দশভুজা
রেণুকার ঘরেই যেন জগজ্জননীর সংসার
সীমান্তে সংসার পেতেছেন স্বয়ং দশভুজা। মোট চারটে ঘরের মধ্যে ছেলেমেয়েকে নিয়ে জগজ্জননীই দখল করে রয়েছেন তিনটে ঘর! তা ছাড়াও বারান্দায়, উঠোনের এক কোণের অস্থায়ী ঘরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কার্তিক, গণেশরা। শরতের দুপুরে বাড়িতে ঢুকে বার কয়েক ডাকতেই রং তুলি হাতে জগজ্জননীর সংসার থেকে একচিলতে উঠোনে এসে দাঁড়ালেন বছর পঞ্চাশের রেণুকা পাল।
এটা আপনার বাড়ি না মা দুগ্গার?
সস্তা সুতির কাপড়ে ঘাম মুছতে মুছতে হেসে ফেলেন রেণুকাদেবী। বলেন, “এটা তো মায়েরই বাড়ি। উনি রয়েছেন বলেই তো আমরা দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে রয়েছি। না হলে আমরা দুই বুড়োবুড়ি যে অথৈ জলে ভেসে যেতাম।”
মুরুটিয়া থানার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বারুইপাড়া গ্রামে ঢুকে রাস্তার পাশেই বাড়ি রেণুকাদেবীর বাড়িতে লোক বলতে তিনি আর তাঁর অসুস্থ স্বামী মনোজ পাল। প্রতিমা তৈরির কাজে এলাকায় মনোজবাবুর বেশ নামডাকও রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছে না। অবস্থা এমনই দাঁড়াল যে, প্রতিমা তৈরি তো দূরের কথা, শারীরিক দুর্বলতার কারণে কথা বলতে গিয়েই হাঁফিয়ে উঠছিলেন। জীবনের এতগুলো বছর ধরে ঠাকুর দেবতার মূর্তি তৈরি করেই যিনি সংসার চালিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, সেই মনোজবাবুই আর প্রতিমা তৈরি করতে পারবেন না! পাল পরিবারে এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। একমাত্র ছেলে বাইরে থাকে। দুই মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে। এই অসময়ে প্রৌঢ় এই দম্পতিকে তাহলে দেখবে কে?
মুশকিল আসান করতে এগিয়ে এলেন রেণুকাদেবীই। স্বামীকে ভরসা দিলেন, “কেউ না দেখলে মা দুগ্গাই আমাদের দেখবেন। আমিই বানাব প্রতিমা। তুমি শুধু বসে থেকে আমার ভুল ভ্রান্তিগুলো ধরে দিও। দেখো আমি ঠিক পারব।” এটা যে শুধু কথার কথা নয়, সেটা গত কয়েক বছরে প্রমাণও করে দিয়েছেন রেণুকাদেবী। শুধু এই বছরেই তিনি একাই বানিয়েছেন আটটি দুর্গা ঠাকুর। তা ছাড়া বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের যাবতীয় প্রতিমা, এমনকি মাটির পুতুল, সব কিছুই এখন তৈরি করেন রেণুকাদেবীই।
রেণুকাদেবী বলেন, “এ বছর দুর্গা ঠাকুরের আরও ‘অর্ডার’ এসেছিল। কিন্তু নিতে পারিনি। সংসারের সব কিছু একা সামলে এর বেশি আর পেরে উঠতাম না। এমনিতেই এই দুর্গা ঠাকুর বানাতে শুরু করেছি। সেই ফাল্গুন মাস থেকে ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে গেরস্থালির কিছু কাজ এগিয়ে রাখি। তারপর সারা দিন ধরে সংসার ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলে সমান তালে, ফলে সময় তো একটু বেশি লাগেই। স্বামীর নাম রয়েছে, সেই নাম যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে দিকে নজর রাখি সর্বদা।”
স্বামী মনোজবাবু বলেন, “রেণু যে এত ভাল ছাত্রী, সেটা এর আগে জানতাম না। একবার দেখিয়ে দিলেই ও সেটা মনে রাখতে পারে। ওর অসীম ধৈর্য আর পরিশ্রমের জন্যই তো সংসারটা এখনও টিকে রয়েছে।” রেণুকাদেবী বলেন, “বাবা ঠাকুর বানাতেন, বিয়ের পরে স্বামীকেও এতগুলো বছর ধরে এই কাজ করতে দেখেছি। দেখতে দেখতে অনেক কিছু শিখেও নিয়েছিলাম। তাই প্রথম থেকেই সাহসটা ছিল যে, পারব।” প্রতিবেশী শরদিন্দু স্বর্ণকার বলেন, “এই বয়সে এসে শুরু করেও রেণুকাদেবী পেরেছেন। শুধু তাই নয় তাঁর তৈরি প্রতিমা মণ্ডপে মণ্ডপে প্রশংসিতও হয়। এটা কী কম কথা!’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.