|
|
|
|
ডাকঘর |
|
প্রসঙ্গ স্বর্ণময়ী |
পরার্থপরা মহারানি স্বর্ণময়ী সম্পর্কিত সুদীপ আচার্যের পত্রের (২২.৯) প্রেক্ষিতে আমার এই পত্র। সুদীপবাবু কাশিমবাজার রাজবংশের রাজা কৃষ্ণনাথকে নিঃসন্তান বলে উল্লেখ করার জন্য নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। আক্ষরিক অর্থে ‘অপুত্রক’ এবং ‘নিঃসন্তান’ কথা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। পত্রলেখক লোকমাতা স্বর্ণময়ীর দান করা অর্থের পরিমাণের তথ্য দিয়েছেন, তার সূত্র বা উৎস জানাতে সক্ষম হননি। তিনি তাঁর প্রথম পত্রে লিখেছিলেন, একমাত্র বহরমপুর কলেজেই (বর্তমানে কৃষ্ণনাথ কলেজ) মহারানি আনুমানিক ষাট লক্ষ টাকা দান করেন। আবার দ্বিতীয় পত্রে লিখেছেন, স্বর্ণময়ীর জীবদ্দশায় দানের মোট পরিমাণ প্রায় ষাট লক্ষ টাকা। এটা কি রকম হিসেব দেখানো হল বুঝতে পারলাম না। গত পত্রে আমি স্বর্ণকুমারীর দানের তালিকার কয়েকটি উল্লেখ করেছিলাম। এই চিঠিতেও আরও কয়েকটি উল্লেখ করলামপাবনা, দানাপুর, বগুড়া, চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে যাঁরা অনাহারে ছিলেন, তাঁদের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, রাজকুমারী এলিসের স্মৃতি চিহ্ন তৈরিতে ২ হাজার টাকা, রাজশাহি মাদ্রাসায় ৫ হাজার টাকা, কটক কলেজে ২ হাজার টাকা বাখরগঞ্জ মহাঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩ হাজার টাকা, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য দেড় হাজার টাকা, চাঁদনি দাতব্য চিকিৎসালয়ে ১ হাজার টাকা, জঙ্গিপুর ডিস্পেনসারিতে ৫০০ টাকা, প্রয়াত রমানাথ কবিরাজের ঋণ পরিশোধে ৫০০ টাকা, কলকাতায় দুর্ভিক্ষ নিবারণী সভায় ৮ হাজার টাকা, বালি রিপণ হলের জন্য এ হাজার টাকা, লালমোহন ঘোষের নির্বাচনী খাতে ১ হাজার টাকা, কুষ্ঠ রোগীদের গৃহনির্মাণে ৮ হাজার টাকা, লন্ডন প্রদর্শনীতে মহিলাদের আবরণ রক্ষায় ৩ হাজার টাকা, বহরমপুরে জলের কল প্রতিষ্ঠার জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করেন তিনি। মিস্টার এমবি পিকক মহারানিকে উপাধি প্রদানকালে (১৭৭৮) লোকমাতা স্বর্ণময়ীর যে সমস্ত দানের উল্লেখ করেন, তার অনুলিপি আমার চিঠির উৎস। ওই অনুলিপিতে মুর্শিদাবাদের স্বনামধন্য আতিহাসিক শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মুর্শিদাবাদ কথা’ গ্রন্থেও সংকলিত আছে। মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্রের জীবনীকার সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় এমবি পিকককে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলে উল্লেখ করলেও ঐতিহাসিকরা পিকককে প্রেসিডেন্সি বিভাগের কমিশনার বলে অভিহিত করেছেন। মুর্শিদাবাদ কথা গ্রন্থে লিখেছেন “স্বর্ণময়ীকে ‘ইম্পিরিয়াল’ উপাধি প্রদানকালে (১৮৭৮,১৪ অগস্ট) কাশিমবাজার রাজভবনে যে দরবার হয়, তাহাতে ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্সি কমিশনার এমবি পিকক মহোদয়, ছোটলাটের প্রতিনিধি রূপে উপস্থিত হন।” আমার অভিমত জীবনীকারের তুলনায় ঐতিহাসিক অনেক বেশি তথ্যনিষ্ঠ।
সুভাষ ঘোষ হাজরা, পাঁচথুপি
|
সিরাজ কথা |
|
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ডাকঘর বিভাগে প্রকাশিত ‘আপত্তির’ জবাবে এই চিঠি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ প্রথম জীবনে ছিলেন ভবঘুরে যাযাবর চরিত্রের খেয়ালি মানুষ। তাই ধরে নেওয়া যেতেই পারে এক জন আলকাপ-পাগল ওস্তাদ ঝাঁকসার ঘরে থাকতেই পারেন। দ্বিতীয়ত, ‘নির্জন গঙ্গা’ ও মায়ামৃদঙ্গ’ উপন্যাসের পারিপার্শ্বিক সাক্ষী দুটো উপন্যাসেই একটা গ্রাম্য দেহাতি চাঁই ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে কলকাতার গোরাচাঁদ রোডের বাসাতে সিরাজ সাহেবের সঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, যদি কখনও ‘মায়ামৃদঙ্গ’ দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয় তখন তোমার সাহায্য নিয়ে চাঁই ভাষাটা শুদ্ধ করে নেব। চাঁইদের সাথে নিবিড় ভাবে-অন্তরঙ্গ ভাবে না মিশলে ওই ভাষা আয়ত্ত করা কঠিন। মায়ামৃদঙ্গ উপন্যাসেও মিঠিপুরের জমিদার বিষ্টু বাবুদের কথা, ঝাঁকসুর গ্রাম ধনপতনগরের বর্ণনা, ধনপতনগরের শ্মশান ঘাটের বর্ণনা, চাঁই মহল্লা নিস্তাতালাই গ্রামের কালিপুজোর মেলার কথা, দ্বিতীয় পক্ষের দুই বোন দুই স্ত্রীর কথা,ফজর চাচার কথা, জঙ্গিপুর রোড স্টেশনের কথা কোনও অবাস্তব কল্পলোক থেকে উঠে আসতে পারে না। তৃতীয়ত, মায়ামৃদঙ্গ উপন্যাসে ঝাঁকসুর দ্বিতীয় পক্ষের এক স্ত্রীকে কেন আত্মহত্যা করালেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি উপন্যাসের চরিত্র সৃজনের জন্য করেছিলেন বলে আমায় জানান। ঝাঁকসুকে আলকাপ সম্রাট উপাধি দিয়েছে আলকাপ প্রিয়জনগণযাঁদের মধ্যে ড. দিলীপ ঘোষ, ড. শক্তিনাথ ঝাঁ, পুলকেন্দু সিংহ, অধ্যাপক আশিস রায়, শিক্ষক হরিলাল দাস, নিমাই সাহা, বল্টু লালা, বরুণ রায় প্রমুখ রয়েছেন। তার প্রমাণ ঝাঁকসাকে প্রদত্ত মানপত্র আছে। আছে ১৯৬৩ সালের প্রথম জঙ্গিপুর গ্রন্থমেলার নথি পত্রিকা। প্রায় ৫/৬ বছর আগে জনৈক অধিকারি মশাই উত্তরপাড়া হুগলি থেকে দু’বার আমার কাছে ধনপতনগরে সিরাজ সাহেবের হাত চিঠি নিয়ে আসেন মায়ামৃদঙ্গ উপন্যাসের পটভূমি দেখতে। এটা নাকি চলচ্চিত্রায়িত হবে। তাঁকে পটভূমি দেখাই। সাক্ষী একুশ শতকের সম্পাদক সৌমিত্র সিংহ। মায়ামৃদঙ্গ উপন্যাসের ভূমিকায় সিরাজ সাহেব তো নিজেই ঝাঁকসাকে ওস্তাদ উপাধি দিয়েছেন। স্বীকার করেছেন যে তাঁর জীবনের সাত-সাতটা বছর যাদের নিয়ে কাটিয়েছেন, তাঁদের নিয়েই এই উপন্যাস যথা আলকাপ, ওস্তাদ ঝাঁকসা ও ধনপতনগর।
তুলসীচরণ মণ্ডল, ধনপতনগর
|
আলকাপের পরে |
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ঝাঁকসুর দলে ছিলেন না এবং ঝাঁকসুকে অকারণে ‘আলকাপ সম্রাট’ বানিয়ে সিরাজ সাহেবকে হেয় করা হয়েছে প্রসঙ্গে কিছু বলার জন্য এই পত্র। হতে পারে, সিরাজ সাহেব কোনও দিনই ঝাঁকসুর দলে ছিলেন না। কিন্তু ওই তথ্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পত্রলেখক নৌমান সাহেব লিখেছেন, সিরাজের কাছে ঝাঁকসু পরাজয় স্বীকার করেন। ফলে সিরাজ কেন ‘পরাধীন ভাবে’ ঝাঁকসুর দলে বাঁশি বাজাবেন? কারও নির্দেশনায় কাজ করলেই কি এক জন শিল্পী ‘পরাধীন’ হয়ে যান। পত্রলেখকের দ্বিতীয় আপত্তিঝাঁকসুকে অকারণ ‘আলকাপ সম্রাট’ বানিয়ে সিরাজ সাহেবকে হেয় করা হয়েছে। হতে পারে, আলকাপ শিল্পী হিসেবে সিরাজ সাহেব ঝাঁকসুর থেকে উৎকর্ষে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পত্রলেখক জানিয়েছেন, যৌবনের প্রারম্ভেই সিরাজ সাহেব আলকাপ ছেড়ে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। অথচ যাকে ‘আলকাপ সম্রাট’ বলায় তাঁর আপত্তি সেই ঝাঁকসু আমৃত্যু চরম দারিদ্রের মধ্যেও এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দুই মেয়েই আলকাপের প্রথম মহিলা শিল্পী। মুর্শিদাবাদ ছাড়িয়ে বর্ধমান, মালদহ, রাজশাহি, এমনকী বিহারেও তাঁর প্রতিভার বিস্তার ঘটে। আলকাপকে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি এটি একটি সর্বজনীন রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝাঁকসুর নাম সর্বাগ্রে উল্লেখের দাবি রাখে। মহাজনী শোষণ (তোর টাকা লিবে কেটা/ তোর মুখে মারি ঝাঁটা) থেকে পরাধীনতার যন্ত্রণা (বাংলা মা তুই কাঁদবি কতকাল/ তোর সোনার অঙ্গ করল ভঙ্গ, রক্ত ধারায় লালে লাল) বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি (হিন্দু যারে জল বলে মুসলমান কয় পানি/ হিন্দু যারে দিদিমা বলে, মুসলমান কয় পানি) প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ।
প্রদীপ নারায়ণ রায়, শক্তিপুর |
|
|
|
|
|