সম্পাদকীয় ১...
রায়গঞ্জ বনাম কল্যাণী
ণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কাজ কী? দেশের মানুষের চাহিদা-আকাঙ্ক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট দাবিতে পরিণত করিয়া তাহার রূপায়ণের প্রচেষ্টাই দলের কাজ, বলিবে গণতন্ত্রের তত্ত্ব। কিন্তু নির্বাচনী খেলায় জমি বাড়াইবার ইচ্ছায়, কিংবা হারাইবার আশঙ্কায়, নাগরিক চাহিদাগুলিকে তাচ্ছিল্য করাই যেন এ রাজ্যে দলগুলির কাজ হইয়াছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ‘এইমস’ সদৃশ হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করিবার প্রস্তাব লইয়া রাজ্যের প্রধান দুইটি দল যে তরজা শুরু করিয়াছে, তাহাতে মনে হইতে বাধ্য যে তাহারা জনস্বার্থের প্রতি মনোযোগী নহে, ক্ষুদ্র দ্বন্দ্ব লইয়া ব্যস্ত। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা বিশেষ করিয়া দোষার্হ। মুখ্যমন্ত্রী-সহ নানা মন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হইয়াছে যে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে হাসপাতাল স্থাপন করিতে তাঁহারা আগ্রহী নহেন। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলিয়াছেন, আগে ওই হাসপাতাল করিতে হইবে কল্যাণীতে, তাহার পর রায়গঞ্জে অনুরূপ একটি হাসপাতাল হইলেও হইতে পারে। রায়গঞ্জ যে হেতু কংগ্রেস দলের প্রভাবান্বিত এলাকা, তাহার সাংসদ দীপা দাশমুন্সি যে হেতু বরাবরই মমতার বিরোধী, তাই কি তাহা বাতিল হইল? জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কথা রাজ্য সরকার তুলিয়াছে, কিন্তু সেই সমস্যা কোথায় নাই? সমাধানের জন্য কী চেষ্টা রাজ্য সরকার করিয়াছে? কলিকাতা ও তাহার সংলগ্ন ঘন-বসতি এলাকায় এক ডজনেরও বেশি বেসরকারি হাসপাতালের জন্য জমি পাওয়া গিয়াছে, অথচ রায়গঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল কলেজ করিবার জমি পাওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে, ইহা আশ্চর্য বটে। কল্যাণীতে জমি রহিয়াছে, তাই সেখানেই হাসপাতাল করিতে হইবে, ইহা বড় আশ্চর্য যুক্তি। যেখানে মানুষের প্রয়োজন অধিক, সেখানে হাসপাতাল না করিয়া যেখানে জমি পাওয়া সুবিধা, সেখানেই করিতে হইবে, ইহা কেমন নীতি? হাসপাতাল তবে কাহার জন্য? কাহার জন্য উন্নয়ন?
উন্নয়ন করিবার কৃতিত্ব দাবি করিয়া রাজনৈতিক ময়দানে নেতারা লড়াই করিবেন, ইহা অপ্রত্যাশিত নহে, বরং কাঙ্ক্ষিত। জনগণের মত প্রভাবিত করিতে, তাহাদের সমর্থন নিজের প্রতি আকর্ষণ করিতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা গড়িয়া উঠিবে, ইহাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলগুলি উপেক্ষিত মানুষের প্রয়োজন বুঝিয়া তাহাদের দাবিগুলিকে মূলস্রোতের রাজনীতির মধ্যে লইয়া আসিবে, পরস্পরবিরোধী নানা দাবির সংঘাতে নূতন নূতন সংকট তৈরি হইবে, এই সকলই গণতন্ত্রে প্রার্থিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাহা ঘটে নাই। বরং কংগ্রেস এবং তৃণমূল, উভয়েই যেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে অনুসরণ করিতেছে যাঁহার মত ছিল, ‘আমার পথে চলো অথবা পথ দেখ।’ উন্নয়ন প্রকল্প আমার ইচ্ছা মতো হইবে, না হইলে হইবে না, এমনই মনোভাব এ রাজ্যের নেতাদের। অর্থাৎ প্রশাসনে বসিয়াও তাঁহারা রাজ্যকে নির্বাচন ক্ষেত্র হিসাবে, এবং নাগরিকদের ভোটদাতা হিসাবে দেখিতেছেন। তাই প্রশাসনের যে কোনও সমস্যাই আম-নাগরিকের সংকট হিসাবে গণ্য না করিয়া, রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তির পরীক্ষা বলিয়া তাঁহারা গ্রহণ করিতেছেন। রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ হইলে তাহা যেন রাজ্য সরকারের পরাজয়, না হইলে কেন্দ্রীয় সরকারের পরাজয়, এমনই মনে হইতেছে মন্ত্রীদের ভাষণে। ইহা কি উন্নয়নের রাজনীতি? কী করিলে রাজ্যের উন্নয়ন হয়, নাগরিক অধিকার এবং জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হয়, সেই প্রশ্নগুলি আর প্রশাসনের কেন্দ্রে নাই। কী করিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাঁহাদেরই স্বঘোষিত যুদ্ধে জয়লাভ করেন, তাহাই প্রশ্ন। রাজ্যবাসী কী হারাইবেন, সে প্রশ্ন কে করিবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.