চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
জেগে ওঠে রক্তিম শূন্যতার অদৃশ্য প্রেক্ষাপট
কটু ব্যতিক্রমী চিত্র-প্রদর্শন কেন্দ্র গ্যালারি লা মেরে। দক্ষিণ কলকাতার প্রান্তে অবস্থিত অরবিন্দ সংস্কৃতি কেন্দ্রের অন্তর্গত এই গ্যালারিটির একটি বৈশিষ্ট্য শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমার অধ্যাত্ম-দর্শনের কিছু অনুরণন এর পরিচালন ব্যবস্থাতেও অনুভব করা যায়। তত বাণিজ্য-মনস্ক নয় এই গ্যালারি। সারা বছরে বিশেষ কয়েকটি উপলক্ষে নির্দিষ্ট ভাবনার উপর সাধারণত সম্মেলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই গ্যালারিতে। স্বাধীনতা তেমনি একটি উপলক্ষ। ১৫ অগস্ট একই সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস এবং শ্রী অরবিন্দের জন্মদিন। এই দিনটিতে প্রতি বছরই শুরু হয় ‘স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এ বছরও হয়েছে। এ বারের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন ৩৪ জন শিল্পী। সকলেই বাংলার। বাংলার সাম্প্রতিক চিত্রকলার একটি চালচিত্র উঠে এসেছে এই প্রদর্শনীতে।
নব্য-ভারতীয় ঘরানার বাতাবরণের দিকেই দৃষ্টিপাত করা যায় প্রথমে। এই ভাবাদর্শের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন এই গ্যালারির নির্বাচনে সব সময়ই অনুভব করা যায়। এই প্রদর্শনীতে কয়েক জন শিল্পী আছেন যাঁদের কাজে এই আদর্শের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন রয়েছে। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিশ্র-মাধ্যমের ছবিটি যেমন। এক মানবীর রূপায়ণের মধ্যে রয়েছে স্নিগ্ধ লৌকিক সৌন্দর্যের সন্ধান। অমলনাথ চাকলাদার এই আঙ্গিককে অনেক রূপান্তরিত করেছেন। রেশমি কাপড়ের উপর টেম্পারায় করা তাঁর ‘অ্যাট ডন’ শীর্ষক ছবিটি দৃষ্টান্ত। সকালে একটি মোরগ ডাকছে এই হল ছবিটির বিষয়।
গৌতম বসুর টেম্পারাটি এই আদর্শকেই অনেকটা বিমূর্ত অনুভবে রূপান্তরিত করেছে। ব্রতীন খানের কৃষ্ণের সঙ্গে গরুর উপস্থাপনাটি প্রত্যক্ষ ভাবেই ভারতীয় চিত্ররীতির প্রসারণ। দ্বিজেন গুপ্তের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস ‘ওয়ান সোল’-ও শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি বাজানোর প্রতিমাকল্প। অরুণাংশু রায় বা স্বপ্নেশ চৌধুরীর ছবি ডিজাইন-ধর্মী।
শিল্পী: রবীন রায়
আমাদের আধুনিকতায় নব্য-ভারতীয় ঘরানার পূর্ববর্তী পদক্ষেপ ছিল অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতার আঙ্গিক। এর প্রভাব এখনও অম্লান। কাঞ্চন দাশগুপ্ত এই আঙ্গিক নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্রদর্শনীর অনামা তেলরঙের রচনাটিতে তিনি স্বাভাবিকতাকে বিমূর্তায়িত অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকে বিশ্লিষ্ট করেছেন। অনিমেষ নন্দীর তেলরং ‘দ্য লোনলি বার্ড’ স্বাভাবিকতাবাদী সুররিয়ালিজমের দৃষ্টান্ত। শুভেন্দু পোরেল-এর ‘সেল্ফ’ শীর্ষক তেলরংটিতেও স্বাভাবিকতার আঙ্গিকের প্রতিফলন। এই স্বাভাবিকতাই কিমাকার কল্পরূপে রূপান্তরিত হয়েছে চন্দ্রশেখর আচার্যের ‘লাইফ-লাইভলিনেস’ শীর্ষক টেম্পারায়। মন্ময় নিসর্গের কয়েকটি দৃষ্টান্ত রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। স্বাভাবিকতা সেখানে যেমন আদর্শায়িত হয়েছে, তেমনি বিমূর্তায়িতও হয়েছে। তপন মিত্র, প্রাণগোপাল ঘোষ, সোহিনী ধর, প্রদোষ পাল ও মলয় চন্দন সাহার ছবি এর দৃষ্টান্ত।
স্বাধীনতার ভিতর যেমন গরিমার কিছু মাত্রা আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতা, অবক্ষয় ও শূন্যতার অনুভবও। কয়েকজন শিল্পীর ছবিতে তার প্রতিফলন দেখা যায়। অভিব্যক্তিবাদ ও বিমূর্তায়ন পদ্ধতিকে তাঁরা নানা ভাবে ব্যবহার করেছেন। গৌতম চৌধুরীর মিশ্র মাধ্যমের ছবিটি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের শরীর করুণ শূন্যতায় দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে। পদচিহ্নের মধ্য দিয়ে আভাসিত হচ্ছে তার যাত্রার অনুষঙ্গ।
অনিশ্চিত এক লক্ষ্যে যেন তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রবীন রায় চারটি বর্গাকার চিত্রপটের সমাহারে গড়ে তুলেছেন টেম্পারার ‘সাউন্ড অ্যাজ ফিউরি’ শীর্ষক ছবিটি। রক্তিম শূন্যতার প্রেক্ষাপটে জেগে ওঠা সমস্ত ধ্বনিই কোলাহলে পরিব্যাপ্ত হচ্ছে। এ রকমই উচ্চারণ ও নিরুচ্চারের সংঘাত ঘনীভূত হয় পার্থপ্রতিম দেবের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটিতেও। অমিতাভ ধরের মস্তকবিহীন মানব-অবয়বের মধ্যেও আভাসিত হয় স্বাধীনতার ব্যর্থতার প্রতীক।
এই প্রশ্নাকুল সংশয় প্রতিধ্বনিত হয়েছে তরুণ দে-র ছবিটিতেও। অলোক সর্দারের ‘দ্য আউল’ ছবিতে ঝংকৃত অভিব্যক্তিময়তায় অস্তিত্বের অন্তর্লীন রহস্য উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তরুণ ঘোষের অভিব্যক্তিবাদী রূপায়ণেও আভাসিত হয় এ রকম আশা নিরাশার দ্বন্দ্ব। দেবব্রত চক্রবর্তীর কালি-কলমের অলঙ্করণধর্মী ‘স্বাধীনতা’ শীর্ষক ছবিটিতে অবশ্য স্বাধীনতার সদর্থক দিকেরই আভাস।
এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিলেন বরুণ রায়, বিশ্বপতি মাইতি, গৌতম শর্মা, হিরণ মিত্র, হারিৎ বসু, লালমোহন রায়, প্রদীপ রক্ষিত, প্রদীপ মৈত্র ও সন্দীপ চৌধুরী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.