চোলাই মদের বিক্রি ঠেকাতে গত এক বছরে কড়াকড়ি করেছে রাজ্য সরকার। তার জেরে বৈধ দেশি মদের বিক্রি বেড়েছে। বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। পরিকাঠামোর অভাব ঘুচিয়ে নজরদারি বাড়ালে দেশি মদ থেকে আরও রাজস্ব আদায় হতে পারে বলে দাবি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের। সেই লক্ষ্যে শনিবার রাজস্ব বিভাগ ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত হল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। পাশাপাশি, জমি বাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে
বিভাগের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
২০০৯ সালে হাইড রোডে ৩০-এর বেশি এবং গত বছর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সংগ্রামপুরে ২০০-র বেশি মানুষ বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে মারা যান। এর পরেই বেআইনি মদের ঠেক ভাঙার দিকে নজর দেয় পুলিশ। সেই কাজে সাফল্য এসেছে বলেই দাবি সরকারের। তাদের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর প্রতি মাসে গড়ে দেশি মদ বিক্রি হত ৫২ লক্ষ বোতল। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮৪ লক্ষ বোতল। ফলে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। গত বছর এপ্রিল থেকে অগস্ট অবধি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৭৯.৪২ কোটি
টাকা। চলতি বছর একই সময় তা দাঁড়িয়েছে ৯৮০.৪৮ কোটি টাকা।
সরকারের অবশ্য দাবি, বাস্তবে দেশি মদের বিক্রি আরও বেশি। কিন্তু পরিকাঠামো এবং নজরদারির অভাবে তা ধরা যাচ্ছে না। ফাঁকি পড়ছে রাজস্ব। সেই কারণেই এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে জেলা, রেঞ্জ ও সার্কল স্তরে দফতরের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কনস্টেবল, এএসআই এবং এসআই-সহ বেশ কিছু শূন্য পদ পূরণ করে ও অতিরিক্ত কর্মী নিয়ে নজরদারির অভাব পূরণ করতে চাইছে রাজ্য। চলিত অর্থবর্ষের এখনও সাত মাস বাকি। |
|
দফতর |
ছিল |
হবে |
জেলা |
২১ |
২৪ |
রেঞ্জ |
৬৫ |
৮৭ |
সার্কেল |
১৫৯ |
২১৫ |
|
কর্মী |
শূন্য পদ |
নেওয়া হবে |
কনস্টেবল |
১০০০ |
৪৬২ |
এএসআই |
১৫৭ |
১৩৭ |
এসআই |
৮০ |
৮৮ |
এ ছাড়া ৩ অতিরিক্ত আবগারি কমিশনার-সহ মোট ৩৩ জন অফিসার, ২ জন
সিস্টেম
অ্যানালিস্ট এবং ১১২ জন অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ হবে। |
|
পুনর্গঠিত কাঠামো নিয়ে রাজস্ব আদায়ে জোর দিলে গত বছরের তুলনায় আয় ৪৯.৬২ শতাংশ বাড়বে বলে অর্থ দফতরের ধারণা।
এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, “আবগারি দফতরের পরিকাঠামো শেষ বার পুনর্গঠন হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। সরকার মদের দাম না-বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াবার পরিকল্পনা করেছে। সেই কারণেই বিভাগগুলির খোলনলচে ঢেলে সাজা হল।” এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মহলের একটা বড় অংশ অবশ্য সরকারের দাবি সম্পর্কে সন্দিহান। তাদের মতে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে গেলে মদের দোকানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাতে চোলাই মদ খাওয়ার প্রবণতাও কমবে। কিন্তু কী আগের বাম সরকার, কী এখনকার তৃণমূল সরকার, কেউই এই প্রশ্নে ছুঁৎমার্গ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নজরদারি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর যে পরিকল্পনা সম্পর্কে এই মহলের প্রশ্ন, পরিকাঠামো তৈরি ও কর্মী নিয়োগে যে খরচ হবে তার তুলনায় আয় কতটা বাড়বে? অর্থমন্ত্রী মাত্র ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বাড়তি
খরচের কথা বললেও তার বাস্তবতা নিয়ে
তাঁরা সংশয়ী।
এ দিন জমি বাড়ি রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প ডিউটি বিভাগের পুনর্গঠনেরও প্রস্তাব পাশ করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। এই বিভাগে শেষ বার পুনর্গঠন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। অমিতবাবু জানান, ১০ হাজার দলিল জমা রয়েছে এমন ১৫টি বড় রেজিস্ট্রেশন দফতরকে ভেঙে ছোট করা হবে। নতুন দফতরগুলিতে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ হাজার দলিল নিয়ে কাজ করার ঊর্ধ্বসীমা রাখা হবে। এর সঙ্গে এ বার তিনটি নজরদারি শাখাও খোলা হচ্ছে। এগুলি হবে কলকাতা ও শহরতলির জন্য প্রেসিডেন্সি ডিভিশন, দক্ষিণবঙ্গের জন্য বর্ধমান এবং উত্তরবঙ্গের জন্য জলপাইগুড়ি ডিভিশন।
অমিতবাবু আরও জানান, এর পাশাপাশি একটি গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ শাখাও তৈরি করা হচ্ছে। এ সবের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। যার জেরে গত বছরের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে তাঁর ধারণা। |
৩৩ ভুয়ো সংস্থাও ঋণ পেয়েছে শিল্প গড়তে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের অনাদায়ী ঋণের টাকা আদায় করতে গিয়ে ৩৩টি ভুয়ো সংস্থার হদিস মিলল। বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নিগমের কাছ থেকে মোটা টাকা ঋণ নিয়েছিল এই সব সংস্থা। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার মহাকরণে এই খবর জানিয়ে বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে শিল্প করার জন্য কাদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ওই ভুয়ো সংস্থাগুলিকে খুঁজে বরে করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নিগম সূত্রে খবর, ১৯৮৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭৬টি সংস্থাকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫০০ কোটি। এই টাকা আদায় করতে সম্প্রতি সংস্থাগুলির কাছে নোটিস পাঠাতে শুরু করে নিগম। আর তাতেই উঠে মিলেছে ওই সব ভুয়ো সংস্থার হদিশ। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এই সংস্থাগুলি কী ভাবে ঋণ পেয়েছিল তা যাচাই করা হবে। কেন ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। ভুয়ো সংস্থাগুলি সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।” শিল্প প্রকল্পের জন্য দু’ধরনের ঋণ দেয় নিগম। একটি ‘টার্ম লোন’, অন্যটি ‘সেল্স ট্যাক্স লোন’। নিগমের এক মুখপাত্র জানান, সাধারণত প্রকল্পের মোট খরচের অর্ধেক টাকা ঋণ হিসাবে দেয় নিগম। তথ্যপ্রযুক্তি, ফুড পার্কের মতো প্রকল্প হলে সর্বাধিক পাঁচ বছরের মধ্যে ঋণের টাকা শোধ করার কথা। |