আলোক-রেখা
ত্বক ক্যানসার সহজে ধরতে দিশা বাঙালির
লেজার রশ্মির সাহায্যে চটজলদি ত্বকের ক্যানসার নির্ণয়। এবং যন্ত্রণাহীন প্রক্রিয়ায়!
এক বাঙালির হাত ধরে এমনই অভিনব প্রযুক্তিপ্রাপ্তির দাবি জানাল আমেরিকার এক কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা জানিয়েছে, আবিষ্কৃত প্রযুক্তিটি পেটেন্ট পেয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে সেটি নিয়ে কাজ করার জন্য এক বাণিজ্যিক সংস্থাকে লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে।
ওই বাঙালি প্রযুক্তিবিদ হলেন ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র মেকানিক্যাল ও এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক কুণাল মিত্র। শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনী কুণালবাবু বলছেন, “ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত করতে এখন বায়পসি করতে হয়। তার ফল জানতে সময় লাগে, প্রক্রিয়াটি বেদনাদায়কও বটে। লেজার-প্রযুক্তিতে সেই সমস্যা নেই। লেজার-তরঙ্গ কোষের ক্ষতিও করে না।” কুণালবাবু জানিয়েছেন, ইঁদুরের উপরে সফল পরীক্ষার পরে এখন তাঁদের লক্ষ্য মানবশরীরে প্রযুক্তিটির প্রয়োগ।
ত্বকের ক্যানসার নির্ণয়ে লেজার-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নানা দেশে নানা কাজ হচ্ছে। কিছু প্রযুক্তি পেটেন্ট পেয়ে গিয়েছে। সেগুলোর তুলনায় কুণালবাবুরটি অনেক বেশি কার্যকর বলে তাঁর প্রতিষ্ঠানের দাবি। ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউটের ডিন ফেড্রিক হ্যামের কথায়, “এটা বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে।” এটির বাণিজ্যকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফে ব্রায়ান জে অ্যান্ড্রিউয়ের মন্তব্য, “চামড়ায় ক্যানসার হয়েছে কি না জানতে বেশ ক’দিন অপেক্ষা করতে হয়। দুশ্চিন্তায় মানসিক চাপ বেড়ে যায়। কুণাল মিত্রের প্রযুক্তি এর সুরাহার পথ দেখাতে পারে।” কুণালবাবুর কাজের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাপ্লায়েড অপটিকস’-এ। একটি ‘জার্নাল অফ ন্যানো-টেকনোলজি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’-এর নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। তৃতীয়টি গৃহীত হয়েছে মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রকাশের জন্য। ওঁর আবিষ্কারটা কী?
কুণালবাবুর দাবি: প্রাণীর শরীরে লেজার-তরঙ্গ প্রবেশ করালে স্বাভাবিক কোষ থেকে যে সঙ্কেত আসে, টিউমার থাকলে তার চেয়ে আলাদা সঙ্কেত পৌঁছয়। ক্যানসার নির্ণয়ে এটাই তাঁর চাবিকাঠি। এই কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন শর্ট পালস লেজার-তরঙ্গ, যা অন্য যে কোনও লেজার-তরঙ্গের তুলনায় ভাল ফল দেয়। কী ভাবে?
কুণালবাবুর ব্যাখ্যা, “শর্ট পালস লেজার ওয়েভ খুব তাড়াতাড়ি কোষের গভীরে ঢোকে। কোষ থেকে সঙ্কেতও আসে দ্রুত। তাই দু’ধরনের কোষ থেকে আসা তরঙ্গের ফারাক সহজে ধরা পড়ে। তরঙ্গ দেখে বলে দিতে পারি, সঙ্কেতের উৎস কোষ স্বাভাবিক, নাকি টিউমার কোষ।” টিউমার হলে সঙ্কেতরেখা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। “এ দিকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে কী রকম সঙ্কেত আসবে, আর সাধারণ টিউমারের ক্ষেত্রে কী রকম, তা-ও নির্দিষ্ট। লেজার-সঙ্কেতের সেই তুলনামূলক বিচারের নিরিখেই বলে দেওয়া সম্ভব, টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট কি না।” বলেন কুণালবাবু।
অর্থাৎ ত্বকের ক্যানসার-আক্রান্ত কোষ দ্রুত ধরা পড়ে চিকিৎসকের নজর-জালে। কুণালবাবু এ-ও মনে করেন, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের টিউমার থেকে কী ধরনের লেজার-সঙ্কেত মিলছে, তা নিয়ে একটা তথ্যপঞ্জি তৈরি করা যেতে পারে। তাঁর কথায়, “ক্যানসারের কোন পর্যায়ে কী ধরনের সঙ্কেত আসে, তথ্যপঞ্জি থেকে তা পরিষ্কার বোঝা যাবে। তাতে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় বিস্তর সুবিধা হবে।”
পাশাপাশি এই প্রযুক্তির সাহায্যে শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যানসার কোষ শনাক্ত করা যায় কি না, সে নিয়েও গবেষণা চান ফ্লোরিডানিবাসী বঙ্গসন্তান। সবার আগে চান মানবশরীরে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে। “আমরা পরীক্ষা চালিয়েছি ইঁদুরের উপরে। তাতে সফল হয়েছি। এখন মানুষের উপরে পরীক্ষা করতে হবে। যে সংস্থাটি আমাদের প্রযুক্তি বাণিজ্যকরণ করবে, তাদের সঙ্গে মিলে আমরা আরও বড় পরীক্ষায় যাচ্ছি। আশা করি, উত্তীর্ণ হব।”
কুণালবাবুদের সাফল্যের আশায় রয়েছে চিকিৎসকমহলও। কলকাতার ক্যানসার-চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলছেন, “লেজার পদ্ধতিতে অপারেশনের কথা শুনেছি। ক্যানসার নির্ণয়ের কথা কানে আসিনি। অন্তত এ দেশে তো নয়ই।” তাঁর আশা, এই প্রযুক্তিতে ত্বকের মতো দেহের অন্যান্য অংশেও ক্যানসার শনাক্ত করা সহজ হবে। ত্বক ক্যানসারের রোগী মৃণাল সেনগুপ্ত বলেন, “বায়পসি করাতে খুব কষ্ট হয়। তার পরে রিপোর্ট এত দেরিতে আসে যে, মাঝের সময়টা উদ্বেগেই শেষ হয়ে যেতে হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.