কৌশল নিয়ে প্রশ্ন দলেই
কেজরিওয়ালের নয়া তোপ অস্বস্তি বাড়াল কংগ্রেসের
নিয়া গাঁধীর জামাতা রবার্ট বঢ়রা ও আবাসন সংস্থা ডিএলএফের বিরুদ্ধে ফের এক দফা অভিযোগ করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাঁর দাবি, হরিয়ানার ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা সরকার কার্যত ডিএলএফের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। ওই আবাসন সংস্থার সঙ্গে যোগসাজস করে সেখানকার কংগ্রেস সরকার হরিয়ানার কৃষকদের ঠকিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রবার্ট বঢরা ও ডিএলএফের মধ্যে অশুভ আঁতাতের অভিযোগ করে গত সপ্তাহে প্রথম তোপটি দেগেছিলেন অণ্ণা হজারের একদা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী কেজরিওয়াল ও প্রশান্ত ভূষণ। তাঁদের দাবি, সুদ ছাড়াই রবার্টকে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ডিএলএফ। তাঁকে অনেক কম দামে ফ্ল্যাটও বিক্রি করেছে তারা। হরিয়ানা, দিল্লি ও রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে ডিএলএফ রবার্টকে সাহায্য করে থাকতে পারে বলে দাবি করেছিলেন তাঁরা।
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে কেজরিওয়াল। ছবি: এএফপি
যথারীতি এই অভিযোগ উড়িয়ে রবার্ট এবং ডিএলএফ-এর তরফে আজও দাবি করা হয়, তাঁদের মধ্যে কোনও রকম বেআইনি লেনদেন হয়নি। ন্যায্য ও আইনসঙ্গত ভাবেই তাঁরা ব্যবসা করছেন। প্রথম থেকেই রবার্টের ঢাল হয়ে আসরে নেমেছেন কংগ্রেস ও সরকারের একাধিক শীর্ষ সারির নেতা-মন্ত্রী। গত কাল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, রবার্ট এবং ডিএলএফের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। শুধু মাত্র কারও আশঙ্কা বা ধারণার ভিত্তিতে তদন্ত করা যায় না। আজ কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি দাবি করেন, তাঁর মন্ত্রক তদন্ত করে দেখেছে, রবার্টের ছ’টি সংস্থা কোনও অন্যায্য কাজ করেনি।
রবার্টের হয়ে কংগ্রেস ও সরকার এ ভাবে সওয়াল করতেই আজ ফের একগুচ্ছ নতুন অভিযোগ তোলেন কেজরিওয়াল। তাঁর দাবি, হরিয়ানায় পঞ্চায়েত, হরিয়ানা নগরোন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (হুডা) জমিও ডিএলএফকে দেওয়া হয়েছে। এমনকী নিয়ম ভেঙে বনাঞ্চলের জমিও ডিএলএফ-কে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সংস্থা যাতে কম দামে জমি পায়, তা দেখতে উদ্যোগী হয়েছে হরিয়ানা সরকার। এ জন্য জমি সংক্রান্ত বিধিও বদল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে হরিয়ানা সরকারকে ভর্ৎসনা পর্যন্ত করেছে রাজ্যের উচ্চ আদালত। আদালতের সেই রায়ের প্রতিলিপিও আজ সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরেন কেজরিওয়াল। সেই সঙ্গে রবার্টের সংস্থার ব্যালেন্স শিটে একাধিক অসঙ্গতি নিয়ে অভিযোগ করেন।
কেজরিওয়াল-প্রশান্ত ভূষণদের দাবি, তাঁদের পেশ করা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আয়কর বিভাগ রবার্টের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতেই পারে। একই সঙ্গে তাঁদের কটাক্ষ, “দেশের অর্থমন্ত্রীই যদি বঢ়রাদের হয়ে সওয়াল করেন, তা হলে কোন আয়কর অফিসার তদন্তে নামবেন?”
কেজরিওয়ালদের এই নয়া তোপের মুখে পড়ে অস্বস্তি বেড়েছে কংগ্রেসের। কেন না গোটা ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে খোদ গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধেই। দলের একাংশের মতে, শুরুতেই ভুল কৌশলে কেজরিওয়ালদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস। রবার্টের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস গোড়ায় নীরব থাকতে পারত। শুধু এটুকুই বলা যেত যে, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁরাই জবাব দেবেন। অতীতে নরসিংহ রাও বা নটবর সিংহের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ উঠেছিল, তখন কংগ্রেস কৌশলগত দূরত্ব রেখেছিল। এ বার তা না করেই ভুল হয়েছে। আর এখন একবার রবার্টের ঢাল হওয়ার পর তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলেই কংগ্রেসের ওই নেতাদের মত। তাঁদের যুক্তি, কারণ আইনত হয়তো রবার্টের বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো নিয়ে একটা নৈতিক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, যে ভাবে রবার্টের সংস্থাকে ডিএলএফ টাকা দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অডিটররাও। ডিএলএফ ওই টাকা দেওয়াকে ব্যবসায়িক অগ্রিম বলে দাবি করলেও যুক্তির নিরিখে তা মানতে নারাজ হিসেব পরীক্ষকরা। তাঁদের অভিযোগ, ডিএলএফের মতো বড় সংস্থা বিশেষ কোনও কারণ না থাকলে রবার্টকে এ ভাবে টাকা দেবে কেন?
কেজরিওয়ালদের তোলা নতুন অভিযোগ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ অলভি আজ বলেন, “সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য কেজরিওয়ালরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।” রশিদের যুক্তি, “কেন কেজরিওয়ালরা সরকারের কাছে দরখাস্ত দিয়ে তদন্তের দাবি করছে না? কেনই বা তাঁরা আদালতে যাচ্ছেন না?” যদিও রবার্ট বা কংগ্রেস কেন কেজরিওয়ালদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করছেন না, এই প্রশ্নের জবাব রশিদ এড়িয়ে যান। সূত্রের খবর, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন কৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।
কেজরিওয়ালরা কংগ্রেসকে এ ভাবে কোণঠাসা করায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি প্রধান বিরোধী বিজেপি। তবে কেজরিওয়ালের পক্ষ নিয়ে খুব বেশি গলা ফাটাতেও নারাজ তারা। কারণ, কেজরিওয়াল প্রশ্নে ইতিমধ্যেই একবার হাত পুড়িয়েছে বিজেপি। গত কাল বিজেপি-র মঞ্চে কেজরিওয়ালকে স্বাগত জানিয়েছিলেন দলীয় নেতা বিজয় গোয়েল। সেই মঞ্চ থেকেই কেজরিওয়াল বিজেপিকে আক্রমণ করেন। ক্ষুব্ধ গোয়েলের পাল্টা অভিযোগ, কেজরিওয়াল আসলে কংগ্রেসের এজেন্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.