পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত: দুই পুর এলাকা
দুর্ভোগের চেনা ছবি
পুজোর আর বাকি মাত্র কয়েকটি দিন। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশায় যাতায়াতের নরকযন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই বারাসতবাসীর। অভিযোগ উঠেছে, বারাসত পুরসভার সদিচ্ছার অভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে এখানকার পথঘাট। প্রয়োজনমতো টাকা বরাদ্দ হলেও রাস্তার সংস্কার হচ্ছে না। এগোচ্ছে না কাজের গতি। তাই পুজোর আগেও এই দুর্বিষহ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
উত্তর দমদম পুরসভায় আবার অন্য ছবি। সেখানে পুরসভারই অভিযোগ, দুর্গানগর স্টেশন রোড, শ্রীনগর মেন রোড, রবীন্দ্র সরণি, আশ্রম রোড ও সার্ভিস রোড-সহ বেশ কিছু রাস্তা সারানোর জন্য সরকারি সাহায্য মিলছে না। টাকার অভাবে রাস্তা মেরামত করা যাচ্ছে না। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের দুর্ভোগের ছবিটা এক।
উত্তর দমদম
বারাসতের বাসিন্দা সুরজিৎ রায় জানান, স্থানীয় বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ভোটের প্রচারে এসে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারণে গাড়িতে বসে কেমন ভাবে বেঁকে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই রাস্তাতেই সম্প্রতি ভ্যান উল্টে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অন্য দিকে, উত্তর দমদমের বাসিন্দা যতীন মণ্ডল জানান, বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও রাস্তার দুর্দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু তবুও রাস্তার চেহারা বদলায়নি।
উত্তর দমদম পুর-এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ৩১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তার পিচ উঠে এবড়োখেবড়ো গর্ত। পুর-চেয়ারম্যান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী বললেন, “পুরসভার যা আয়, তা দিয়ে সব রাস্তা এক সঙ্গে সারানো সম্ভব নয়। সরকারি সাহায্যের জন্য বহু বার আবেদন করেও ফল হয়নি। বেশি খারাপ রাস্তাগুলোকে তাপ্পি মেরে, গর্ত বুজিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। পুর-তহবিলের টাকায় বেশ কিছু নতুন রাস্তাও তৈরি করছি।” স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “বিধায়ক নিজের তহবিলের টাকা নিজের মতো উন্নয়নে ব্যয় করতে পারে। তার জন্য পুরসভার সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, গত আর্থিক বছরে বিধায়ক তহবিলের টাকার ৮২ শতাংশ উত্তর দমদম পুর এলাকায় খরচ হয়েছে।”
বারাসত
এ দিকে, বারাসত পুরসভায় বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের আর্থিক সাহায্য রয়েছে। আসছে সরকারি অনুদানও। তবুও আশুতোষ রোড, কে কে মিত্র রোড, সার্কুলার রোড, একদিল শাহ্ রোড, মুজফ্ফর আহমেদ রোড-সহ অধিকাংশ রাস্তাই ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে। পুর-চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তা সংস্কারের টাকা আগেই পেয়েছি। কিন্তু বর্ষার মরসুমে রাস্তা সংস্কার করিনি। পুজোর আগে শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সারাতে টেন্ডার ডাকা হবে। তবে যে রাস্তাগুলির অবস্থা খুব খারাপ, সেখানে ইটের টুকরো ও মোরাম দিয়ে রোলার চালিয়ে সমান করা হয়েছে।”
তবে কংগ্রেসের জেলা কমিটির সম্পাদক বিশাল সরকারের অভিযোগ, অনেক রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ। বর্ষার আগেই সেগুলি মেরামত করা যেত। তা না করে বৃষ্টির মধ্যে অবস্থা আরও দুর্বিষহ করে তুলে প্রাথমিক সংস্কার করা হচ্ছে। পরে সেই রাস্তাই আবার মেরামত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, অল্প সময়ের ব্যবধানে একই রাস্তার জন্য দু’বার টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। ফলে পুরসভার ব্যয়ও বেশি হচ্ছে।

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.