নিজস্ব সংবাদদাতা • গাইগাটা |
গাছের মরা ডাল কাটার পাশাপাশি জীবন্ত ডালও বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রির অভিযোগে সংগঠন তৈরি করে প্রতিবাদে নামলেন গাইঘাটার মানুষ।
সম্প্রতি ‘সবুজ বাঁচাও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ নামে ওই সংগঠনের তরফে পথসভা, মিছিলও করা হয়েছে। বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে সোমবার তাঁরা স্মারকলিপিও দিয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি মানবেন্দ্র গুহ বলেন, “বেআইনি ভাবে জীবন্ত ডাল কাটা বন্ধ করতে মানুষজন যাতে সচেতন হন সেজন্য মাইক প্রচাক করা হবে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানা এলাকায় যশোহর রোডের দু’ধারে বহু প্রাচীন গাছ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাঠ চোরেদের চক্র এই সব এলাকায় সক্রিয়। তারা প্রকাশ্যেই গাছের ডাল কেটে নিয়ে যায়। এমন গাছ চোরদের দৌরাত্ম্যেই গাছের কাটা ডাল একটি অটোর উপরে পড়ায় মৃত্যু হয় চারজন মহিলার। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বনগাঁর এক সাংস্কৃতিক কর্মী বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়। ওই ঘটনার অবশ্য দিন কয়েক আগে একটি ম্যাটাডরের উপরে গাছের মরা ডাল ভেঙে পড়লে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পর পর দু’টি ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বলে জেলা প্রশাসন। বনদফতর, পুলিশ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যৌথভাবে সমীক্ষা করে যশোহর রোডের ধারে বিপজ্জনক গাছ ও মরা ডাল চিহ্নিত করে তা কাটার ব্যবস্থা করা হবে। |
বনগাঁ মহকুমা আদালতের আইনজাবীরা শহরে মিছিল করে এ ব্যাপারে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। সমীক্ষার পরে মরা ডাল কাটার কাজও শুরু হয়। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা থানা এলাকায় ৩৩৩টি গাছ থেকে ৩৪৬টি শুকনো ডাল ও বিপজ্জনক ১৬টি মরা ডাল কাটার কাজ হচ্ছিল। ধমর্পুর বাজার, গোপলপুর বাজার ও গাইঘাটা বাজার এলাকায় গাছ কাটার কাজ শুরু হয়। মানবেন্দ্রবাবু বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয়, পঞ্চায়েত সমিতি যে ব্যক্তিকে কাটার দায়িত্ব দিয়েছে তিনি শুকনো ডাল কাটার পাশাপাশি অনেক জীবন্ত ডালও কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।”
এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “শুক্রবার ফোনে অভিযোগ পাওয়ার পরে আপাচচ গাছ বা ডাল কাটার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গাছ কাটার ব্যাপারে প্রথমে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, তাঁদের পরিকাঠামো নেই। তারপর পঞ্চায়েত সমিতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”
‘সবুজ বাঁচাও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’র পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে, গাছের ডাল কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার যে সব জায়গায় ডাল বিক্রি করেছেন তা সরকারি হেফাজতে নিতে হবে। জনস্বার্থে গাছের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রসঙ্গত, গাছের কাটা ডাল অটোর উপরে পড়ে চারজনের মৃত্যুর ঘটনার পরে জেলার পদস্থ পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তিনজন কাঠচোরকে গ্রেফতারও করা হয়। ওই পর্যন্তই। অভিযোগ, তারপর নজরদারি কমে গিয়েছে। সেই সুযোগে ফের কাঠচোরদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
বিডিও পার্থ ভৌমিক বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে বন দফতরকে বলা হয়েছে ঘটনার তদন্ত করতে। তদন্ত রিপোর্ট জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং মহকুমাশাসকের কাছে জমা দেওয়া হবে। তাঁরাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।” |