স্বপ্নাদেশে গড়ে ওঠা
জনপদে পুজো পান দেবী
কচালায় চামুণ্ডা মূর্তি। দুর্গাপুজোর চার দিন এই চামুণ্ডা মূর্তির আরাধনায় মেতে ওঠেন হাওড়ার জয়পুরের অমরাগড়ির মানুষজন। পুজোর উদ্যোক্তা অমরাগড়ি গ্রামের রায় পরিবার। ২৯৩ বছরের এই পুজোর আনন্দ পারিবারিক গণ্ডির পরিসর ছাড়িয়ে প্রসারিত হয় সারা গ্রামে। বড়দের সঙ্গে গ্রামে কচিকাঁচারা ভিড় করে পুজো দেখতে।
কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন এই দুর্গাপুজো? রায় পরিবার সূত্রে জানা গেল, পরিবারের পূর্বপুরুষ শান্তি রায় ছিলেন বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসা সূত্রেই বহু দেশে ভ্রমণ করতেন। বাণিজ্যের কারণে শান্তিবাবু এক দিন অমরাগড়ি গ্রামে দামোদরের তীরে রাত্রিযাপনের জন্য নৌকা বাঁধেন। রায় পরিবারের দাবি, ওই রাতে শান্তিবাবুকে মা গজলক্ষ্মীদেবী স্বপ্নাদেশ দেন, “এই গ্রামে আমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর।”
স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরে তিনি এই গ্রামে গজলক্ষ্মীমাতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামটি ছিল কার্যত জনমানবশূন্য। শান্তিবাবু বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা সম্প্রদায়ের মানুষজনকে আমন্ত্রণ করে এনে জনবসতি গড়ে তোলেন। নির্জন এই জায়গা ধীরে ধীরে পরিণত হয় একটি জনবহুল বর্ধিষ্ণু গ্রামে। গ্রামের মানুষের কথা ভেবেই রায় পরিবার গজলক্ষ্মীমাতা ছাড়াও চালু করেন বিভিন্ন পুজো ও উৎসব। তার মধ্যে রয়েছে রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী উৎসব, রাসযাত্রা, চৈত্র সংক্রান্তি, নববর্ষ উৎসব, ঝাঁপ ও গাজন, শিবরাত্রি পুজো, চাঁচড় ও দোল এবং দুর্গাপুজো। পরবর্তীকালে দুর্গাপুজোই জাঁকজমক এবং পরিসরের দিক দিয়ে সেরা হয়ে ওঠে।
এই দুর্গাপুজো শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে। ওই দিন থেকেই শুরু হয় নিত্যদিনের সন্ধ্যারতি। রায় পরিবারের এই পুজোকে কেন্দ্র করে চালু আছে অনেক কিংবদন্তী। শোনা যায়, সন্ধিপুজোর সময়ে মোষ বলি দেওয়া হত। এক বার সন্ধিপুজোর দিন মোষ বলি দেওয়ার জন্য কামার বাড়ি থেকে বেরোন। সে সময়ে এলাকাটি ছিল কার্যত জঙ্গল। পুজোবাড়িতে আসার পথে কামার রাস্তায় একটি বাঘকে দেখতে পান। ভয়ে দ্রুত একটি গাছে উঠে পড়েন। এ দিকে সন্ধিপুজোর সময় এগিয়ে আসলেও নীচে বাঘ বসে থাকায় কামার গাছের উপর থেকে নামতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে তিনি মা দুর্গার নাম করে বাঘের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে বাঘেরই মুণ্ডচ্ছেদ করেন। কিন্তু সেই রাত্রেই তিনি দেবীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাঁকে বলেন, “কী রে আমার বাহনকে মেরে ফেললি! তোরা আর কোনও দিন বলি দিবি না।” পুজো পরিচালনা করার জন্য রয়েছে রায় পরিবারেরই অধীন ‘শ্রীশ্রী গজলক্ষ্মীমাতা এস্টেট’। এই এস্টেটের অন্যতম কর্ণধার গৌরাঙ্গমোহন রায় বললেন, “কামারকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেওয়ার পর থেকেই আমাদের পুজোর বলি বন্ধ হয়ে যায়”
শুধু বলিই বন্ধ হয়েছে তা নয়, পুজোর সেই পুরনো জাঁকও আর নেই। সে কথা স্বীকার করে এস্টেটের আরও এক কর্ণধার সৌরভ রায় বললেন, “বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তার ফলেই পুজোর বেশ জৌলুস কিছুটা কমেছে।”
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও একটি বছরের জন্য এই পুজোর আয়োজনে ফাঁক পড়েনি। ফলে প্রাচীন এই পুজো গ্রামবাসীদের কাছে পরিণত হয়েছে ঐতিহ্য হিসাবে। এটিই গ্রামে একমাত্র দুর্গাপুজো। সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে সম্বল করেই বছরের পর বছর গ্রামবাসীদের আনন্দ দিয়ে আসছে রায় পরিবারের এই দুর্গাপুজো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.