|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ১... |
|
বিগ বি-কে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য দাদা-র |
অমিতাভ বচ্চন যে আগামী বৃহস্পতিবার সত্তরে পা দিচ্ছেন জানতেন না। শোনামাত্র প্রথম
রি-অ্যাকশন‘বসের সত্তর হয়ে গেল!” এর পর প্রিয় অভিনেতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আর
প্রাক্তন
ভারতীয় অধিনায়ক নন। লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা খুলে ফেলা অ্যাংগ্রি ইয়ং ক্রিকেটারও না।
নিখাদ
এক টিনএজার ভক্ত।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শৈশবে ফিরে গিয়েছেন বিগ বি নামক চুম্বকের টানে।
তাঁর
অমিতাভ-মুগ্ধতার কথা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অকপটে বললেন গৌতম ভট্টাচার্য-কে ! |
|
|
|
... বিজয় দীনানাথ চৌহান। পুরা নাম।
... বাপ কা নাম দীনানাথ চৌহান
... মা কা নাম সুহাসিনী চৌহান
... গাঁও মান্ডোয়া
... উমর ছত্তিশ সাল
ন মাহিনা আট দিন ...
অগ্নিপথ (১৯৯০) |
|
উফ্, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়! কমপক্ষে ‘অগ্নিপথ’-এর এই সিনটা আমি দশবার দেখেছি। আর প্রতিবার সমান রোমাঞ্চিত হয়েছি যে, বিজয় থানায় ঢুকে চেয়ারটায় বসে কী ভাবে কথাগুলো বলছে!
এমনিতে মিস্টার বচ্চন আমার সময়ের আগে। আমার জন্ম ১৯৭২-এ। ওঁর প্রথম সুপারহিট ছবি ‘জঞ্জির’ যখন রিলিজ করে, আমার বয়স মাত্র এক। ওঁর বেশির ভাগ ছবিই আমি দেখেছি রিলিজের অনেক বছর বাদে। যেমন ‘শোলে’। ‘দিওয়ার’। বা ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’।
প্রত্যেক রোববার আমাদের বাড়িতে সেই সময় দুপুরবেলা সবাই মিলে সিনেমা দেখা হত। ভিসিআর ছিলই। পুরনো ক্যাসেট নিয়ে আসা হত দোকান থেকে। বাড়িতে দাদু থেকে আমরা ছোটরা, আমি, আমার দাদা সবাই মিলে সিনেমা দেখতাম। ওই রোববারগুলোর বেশির ভাগই অমিতাভ বচ্চনের ছবি থাকত। আমার ওঁকে প্রথম দেখা-ভাললাগা-ফ্যান হয়ে যাওয়া সবই রবিবারে। বাড়ির অনেকেও সেই সময় থেকে ওঁর পাগল ফ্যান। আমার দাদা স্নেহাশিস যেমন।
আমি প্রথম ওঁর ফ্যান হয়ে যাই ‘শোলে’ দেখে। ‘শোলে’-তে আরও ভাল লেগেছিল সেই সময় গব্বর সিংহের ক্যারেক্টারটা। কিন্তু ‘শোলে’-র পরপর অ্যাতোগুলো অমিতাভের ছবি দেখলাম— ‘ত্রিশূল’। ‘ডন’। ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দার’। ভাল লাগাটা একেবারে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেল। আমার কাছে মিস্টার বচ্চনের কমার্শিয়াল ছবিতে সেরা অভিনয় ‘শোলে’। অন্য রকম ফিল্মে ‘ব্ল্যাক’।
এই লেখাটার জন্য আমায় জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল, কোন বচ্চনকে আমার বেশি পছন্দ? বাঁ হাতে বন্দুক, না ডান হাতে পান নিয়ে খাইকে পান বানারস ওয়ালা? |
‘দিওয়ার’-এ পিটারের ডেরায় |
বললাম, অবশ্যই বাঁ হাতে বন্দুক। আর তার সঙ্গে ডায়ালগ বলার ওই ভঙ্গি। ‘দিওয়ার’-এ পিটারের ডেরায় বসে থাকার দৃশ্যটা আমার ভীষণ প্রিয়। ওঁর সিনেমা পরপর দেখে গেছি আত্মহারা হয়ে। ঠিক কোন কোন গুণের জন্য ওঁকে এত ভাল লাগে আগে কখনও ভেবে দেখিনি। আজ বিশ্লেষণ করতে বসে মনে হচ্ছে, সব কিছু নিয়ে। ওই হাইট। ওই গলা! ওই ব্যক্তিত্ব! সর্বোপরি ওই অভিনয়!
সে দিন আমার এক বন্ধু সন্দেহ প্রকাশ করছিল, এখনকার যুগে জন্মালে জেনারেশন ওয়াই-এর কাছে সমান গ্রহণযোগ্য হতেন কি না অমিতাভ? এ রকম প্রশ্ন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডে আমরা হরবখত শুনি। অমুক ওই সময়ে জন্মালে রান পেতেন? হেলমেট নিয়ে আরও বেশি রেকর্ড কি করতে পারতেন না?
অনেক ‘যদি’, ‘হয়তো’-র ব্যাপার এসে যায়। যা এক্ষেত্রে নেই। আমার ব্যক্তিগত রায়মিস্টার বচ্চন এখন নতুন করে শুরু করলেও একই হতেন! এই পর্যায়ের ট্যালেন্ট রোখা যায় না। সে সব সময়, সব কালে রাজত্ব করার জন্যই দেখা দেবে!
ছোটবেলা থেকে এই যে ফাটিয়ে অমিতাভের সিনেমা দেখতাম, আজ বুঝি তার পিছনে একটাই কারণ ছিল। ভরপুর বিনোদন। মিস্টার বচ্চনও আমার কাছে একজন এন্টারটেনমেন্ট মুঘল। ওঁর সিনেমা দেখে আমি যে দারুণ মোটিভেটেড হয়েছি এমন নয়। কিন্তু খুব এন্টারটেন্ড হয়েছি।
আলাপ ১৯৯৬-৯৭ নাগাদ। খুব সম্ভবত মুম্বই এয়ারপোর্টে। উনি অন্য কোথাও যাচ্ছিলেন। আর আমি মুম্বই নামছি। সেই সময় কোন একটা টুর্নামেন্টে রান-টান করেছিলাম ভাল। আমি নিজে থেকে গিয়ে আলাপ করতেই বললেন, আরে তোমায় তো আমি বিলক্ষণ চিনি। বলে দারুণ প্রশংসা করলেন রিসেন্ট পারফরম্যান্সের। আমি রোমাঞ্চিত বললে কিছুই বলা হয় না। একেবারে অভিভূত হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল, সত্যি দেখছি তো! অবাক হয়েছিলাম ক্রিকেটের এত খবর উনি রাখেন।
প্রথম আলাপে মনে হয়েছিল, এত অ্যাচিভ করেও মানুষটা কী ভীষণ বিনয়ী! আজও তাই মনে হয়। সে দিন গেছিলাম ওঁর কেবিসি শো-তে। সেই একই বিনম্র ব্যাপারটা রয়ে গেছে। আমির খানকে দেখেছি কাছ থেকে। আমিরও বেশ বিনয়ী। শাহরুখ খানকে এ ব্যাপারে আমি তিন নম্বরে রাখব। শাহরুখ একই সঙ্গে বিনয়ী। আবার অ্যারোগ্যান্ট। |
দাদার ডায়েরিতে |
|
প্রথম মুগ্ধ হওয়া: অনেক বছর আগের রোববার ‘শোলে’ দেখতে বসে ভিডিয়োয়।
প্রিয় দৃশ্য: ‘অগ্নিপথ’-এর পুলিশ চৌকিতে বিজয় দীনানাথ চৌহান।
মনে রাখা দৃশ্য: পিটারের ডেরায় বিজয় (‘দিওয়ার’)। ‘বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ’-এর নাচের সিন।
পছন্দের পোজ: বাঁ হাতে বন্দুক।
বচ্চনের সেরা নায়িকা: বাণিজ্যিক ছবি হলে রেখা। অন্য ধরনের ছবি হলে জয়া।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা: সুস্থ থাকুন। মনের আনন্দে কাজ করে যান। ‘মহব্বতে’র মতো আরও রোল করুন। |
|
আবার শাহরুখের পরিশ্রম করার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। ওর খাটার ক্ষমতা আমাকে জাস্ট আশ্চর্য করেছে। তারই মধ্যে শাহরুখ খুব রিল্যাক্সড থাকতে জানে। যেটা আমির নয়। আমির সব সময় খুব ইনটেন্স। আমি মিল খুঁজে পাই রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে।
আর মিস্টার বচ্চন? রিয়াল বিগ বি! চেহারাতে বিগ? বাইরে খ্যাতিতেও বিগ!
ক্যামেরার সামনে আমি তিন জনের সঙ্গেই কাজ করেছি। শাহরুখ আর মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের ছবিতে। আমিরের সঙ্গে কেবিসি হোস্ট হিসেবে। দেখেছি একটা ব্যাপারে ওদের অসম্ভব মিল। অ্যাকশন বলার সঙ্গে সঙ্গে ওরা একেবারে অন্য মানুষ। মিস্টার বচ্চন আর শাহরুখকে দেখেছি স্রেফ ইয়ার্কি মারতে মারতে লাল লাইট জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে আমূল বদলে যেতে। তখন মনে হয়, সত্যিই এটা ওঁদের পৃথিবী! মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে একটা ইএসপিএন অ্যাডে একসঙ্গে শু্যট করছিলাম।
একই এসি মেক-আপ ভ্যানে আমাদের মেক-আপ হল। মেক-আপ করতে করতেও ভাবছি একই ফ্রেমে অমিতাভ বচ্চন আর আমি! ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? উনি বোধহয় আমার টেনশন বুঝতে পেরেই আরও পরিবেশটা রিল্যাক্সিং করে রাখছিলেন। শটটা দিয়ে উঠে মনে হল, সত্যিই, স্টার বটে!
ওই গলাটাও সামনে থেকে শোনাটা একটা অভিজ্ঞতা। ওঁর আর বিজেপি-র রাজনাথ সিংহের দুটো কণ্ঠস্বরই আমার খুব প্রিয়।
আমি যে মিস্টার বচ্চনের মুগ্ধ ফ্যান অনেকেই জানেন। সে জন্যই হয়তো একবার আমায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কী হত যদি মনে করুন আপনি কেকেআর ক্যাপ্টেন। আর কেকেআর মালিকের নাম অমিতাভ বচ্চন!
আমি উত্তর দিই, এটা বলা খুব শক্ত। আমি যতটুকু ওঁকে দেখেছি সেটা একসঙ্গে একটা টিম নিয়ে কাজ করার পক্ষে খুব কম দেখা। একমাত্র চাপের মুখে একসঙ্গে কাজ করলে তবেই বোঝা সম্ভব কম্বিনেশনটা কেমন হবে। তবে আমার পছন্দের স্টার হিসেবে আমি সব সময় মিস্টার বচ্চনকে এক নম্বরে রাখব। কিছু দূরের দুইয়ে থাকবে আমির। তিন শাহরুখ। সত্তরতম জন্মদিনে ওঁকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। সত্যি বলতে কী, ওঁর যে সত্তর হয়ে যাচ্ছে আমি ভাবতেই পারি না। এই তো ‘বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ’-এ যা নাচতে দেখলাম, ফাটাফাটি! জন্মদিনে আমার শুভেচ্ছা হবে স্যর,
আপনি সুস্থ থাকুন। এ রকমই মনের আনন্দে ছবি করে যান। আর ‘মহব্বতে’-তে আপনার রোল যেমন ছিল, সেই টাইপের রোল আরও বেশি করুন।
অমিতাভ বচ্চন ব্র্যান্ড বলতে ঠিক কী বোঝায়? ৭০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে পত্রিকা আমার কাছে জানতে চাইল। বললাম, সিম্পল উত্তর তো ভাই মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রি...
|
জঞ্জির
(১৯৭৩) |
দিওয়ার
(১৯৭৫) |
অমর আকবর অ্যান্টনি
(১৯৭৭) |
|
|
ডন
(১৯৭৮) |
শোলে
(১৯৭৫) |
|
|
|
|
|
|
|