নিস্কোর পুনরুজ্জীবন ঠান্ডাঘরে
১ টাকায় জমি নয় সেলকে, সিদ্ধান্ত রাজ্যের
হাজার কোটি টাকার জমি এক টাকায় দেওয়া যাবে না কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেস্রেফ এই যুক্তিতে ভেস্তে গেল বেলুড়ের ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির (নিস্কো) পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা।
রাষ্ট্রায়ত্ত স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (সেল)-এর সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর আলোচনা চালিয়ে ২০১১ সালের গোড়ায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার নিস্কোর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের খুঁটিনাটি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সেলের হাতে নিস্কোকে তুলে দেওয়া হবে না। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুনরুজ্জীবনের শর্ত হিসাবে নিস্কোর প্রায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি মাত্র এক টাকার বিনিময়ে সেলের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বাম সরকার।
এটা মানা যায় না! অন্য সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিস্কোর পুনরুজ্জীবনের জন্য নতুন ভাবে চেষ্টা চালানো হবে।”
সেই সংস্থা সরকারি না বেসরকারি? পার্থবাবু জবাব দেননি। শিল্প দফতর সূত্রের খবর, দু-একটি বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতাশ নিস্কো কর্তৃপক্ষ। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর কমল দাশগুপ্ত বলেন, “পাঁচ বছর ধরে সেল-এর সঙ্গে আলোচনা করে নিস্কোর আধুনিকীকরণ ও সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা কার্যত পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ।”
১৯৩৪ সালে বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয় নিস্কো। পরে রাজ্য সরকার এটি অধিগ্রহণ করে। সংস্থাটি বহু বছর ধরে রুগ্ণ। মিনি স্টিল প্ল্যান্টে উৎপাদন প্রায় হয় না বললেই চলে। এক সময়ে এখানে ৪০০ স্থায়ী শ্রমিক কাজ করতেন। ২০০৬ সালে রুগ্ণ সংস্থা পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হয় সংস্থাটিকে। প্রথম পর্যায়ে ডিএফআইডি-র টাকায় ২০০ শ্রমিককে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে কারখানার পুনরুজ্জীবন করার কথা।
এই সময়েই মঞ্চে প্রবেশ সেলের।
তারা হাওড়ায় একটি রোলিং মিল লিজ নিতে চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। নিস্কো কর্তৃপক্ষের আবেদনে সেল কর্তারা কারখানা পরিদর্শনে আসেন। সব দিক খতিয়ে দেখে তাঁরা জানিয়ে দেন, লিজ নয়, সরাসরি নিস্কোকে অধিগ্রহণ করা হবে। সেল পরিচালন পর্ষদে প্রস্তাবটি অনুমোদিতও হয়। সেলের তরফ থেকে প্রস্তাবটি লিখিত ভাবে রাজ্য শিল্প পুনর্গঠন দফতরকে দেওয়া হয়। বাম সরকার প্রস্তাবে রাজি হয়।
সেলের অধিগ্রহণের শর্ত ছিল, নিস্কোর মালিকানায় থাকা সব জমি তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাছে নিস্কোর যা দেনা আছে, তা মকুব করতে হবে। কোনও শ্রমিক-কর্মচারিকে ছাঁটাই করা যাবে না বলে রাজ্য পাল্টা সরকার পাল্টা শর্ত দেয়। দু’পক্ষে ঐকমত্য হয়। নিস্কোর মালিকানায় রয়েছে মোট ৯৪ একর জমি। সেই জমি ১ টাকার বিনিময়ে সেলের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। বাম সরকারের যুক্তি ছিল, সেল যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, তাই তাদের হাত ধরে কারখানাটির পুনরুজ্জীবন হলে শ্রমিকদের চাকরি বাঁচবে, এলাকার উন্নয়ন হবে। তাই ১ টাকার বিনিময়ে জমি তুলে দেওয়ার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।
শুধু নিস্কো অধিগ্রহণও নয়, এলাকার উন্নয়নেও রাজি হয়েছিল সেল। নিস্কোর কারখানা থেকে বালির চামরাইলের কাছে মুম্বই রোড পর্যন্ত পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা তৈরির প্রস্তাব রাজ্য সরকারকে দেয় সেল। রাস্তা তৈরি এবং এর জন্য জমি অধিগ্রহণের খরচ বাবদ টাকাও দিতে রাজি হয়েছিল তারা। এ ছাড়া ডানকুনি-শালিমার রেলপথের উপরে একটি লেভেলক্রসিং তৈরির টাকা দিতেও রাজি হন সেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে নিস্কোয় শ্রমিক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৩৯। অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৫০ জন। সকলকে পুনর্বহাল করা হবে বলেও আশ্বাস দেয় সেল।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিধানসভার শিল্প সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি নিস্কো পরিদর্শন করে। সেলের সঙ্গে তৎকালীন রাজ্য সরকারের প্রাথমিক চুক্তির খসড়াটিও পর্যালোচনা করে রাজ্য শিল্প পুনর্গঠন দফতর। তার পরেই রাজ্য সরকার জমির বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। পার্থবাবুর মন্তব্য, “মাত্র অল্প কয়েক জন শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরির বিনিময়ে আমরা হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি কারও হাতে তুলে দিতে পারব না!”
একই সঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি, “নিস্কোর কোনও শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না। একাধিক সংস্থা এর পুনরুজ্জীবনে আগ্রহ দেখিয়েছে। রাজ্যের স্বার্থ বজায় রেখে সেই সব সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কী ভাবে এগোনো যায়, তা দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.