এখনও বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে অচ্ছুত হওয়ার আশঙ্কার মুখে দাঁড়িয়ে ভারত।
রাজনীতির টানাপোড়েনে সংস্কারের নীতি রূপায়ণে ব্যর্থতা। রাজকোষে লাগামছাড়া ঘাটতি। আর বৃদ্ধির হার বাড়ানোর দিশা খোয়ানো। এর যে কোনওটিই তাকে ঠেলে দিতে পারে ‘ক্রেডিট রেটিং’ খোয়ানোর অন্ধকারের দিকে। ঘাড়ে চেপে বসতে পারে ‘ব্রাত্য’-এর তকমা। অন্তত এই মুহূর্তে তেমন সম্ভাবনা ৩৩%। গত কয়েক সপ্তাহে সংস্কারের ঝোড়ো দ্বিতীয় ইনিংস সত্ত্বেও ফের এই হুঁশিয়ারি দিল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি)।
মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থাটির দাবি, কেন্দ্র যে শেষ পর্যন্ত সংস্কারের পথে হাঁটছে, সে বিষয়ে তারা ওয়াকিবহাল। সেই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ঘাটতির বোঝা কমাতে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের বন্দোবস্তও। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে অর্থনীতির।
এসঅ্যান্ডপি-র মতে, অবিলম্বে ঝিমিয়ে পড়া বৃদ্ধির হার চাঙ্গা হওয়া জরুরি। প্রয়োজন বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ, বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমাতে হবে ভাঁড়ারের ঘাটতিও। সব থেকে বড় কথা, সংস্কারের পথে কোনও ভাবেই যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় ভোট-বাক্স ভরার রাজনীতি। কারণ, এর যে কোনওটি হলেই বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে টাকা ঢালার জন্য ‘অযোগ্য’ হয়ে যাবে ভারত।
কোনও দেশকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তারই মূল্যায়ন হল ক্রেডিট রেটিং। রেটিং যত ভাল, তাকে ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। তাই এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়লে ঋণের জন্য আরও চড়া সুদ গুনতে হবে ভারতকে। এমনিতেই ঘাটতির বোঝায় নুয়ে থাকা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে যা সুখবর নয়।
শুধু তা-ই নয়। এখন ভারতের রেটিং বিবিবি(-)। যা লগ্নিযোগ্য রেটিংয়ের মধ্যে সব থেকে নীচে। তাই এরও নীচে নেমে যাওয়ার অর্থ তখন এ দেশের সরকারি বন্ডে লগ্নি করতেও এগিয়ে আসতে চাইবেন না বিদেশি লগ্নিকারীরা। গত এপ্রিলে ভারতের ঋণ ফেরত দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গী (আউটলুক) স্থিতিশীল (স্টেব্ল) থেকে নেতিবাচক (নেগেটিভ)-এ নামিয়ে এনেছিল এসঅ্যান্ডপি। হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, পরিস্থিতি না-বদলালে ক্রেডিট রেটিং কমানোর। তাদের অভিযোগ ছিল, শিকেয় ওঠা সংস্কার আর কেন্দ্রের নীতিপঙ্গুত্বই এমন খাদের ধারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে দেশের অর্থনীতিকে। তাই মনমোহন সিংহ-পি চিদম্বরমের যুগলবন্দী দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকা সংস্কারে গতি আনার পরও এ দিন এসঅ্যান্ডপি-র ঘোষণায় চমকে গিয়েছেন অনেকে। পড়েছে শেয়ার বাজার। যদিও মূল্যায়ন সংস্থাটির আশ্বাস, ঘাটতি ছেঁটে সংস্কারে অবিচল থাকতে পারলে, রেটিং খোয়ানোর আতঙ্ক তাড়া করবে না ভারতকে। |