এই পুজোয় বোনাসের টাকা যত না মিউজিক সিস্টেম বা টিভিমুখী, তার থেকে তা অনেক বেশি দৌড়চ্ছে ইন্ডাকশন কুকার, ছোট ফ্রিজ মায় শেভিং কিটের দিকে। ইন্ডাকশনের বাজার না হয় তাও অনেকটাই বেড়েছে গ্যাসের দাম বাড়ার ‘কল্যাণে’। কিন্তু অন্যগুলির চাহিদা বাড়ছে দৈনন্দিন জীবনকে নিখাদ সহজতর করে তোলার তাগিদে। এতটাই যে, হেয়ার-ড্রায়ারের মতো পণ্যেরও বাজার বাড়ছে একশোর গুণিতকে।
স্যামসাং থেকে ভিডিওকন বাজারের এই নতুন সমীকরণকে অস্বীকার করতে পারছে না কেউই। তাই বাজার থেকে লাভের কড়ি গুনে নিতে নতুন করে পসরা ঢেলে সাজছে তারা।
বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য (কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স) সংস্থাগুলির মতে, দ্রুত বাড়ছে এবং বদলে যাচ্ছে ক্রেতাদের পছন্দের পরিসর। চিঁড়ে ভিজছে না শুধু ছাড় কিংবা উপহারে। তাই বাজার ধরার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ বার নয়া বিপণন কৌশলের অঙ্গ হিসেবে ক্রেতাদের নতুন পছন্দের সঙ্গে মানানসই পণ্য বাছাইয়ে জোর দিচ্ছে তারা। পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে চিরাচরিত পছন্দের টিভি, এসি, মিউজিক সিস্টেম। বাজারের মর্জি মেনে রমরমা বাড়ছে ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার-গ্রাইন্ডার থেকে শুরু করে হেয়ার-ড্রায়ারের।
উৎসবের মরসুম শুরুর মুখে এমনিতেই বাজার ধরতে নিত্যনতুন বিপণন কৌশলকে হাতিয়ার করে সংস্থাগুলি। কারণ, সারা বছরের মোট বিক্রির সিংহভাগ এই সময়েই করে ফেলে তারা। পুজো-দেওয়ালির সেই বাজার ধরতে চেষ্টার খামতি নেই এ বারও। শুধু প্রচলিত বিপণন কৌশলে আটকে না-থেকে ক্রেতাদের ‘মন পড়া’য় মন দিয়েছে সংস্থাগুলি।
অনেক সংস্থাই জানাচ্ছে, এত দিন বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্যের এই বাজারের সিংহভাগ জুড়ে থাকত টিভি আর মিউজিক সিস্টেম। সেই রমরমা এখন অনেকটাই ফিকে। বাজার বাড়ছে মাত্র ২ থেকে ৫% হারে। কদর বাড়ছে অন্য পণ্যের। যেমন, মাঝারি দামের ‘ডোমেস্টিক অ্যাপ্লায়েন্স’। গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত এই সব জিনিসের বাজার বাড়ছে ১৫-১৮%। এর মধ্যে রয়েছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার, ইন্ডাকশন কুকার, কম তেলে ভাজাভুজির এয়ার-ফ্রায়ার ইত্যাদি।
বাজারের মন বুঝে এ রাজ্যেই নিজেদের কারখানায় অন্য ধরণের পণ্য তৈরির কথা ভাবছে ভিডিওকন। তাদের তারাতলার কারখানায় মূলত সাধারণ রঙিন টিভি তৈরি হত। আজকের এলসিডি, এলইডি-র যুগে সেই চাহিদা পড়তির দিকে। তাই ওই কারখানাতেই এখন ছোট ফ্রিজ তৈরি করবে তারা। সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌতম সেনগুপ্তর কথায়, “প্রায় ৫০ হাজার ছোট ফ্রিজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তা হবে তারাতলা ও শিলিগুড়ির কারখানায়।” একই ভাবে এই বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে বশ্ হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস-এর মতো বিদেশি সংস্থাও। এক বছর আগে ভারতে এলেও এ রাজ্যে সম্প্রতি পা রেখেছে তারা।
রান্নাঘরের সরঞ্জামের পাশাপাশি দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী প্রসাধনীর বাজারও। ‘গ্রুমিং অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস’-এর অনেক কিছুই (হেয়ার ড্রায়ার, ইলেকট্রনিক শেভার ইত্যাদি) এখন ঢুকে পড়েছে রোজকার ব্যবহারের তালিকায়। বাজার বাড়ছে ১০০% হারে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বাজারকে পাখির চোখ করছে ফিলিপস, প্যানাসনিকের মতো সংস্থা। ডাচ বহুজাতিক ফিলিপস-এর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা তুষার দাস বলেন, “১৫ থেকে ৫৫, সব বয়সেই প্রসাধনীর চাহিদা এখন প্রায় সমান। রান্নাঘরে চটজলদি মুশকিল আসানের চাহিদাও তুঙ্গে। তাই এই দুই বাজারের দিকে নজর রেখেই নতুন পণ্য বাজারে আনছি আমরা।”
নয়া পণ্য বাজারে আনার আগে চাহিদা আরও ভাল করে যাচাইয়ের উপর জোর দিচ্ছে স্যামসাং-ও। দক্ষিণ কোরীয় বহুজাতিকটির অন্যতম কর্তা মহেশ কৃষ্ণনের দাবি, এলইডি টেলিভিশন তৈরিতে ক্রেতাদের পছন্দকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। উৎসবের সময়ে বিক্রি বাড়াতে সরে আসছেন না নিশ্চিত উপহার দেওয়ার চেনা পথ থেকেও। |