রাতভর অস্ত্রোপচার, বিপন্মুক্ত সোয়াটের সাহসিনী
মেয়েটা যেন বেঁচে যায় প্রার্থনা করছিল গোটা দেশ। সাহসিকতার জন্যই মেয়েটাকে সবাই চেনে এখন।
পাকিস্তানের মতো দেশে আরও বেশি করে দরকার এমন মেয়ে। তাই সোয়াটের সাহসিনী মালালা ইউসুফজাইকে হেরে যেতে দেখতে চাননি কেউ। টানা তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পরে লড়াকু মেয়ের শিরদাঁড়া থেকে গুলি বার করে এনেছেন চিকিৎসকরা।
গত কাল তালিবান জঙ্গিরা স্কুলবাসে উঠে পুলিশের ছদ্মবেশে মালালার মাথায় আর ঘাড়ে গুলি করে। পড়াশোনা করতে চেয়ে তালিবানের রোষের মুখে পড়ে সে। আপাতত বিপন্মুক্ত হলেও কাল রাত দু’টো থেকে অস্ত্রোপচার শুরু করতে বাধ্য হয় পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের চিকিৎসকের একটি দল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান মুমতাজ খান। ভোর পাঁচটায় অস্ত্রোপচার শেষ হয়।
হাসপাতালে মালালা। ছবি: রয়টার্স
তার মাথায় লাগা গুলিটাই নীচের দিকে গিয়ে শিরদাঁড়ায় আটকে যায়। সেই গুলি বার করা হলেও অস্ত্রোপচারের সময় প্রচুর রক্তপাত হয়। মালালার মাথা ফুলে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা সেটা কমানোর চেষ্টা করেন। তবে মাত্র ১৪ বছরের মেয়েটি এখনও পুরো স্থিতিশীল নয়। তাই আশঙ্কা রয়েছে চিকিৎসকদেরও।
পেশোয়ারের হাসপাতালের কাছেই রাখা হয়েছে পাক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। মালালার কাকা আহমেদ শাহ জানিয়েছেন, প্রথমে চিকিৎসকদের মনে হয়েছিল প্রয়োজনে মালালাকে দুবাইয়ে নিয়ে যেতে হতে পারে। তাই এই ব্যবস্থা। তবে এখন মালালার যা অবস্থা তাতে তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নন চিকিৎসকরা। এখন পেশোয়ারের সেনা হাসপাতালের আইসিইউয়ে রাখা হয়েছে মালালাকে।
যে দুই জঙ্গি মালালাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, তাদের সন্ধান দিতে পারলে এক কোটি টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছে খাইবার-পাখতুনখোওয়া সরকার। এখানকার তথ্যমন্ত্রী ইফতিকার হুসেন বলেছেন, “মালালার রক্ত আর তার প্রতি সারা বিশ্বের মানুষের সহানুভূতি জঙ্গিদের জবাব দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।”
সোয়াটের এই স্কুলপড়ুয়াকে এর আগেও বার তিনেক হুমকি দিয়েছে তালিবান। তা সত্ত্বেও কেন তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি? পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক বলেন, নিরাপত্তা দিতে চাইলেও মালালার বাবা তা নিতে চাননি। তবে এর পর থেকে তার নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা হবে।
মালালার আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা। বুধবার ইসলামাবাদে। ছবি: এ এফ পি
সাহসী একরোখা মেয়েটার উপরে তালিবানের হামলার সমালোচনায় সরব পাক প্রশাসন। বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার বলছেন, “এ বার অন্তত আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার।” তাঁর মতে, এই ঘটনা দু’টি মানসিকতার দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে। একটা চায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, উন্নতি, শিক্ষা আর অন্যটা দেশকে অন্ধকারেই রেখে দিতে চায়।
মালালার উপরে হামলা নিয়ে দেশ জুড়ে ক্ষোভের মুখে বিবৃতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানিও। তিনি হাসপাতালে মালালাকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে বলেন, “মালালা একটা মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেই মূল্যবোধ রক্ষা করতে আমাদেরও লড়াই করতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, মালালার মতো কিশোরীর উপরে জঙ্গিদের হামলা থেকে বোঝা যায় পাকিস্তানে চরমপন্থী মনোভাব এখনও কত সক্রিয়। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান মালালা ইউসুফজাইয়ের উপরে হামলার দায় স্বীকার করলেও সেনাপ্রধান কিয়ানি অবশ্য এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম করে কিছু বলেননি।
মালালার নিজের নামের সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে তার জন্য আজ প্রার্থনা করে। সোয়াটের মিঙ্গোরায় মালালার বাড়িতে তার বাবা-মাকে ভরসা দিতে আসেন অসংখ্য মানুষ। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ ইমরান খান টুইটারে মালালার সমর্থনে লিখেছেন: ‘সাহসী মেয়ে। ওর আরোগ্য কামনা করি।’ তিনি জানান, মালালার চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য করতে তৈরি তিনি।
মালালার উপর তালিবানি হামলার নিন্দা করেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনও। তিনি বলেছেন, “মেয়েদের অধিকার রক্ষার জন্য যে ভাবে মালালা লড়ছে, তার জন্য প্রচুর সাহস দরকার। ও সত্যিই খুব সাহসী মেয়ে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.