পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে এ বছর উত্তর দিনাজপুরে পদ্মফুলের চাষ মার খাওয়ায় দুর্গাপুজোর আগে মাথায় হাত পড়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। পুজোর মুখে পদ্মফুলের সরবরাহ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। যে পরিমাণ পদ্মফুল বাজারে মিলছে তা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। পুজো উদ্যোক্তাদের চাহিদা মেটাতে তাই এ বছর বহু ফুল ব্যবসায়ীই কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে পদ্মফুল আমদানি করতে শুরু করেছেন। ওই ফুলের দামও ধরা ছোঁওয়ার বাইরে হওয়ায় সমস্যায় উদ্যোক্তারা! অনেক পুজো উদ্যোক্তাই এ বছর পুজোর বাজেটে কাঁটছাট করে পদ্মফুল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণেই পদ্মফুলের চাষ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়েই বৃষ্টির জলে পুকুর, খাল-বিল, ডোবা ও নয়ামজুলিতে চাষিরা পদ্মফুলের চাষ করেন। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এক্ষেত্রে কারোরই কিছু করার নেই।” ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার রায়গঞ্জ, ইটাহার, কালিয়াগঞ্জ, করণদিঘি, গোয়ালপোখর ও চাকুলিয়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ১২ হেক্টর সমপরিমাণ পুকুর খাল-বিল, ডোবা ও নয়াণজুলিতে পদ্মফুলের চাষ হয়। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও এ বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১২০০ মিলিমিটারের কিছু বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছর জেলায় ৪ লক্ষেরও বেশি পদ্মফুল চাষ হলেও এ বছর ২ লক্ষের বেশি পদ্মফুলের ফলন হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রায়গঞ্জের প্রবীণ ফুল ব্যবসায়ী তপন সাহা বলেন, বৃষ্টিপাতের অভাবে এ বছর গ্রামেগঞ্জে পদ্মফুলের ফলন অর্ধেকেরও কম। ফলে বাজারে পদ্মফুলের সরবরাহ কমে গিয়েছে। চাষিরা প্রতি ১০০ টি পদ্মফুল ৬০০ টাকার কমে আমাদের কাছে বিক্রি করতে চাইছেন না। খোলা বাজারে পদ্মফুলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ফুল ব্যবসায়ী তন্ময় সাহা বলেন, জেলায় পদ্মফুলের ফলন কম হওয়ায় এ বছর আমরা কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে শতদল পদ্মফুল আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছি। রায়গঞ্জের মাড়াইকুড়া ও গোরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পদ্মফুল চাষি অনুপ ঠাকুর ও বিষ্ণুপদ সাঁই বলেন, “এ বছর দুই জনে ৮টি পুকুর লিজ নিয়ে পদ্ম চাষে নেমেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিপাতের অভাবে ৩ টির বেশি পুকুরে পদ্মফুল চাষ হয়নি। ৩টি পুকুরে ১৫ হাজার পদ্মফুল হয়েছে। জলের অভাবে পদ্মফুলের গুণগত মানও খারাপ হয়েছে।” রায়গঞ্জের শাস্ত্রী সঙ্ঘ পুজো কমিটি কোষাধ্যক্ষ বাবাই দে বলেন, “এ বছর পদ্মফুলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় পুজোর চারদিন ভোগের খরচ কমিয়ে ৩০০ টি পদ্মফুল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোহনবাটি পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, পদ্মফুলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর তাঁরা ১০০ টি পদ্মফুল কিনে তা ছিঁড়ে জবা ও গোলাপ ফুলের সঙ্গে মিশিয়ে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। |