খেলা
নিশানায় বাস্কেট
ছর পাঁচেক আগেও বাস্কেটবল সম্পর্কে অণিমার কোনও ধারণা ছিল না। এ বছর সে বাস্কেটবল-এর জাতীয় যুব দলের সদস্য।
অণিমা ওঁরাও ঝাড়খণ্ডের এক অখ্যাত গ্রামের আদিবাসী পরিবারে মেয়ে। বাবা খেতমজুর। যা আয় করেন তা দিয়ে আট সদস্যের পরিবারের কোনও রকমে খাবার জোটে। সাত বছর বয়সে অণিমাকে পিসি সুমিত্রা ওঁরাও হাওড়ার কাসুন্দিয়ায় নিয়ে আসেন। পিসি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। তিনি অণিমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন।
অণিমার কথায়: “বছর পাঁচেক আগে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে সেন্ট্রাল হাওড়া বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে আন্তঃ জেলা বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। খেলাটাকে ভালবেসে ফেলি। পিসিকে জানাই। কিন্তু অভাবের সংসারে কিছু করার ছিল না।”
পিসি সুমিত্রা ওঁরাও বললেন, “যা আয় করি তাতে ভোল জুতো, জার্সি কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। বাস্কেটবল সেন্টারের সচিব অনিল রানা ও দুই কোচ অপরেশ কোলে এবং সুবীর কুমার মণ্ডল মিলে ব্যবস্থা করে দেন।” এখানে বছর দুয়েক প্র্যাক্টিসের পরে ২০০৯-এ জেলা দলে জায়গা করে নেয় অণিমা। ২০১০-২০১১ সাব জুনিয়র রাজ্য দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এ বার জাতীয় যুব দলে জায়গা করে নিয়েছে অণিমা। খেতাব জেতার লক্ষ্যে সকালে হাওড়ার মাঠে আর বিকেলে কলকাতার ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে অণিমা।
কোচ অপরেশ কোলে বলেন, “অভ্যাসের সময় অণিমার একাগ্রতা দেখে বুঝেছিলাম অনেকটা পথ যাবে। তাই আমরা একটু বাড়তি নজর দিয়ে ছিলাম।” বাবা বিরসা ওঁরাওয়ের কথায়: “আমাদের মতো পরিবারের মেয়ে রাজ্য ও জাতীয় দলের হয়ে খেলবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ওর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। এই সাফল্যের কৃতিত্ব অণিমার পাশাপাশি এবং জেলা বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের কোচ ও কর্মকর্তাদের।”
এ সাফল্যের পরেও শালিমার হিন্দি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অণিমার গলায় হতাশার সুর। সে বলল, “পিসির সামান্য আয়। তা দিয়েই খাওয়াদাওয়া, ঘরভাড়া, স্কুলের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলার সরঞ্জাম কেনা, যাতায়াতের গাড়ি ভাড়া। জানি না এ ভাবে আর কত দিন চালিয়ে যেতে পারব।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.