ফের ভারতের মূল্যায়ন কমানোর হুমকি এস অ্যান্ড পি-র। আর, তার জেরে পতন শেয়ার বাজারে। যা আবার লাগাম পরাল টাকার দামে।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এস অ্যান্ড পি) বুধবার আগামী দু’বছরের মধ্যে ওই মূল্যায়ন কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ার পরেই অনিশ্চয়তা গ্রাস করে শেয়ার বাজারকে। রেটিং কমানোর সম্ভাবনা অন্তত ৩৩% বলে নির্দিষ্ট করেছে তারা। এর জেরে সেনসেক্স পড়ে যায় ১৬২ পয়েন্ট। দিনের শেষে তা নামে ১৮,৬৩১.১০ অঙ্কে।
তবে আর্থিক সংস্কার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পরপর সাহসী পদক্ষেপ সত্ত্বেও এস অ্যান্ডপি-র এই হুমকি ভারতের উপর পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করারই কৌশল বলে মনে করছেন বেশ কিছু বাজার বিশেষজ্ঞ। যেমন, আরও বেশি সংস্কারের জন্য দিল্লির উপর চাপ দিতেই তারা এই মন্তব্য করেছে বলে মনে করছেন সিএনআই রিসার্চ লিমিটেডের সিএমডি কিশোর পি অস্টওয়াল। তবে এস অ্যান্ড পি-র মতে, সংস্কার নিয়ে নিছক সিদ্ধান্ত ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় ছেদ পড়তে পারে সংস্কারের নীতি রূপায়ণে। এ ছাড়া রয়েছে ঝিমিয়ে পড়া আর্থিক বৃদ্ধির গতি। |
রেটিং কমানোর হুমকির পাশাপাশি আরও যে- সব কারণ বাজারের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
• মঙ্গলবারই আন্তর্জাতিক অর্থ -ভাণ্ডার বা আই এম এফের তরফে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কাটছাঁট করা। ২০১২ সালের জন্য তা নামিয়ে আনা হয়েছে ৪.৯ শতাংশে।
• বিশ্ব জুড়ে মন্দার মেঘ, বিশেষ করে ইউরোপের ঋণ মেটানোর সঙ্কট।
• দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মূল্যায়ন ইতিমধ্যেই কমানোর সিদ্ধান্ত।
এ দিন বিশেষ ভাবে পড়তে থাকে বিদ্যুৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক শেয়ার। প্রসঙ্গত, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের রেটিং ইতিমধ্যেই কমিয়ে দিয়েছে এস অ্যান্ড পি। স্টেট ব্যাঙ্কের রেটিং ‘বিবিবি’ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ‘বিবিবি মাইনাস’। যা বিনিয়োগের সম্ভাবনার দিক থেকে একেবারে তলানিতে। পাশাপাশি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের রেটিং ‘বিবিবি মাইনাস’ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে ‘বিবি প্লাস’-এ। এই রেটিং ফাটকার বিচারে সর্বোচ্চ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে তাদের ইঙ্গিত। ব্যাঙ্কগুলির সম্পদের মান তেমন ভাল নয় বলেই এই মূল্যায়ন কমানো, জানিয়েছে এস অ্যান্ড পি। স্টেট ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম এ দিন পড়ে যায় ২.৩২ শতাংশ। সেনসেক্সের অন্তর্গত ৩০টি শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খোয়াতে হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ককেই।
উল্লেখ্য রেটিং কমলে সেই দেশকে ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ভারতের রেটিং ‘বিবিবি মাইনাস’। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গড়া ব্রিক্স দেশগুলির মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন। লগ্নিযোগ্যতার মাপকাঠিতেও এই মূল্যায়ন তলানিতে। এর চেয়ে নীচে রেটিং নামলে বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতে লগ্নি পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেন। এপ্রিলেই ভারতের রেটিং স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে নামিয়ে এনেছিল এস অ্যান্ড পি। ডলারে টাকার দাম এ দিন পড়ে যায় ৩৩ পয়সা। প্রতি ডলার দাঁড়ায় ৫৩.০৫ টাকা। বাজার সূত্রে খবর, এস অ্যান্ড পি-র হুমকির জেরে শেয়ার বিক্রি করতে থাকে বিদেশি আর্থিক সংস্থা। তাই ডলারের তুলনায় বাড়ে টাকার জোগান। |