মনোরোগ থেকে সুস্থদের নতুন পুনর্বাসন-নীতি |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
সুস্থ হওয়ার পরেও বছরের পর বছর মানসিক হাসপাতাল থেকে যাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন না, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ নীতি গ্রহণ করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য তৈরি হয়েছে এক বিশেষজ্ঞ কমিটিও। দু’মাসের মধ্যে কমিটি পুনর্বাসন নীতির চূড়ান্ত খসড়া পেশ করবে। কী ভাবে সেরে ওঠা মনোরোগীকে মূল স্রোতে ফেরানো যায়, তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থা করা যায়, তা স্থির হবে ওই নীতিতে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “কলকাতা ও তার আশপাশে এমন কয়েকটি হোম তৈরি হবে। বাড়ির লোকেরা যাঁদের ফিরিয়ে নেন না, তাঁরা ওই হোমে থাকার সুযোগ পাবেন। সেখানে তাঁদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে উপার্জনের ব্যবস্থাও করা হবে। এ জন্য সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কথা চলছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্যও নেওয়া হবে।”
বিভিন্ন রাজ্যে মনোরোগীদের পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যেই প্রকল্প চালু হয়েছে। রাঁচির ‘সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’ বা বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস’-এর পুনর্বাসন কেন্দ্রে সেরে ওঠা মনোরোগীরা থাকেন। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কাজও করেন। এই রাজ্যের পুনর্বাসন প্রকল্পে ওই দুই কেন্দ্রের আদল থাকতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
কিন্তু পুনর্বাসনের এই নীতি বাস্তবে কতটা প্রয়োগ করা হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নতুন সরকার গঠনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মানসিক হাসপাতালের হাল ফেরাতে পরিদর্শক দল তৈরি হয়েছিল। বছর ঘোরার পরে দেখা গেল, ওই দলের সদস্যরা কেউ হাসপাতাল ঘুরে দেখেছেন সাকুল্যে এক বার, কেউ আবার তা-ও নয়। ফলে সেই প্রকল্প আপাতত শিকেয়। যথাযথ নজরদারির ব্যবস্থা না হলে পুনর্বাসন নীতির পরিণতিও কী হবে, প্রথম থেকেই সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “মানসিক রোগ বিষয়টি সমাজে, এমনকী প্রশাসনেও সবচেয়ে উপেক্ষিত। রাতারাতি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। এ জন্য দরকার ধারাবাহিক চেষ্টা।”
মনোরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সমাজদার বলেন, “এখানে মনোরোগীদের পুনর্বাসনের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। সদিচ্ছাটাই নেই। জন্তুদের যেমন খোঁয়াড়ে রাখা হয়, তেমনই গরাদের আড়ালে রাখা হয় মনোরোগীদের। কর্তৃপক্ষ তো চোখ বুজে থাকেনই, চিকিৎসকেরাও নির্বিকার।” বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে যে খালি জমি আছে, সেখানে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে সুস্থ হওয়া লোকজনের থাকা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় বলে মন্তব্য করেন জ্যোতির্ময়বাবু।
|
পুজোয় জামা মনোরোগীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা দুর্গাপুজোয় নতুন জামাকাপড় পাবেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মানসিক রোগীরা সাধারণত দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকেন। অনেকের বাড়ির লোকজন দেখতেও আসে না। পুজোর দিনগুলোয় তাঁদের যাতে একটু আনন্দ দেওয়া যায়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। রাজ্যের পাঁচটি মানসিক হাসপাতালের ৯৪০ জন রোগীকে জামাকাপড় দেওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা (রোগী-পিছু সর্বাধিক ৬০০ টাকা) খরচ হচ্ছে। ছেলেদের ধুতি-পাঞ্জাবি বা শার্ট-প্যান্ট এবং মেয়েদের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ দেওয়া হবে। |