নিশীথ সরণীর রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো
প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে রায়গঞ্জের নিশীথ সরণীর রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো এ বার ১৫৫ বছরে পড়বে। সিপাহী বিদ্রোহের পরের বছর ওই পুজোর সূচনা। সেই থেকে বংশ পরম্পরায়ের রীতি রক্ষা করে চলছে আয়োজন। রায়চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় দেশীয় সিপাহীদের অনেকে তাঁদের বাড়িতে আত্মগোপন করে। ফিরে যাওয়ার সময় তাঁরা একটি তলোয়ার ফেলে যায়। পরে পরিবারের এক সদস্য দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই তলোয়ারকে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে একটি প্রতিমা তৈরি করে বাসিন্দাদের মঙ্গলকামনায় পুজোর ব্যবস্থা করেন। সেটা ছিল ১৮৫৮ সাল। সেই থেকে একই কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি করে পুজোর আয়োজন চলছে। পুরোহিত থেকে ঢাকি প্রত্যেকে বংশ পরম্পরায় পুজোয় অংশগ্রহণ করছেন। মহালয়ার পরদিন থেকে পুজো শুরু হয় এখানে। ওইদিন কুলিক নদীতে কলা বউ স্নান করিয়ে মন্ডপে মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথমা থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত শুকনো খাবার দিয়ে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত থাকে অন্ন ভোগের ব্যবস্থা। প্রাচীনকালে ওই পুজোয় নবমীতে মহিষ বলি দেওয়া হত। এখন সেটা বন্ধ আছে। তবে পারিবারিক পুজো হলেও ঐতিহ্যের টানে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। পরিবারের অন্যতম সদস্য তথা আইনজীবী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, “দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়রা আসেন। এ ছাড়াও তো স্থানীয় বাসিন্দারা আছেন। সব মিলিয়ে খুব আনন্দ হয়।” শুধু পুজো দেখাই নয়, সেখানে প্রত্যেকে যেন ইতিহাসকে খুঁজে বেড়ান। স্মরণ করেন ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের যোদ্ধাদের। প্রতিদিন পুজোর শেষে শহরের কয়েকশো বাসিন্দা ভোগের প্রসাদের জন্য ভিড় করেন। রায়চৌধুরী পরিবারের তরফে দুঃস্থ বাসিন্দাদের পোশাক বিলি করা হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে দশমীর পুজোর শেষে পুরোহিতরা মঙ্গলঘট কুলিক নদীতে ভাসিয়ে দেন। বিকেলে পরিবারের সদস্যরা পুঁটিমাছ ও দই দেখে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে কাঠামো ফিরিয়ে আনেন।

তথ্য: গৌর আচার্য।
রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো। রায়গঞ্জে তরুণ দেবনাথের ছবি।

পাহাড়পুরের রাজবাড়ির পুজো
প্রাচীন রীতি মেনে আজ, মঙ্গলবার কৃষ্ণনবমী তিথি থেকে মালদহের চাঁচলের পাহাড়পুরের রাজবাড়ির পুজো শুরু হচ্ছে। তিনশো বছরের বেশি সময় থেকে ওই প্রথা চলছে। এ দিন পুজোর পর থেকে প্রতিদিন বিকালে বসবে চন্ডী পাঠের আসর। চলবে দেবী বিসর্জনের দিন পর্যন্ত। চাঁচল থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুর চাঁচল রাজবাড়ির ওই পুজো বর্তমানে চন্ডীমন্ডপের পুজো নামে বেশি পরিচিত। পুজোর আয়োজক ট্রাস্টি বোর্ড। বাজেট ৭ হাজার টাকা। জাঁকজমক বা আড়ম্বরের বালাই নেই। রয়েছে ইতিহাসের সোঁদা গন্ধ। ঐতিহ্য ধরে রাখার আবেগ। নিষ্ঠা, ভক্তি, ঐতিহ্যের ওই পুজোর কয়েকটা দিন এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেন হারানো দিনের খোঁজে। ট্রাস্টি বোর্ডের স্থানীয় পর্যবেক্ষক পিনাকীজয় ভট্টাচার্য বলেন, “সামান্য বাজেটে আড়ম্বর সম্ভব হয় না। স্থানীয় বাসিন্দারা আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেন। সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রত্যেকে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে।” ট্রাস্টি বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ির উদ্যোগে পুজো শুরু হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের সেকসাতন গ্রামে। তা পাহাড়পুরে স্থানান্তর হয়। দেবী এখানে চতুর্ভুজা সিংহবাহিনী। চণ্ডীমণ্ডপের উল্টো দিকে রয়েছে সতীঘাট। রাজ পরিবারের এক মহিলা সেখানে স্বামীর চিতায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে পূর্বপুরুষরা সতীঘাট থেকে আষ্টধাতুর তৈরি দেবী প্রতিমা উদ্ধার করেন। রাজবাড়ি লাগোয়া ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রতিমা হারিয়ে যায়। পরে একই আদলে প্রতিমা তৈরি করা হয়। প্রথা মেনে সপ্তমীর ভোরে ঠাকুরবাড়ি থেকে ওই প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়পুরে। শোভাযাত্রা করে ধাতব প্রতিমা এনে বসানো হয় মাটির প্রতিমার পাশে। মহাঅষ্টমীতে কুমারী পুজো পাহাড়পুর চন্ডীমন্ডপের অন্যতম আকর্ষণ। বিসর্জনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা হ্যারিকেনের আলো জ্বেলে দেবীকে বিদায় জানান। বাসিন্দারা জানান, জাঁকজমক না থাকলেও রাজবাড়ির পুজো বলে আবেগ জড়িয়ে আছে। রয়েছে বিশ্বাস, পাহাড়পুর চণ্ডীমণ্ডপের দেবী তাঁদের সুরক্ষিত রেখেছেন। তাই পুজোর ক’দিন এক বারের জন্য মণ্ডপে যাবেন না সেটা আজও কেউ ভাবতে পারেন না।

তথ্য: বাপি মজুমদার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.