছ কেটে ফেলার সময়ে হয়তো বেশি পোকা বেরোয়। কিন্তু, জঙ্গল সাফ হয়ে গেলে পোকার টানে পাখির উপদ্রব কমে যায়। বলা বাহুল্য, এ দিন আর জঙ্গল সাফের অপেক্ষা করা হয়নি। উড়োজাহাজের রাজ্যে নির্দয় ভাবেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে পাখিদের ভোজসভা! |