ভর্তুকির ভারে নাকাল পরিবহণে সংস্কার
র্থিক ভাবে বেহাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এ বার রাজ্য পরিবহণের পরিকাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের পথে নামতে চলেছে। লাগাতার লোকসানের ধাক্কায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য, সরকারি পরিবহণে বিপুল ভর্তুকির বোঝা কমানো। সঙ্গে কেন্দ্রীয় সহায়তা মেলার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
সংস্কারের প্রথম ধাপে তিনটি রুগ্ণ পরিবহণ নিগমকে গুটিয়ে ফেলে একটি নতুন নিগম তৈরি করতে চাইছে রাজ্য। অথবা, তিনটি রুগ্ণ নিগমকে মিশিয়ে (মারজার) একটি নিগমে রূপান্তরিত করার ভাবনাও রয়েছে। ওই তিনটিনিগম হল, ক্যালকাটা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএসটিসি), ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি (সিটিসি) এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ডব্লুবিএসটিসি)। মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে এই পথে এগোচ্ছে পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী।
শনিবার মহাকরণে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সভাপতিত্বে পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, কোন পদ্ধতিতে এই তিনটি নিগমকে গুটিয়ে ফেলা হবে, তা নির্ধারণ করতে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেবে সরকার।
ওই তিন সংস্থার অতিরিক্ত কর্মী সংকোচন বা তাদের উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি হ্রাস করা এবং আধুনিক বাস পরিষেবা চালু করতে কোন মডেল উপযুক্ত হবে, তা বাতলে দেবে ওই পরামর্শদাতা সংস্থা। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, আপাতত কলকাতা-কেন্দ্রিক তিনটি পরিবহণ নিগমের সংস্কারের লক্ষ্যেই এগোচ্ছে রাজ্য। পরের ধাপে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্ত্রিগোষ্ঠী স্থির করেছে।
মন্ত্রিগোষ্ঠীর এক সদস্য বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। তিনি এগোতে বললেই কলকাতা শহর আগামী দু’বছরের মধ্যে দেশের আধুনিকতম সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা দেখবে।”
ভর্তুকিতে চলা তিনটি নিগম গুটিয়ে ফেলার ব্যাপারে মোটামুটি মনস্থ করে ফেললেও বাস, ট্রাম এবং লঞ্চ ভাড়া বাড়িয়ে নিগমগুলির আয় বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও আলোচনা এ দিন করেনি মন্ত্রিগোষ্ঠী। পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রী চান না রাজ্যে ভাড়া বাড়ুক। তাই ভাড়া বাড়ানোর আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই বলে এ দিনও জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। যার প্রতিবাদেই মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে লাগাতার বাস ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে বাস মালিকদের একাধিক সংগঠন।
তিনে মিলে
নিগম আয়* বেতনে ভর্তুকি* কর্মী অননুমোদিত/ ক্যাজুয়াল কর্মী
সিটিসি ৫০ ১৯২ ৬৫০০ ২৫৮
সিএসটিসি ৬৬ ১০৮ ৫৭০০ ৬০
ডব্লুবিএসটিসি ২২ ০২ ৬৪০ ৮০
* আয় এবং বেতনে ভর্তুকি কোটি টাকায়
(নতুন বাস কেনা ও মেরামতিতে আরও ভর্তুকি দেয় রাজ্য)
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন সংস্কারে হাত দিচ্ছে? মন্ত্রিগোষ্ঠী যে প্রস্তাবটি (অ্যাজেন্ডা নোট) নিয়ে আলোচনা করছে, তাতে বলা হয়েছে, কলকাতা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই সিটিসি, সিএসটিসি এবং ডব্লুবিএসটিসি-র বাস, ট্রাম এবং ভেসেল পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরেই এই তিনটি নিগমের কাজকর্ম প্রায় লাটে উঠেছে। নানা ভাবে চেষ্টা করেও এদের স্বাস্থ্য ফেরানো যায়নি। দেখা গিয়েছে, এক-একটি নিগম তাদের নিজস্ব ধারা মেনে চলতে চায়। ডব্লুবিএসটিসি-র হাল তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও অন্য দু’টির অবস্থা খারাপ। বছরে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে এ গুলি চালাতে হচ্ছে। প্রত্যেকটিতেই বহু অতিরিক্ত কর্মী বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। এমনকী, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকও জানিয়েছে, কলকাতা শহরের সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির বহুবিধ কাজের ধারা এবং দক্ষতা (মাল্টিপ্লিসিটি অ্যান্ড পারফরম্যান্স লেভেল) এক সূত্রে বাঁধা হোক। এবং সেটা করলে কেন্দ্রীয় সরকারও দরাজ হস্তে রাজ্যকে সহায়তা করতে পারবে। এই সব দিক বিবেচনা করে তিনটি নিগমকে একটিতে রূপান্তরিত করা অথবা নতুন একটি নিগম তৈরি করার পথেই যাওয়া উচিত বলে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
পরিবহণে সংস্কারের এই ভাবনা অবশ্য নতুন নয়। প্রয়াত জ্যোতি বসুর আমলেই এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সিপিএমের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ব্রিটিশ সংস্থা ডিএফআইডি-র অনুদানে রাজ্যের অধীনস্থ যে সংস্থাগুলির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল, সেই তালিকায় ছিল পরিবহণ নিগমগুলিও। বাম আমলের শেষ লগ্নে সংস্কারের পথ ঠিক করতে বিশেষজ্ঞ সংস্থাও নিয়োগ করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু বলেন, “একটি পরামর্শদাতা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরাও সংস্কারের পথে নেমেছিলাম। তারা মূলত বাড়তি লোক ছাঁটাই, আয় বাড়ানো এবং এতগুলি নিগম না রেখে একটি নিগম গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু ভোট চলে আসায় বিশেষ এগোনো যায়নি।”
বস্তুত বাম আমলের বিভিন্ন সময়ে পরিবহণ ক্ষেত্রে সংস্কারের যে চেষ্টাই হয়েছে, তাকে পিছন থেকে টেনে ধরেছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন। নিগমগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সিটুর নেতারা বারবার সংস্কারের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের চটিয়ে এগোনোর সাহস দেখাননি জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেউই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.