|
|
|
|
|
বিছানায় নিউ ইয়র্ক ব্রিজ, মেঝেয় বাঘছাল |
পুজোর দিনে অতিথিরা যদি আপহোলস্ট্রিতে ন্যাপথলিনের গন্ধ পান,
সম্মান থাকবে? আইডিয়া দিচ্ছেন পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়। |
সাজের ব্যাপারে আপনি বেজায় খুঁতখুঁতে। পোশাকের সঙ্গে সেফটিপিন, হেয়ার ক্লিপও আপনি বেছে বেছে কেনেন। কিন্তু উৎসবের দিনগুলোয় অন্দরসাজকে কী করে সম্পূর্ণ একটা লুক দেওয়া যায়, সে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন কি? হাতে এখনও কিছুটা সময় আছে। একটু অন্য রকম ভাবে এদের সাজিয়ে তোলা যায় কি না, এক বার পরখ করে দেখবেন নাকি? |
বেডকভার |
মার্কিন মুলুকে এখনও পা পড়েনি তো কী হয়েছে, নিউ ইয়র্ক-এর ব্রিজের মাঝখানে দিব্যি শুয়ে ঘুমোতে তো পারেন। অবাক কাণ্ড নয়। এগুলো ডিজিটাল বেডস্প্রেড, যার পুরোটা জুড়ে থাকবে পুরনো কোনও ইমারতের ছবি, গাড়ি বা মেরিলিন মনরো, অড্রে হেপবার্ন-এর মতো আপনার প্রিয় আইকন-এর মুখ। বেডস্প্রেড কাম কুইল্টও দেখতে পারেন। তুলোর মতো নরম। শীতকালে আর কম্বল নিয়ে টানাটানির দরকার পড়বে না। সিল্ক, ভেলভেট বা লেস-এর এই বেডস্প্রেড-এর ভেতরে থাকে কটন লাইনিং। ফলে ভীষণ আরামদায়কও। পিয়োর সিল্কের ওপর বাহারি এমব্রয়ডারি করা বেডকভারও এই সময় ভারী সুন্দর দেখতে লাগবে। অষ্টমীর আড্ডার জন্য একদম অন্য রকম কিছু বেছে নিতে চাইলে ভেলভেট, সিল্ক আর সিকুইন-এর মিশেলে তৈরি একটা কভার বাছতে পারেন। পুরো চাদরটাকে চার ভাগে ভাগ করে এক-একটা ভাগ এক-এক রকম মেটিরিয়াল দিয়ে বানানো হয়েছে।
নিজের শোওয়ার জায়গাটিকে সাধ্যের মধ্যেই সাজাতে চাইলে হ্যান্ডলুম-এর বেডকভার দেখতে পারেন। হ্যান্ডলুমের জন্য প্রসিদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান এক ধরনের বেডকভার-এ অ্যাপ্লিক, প্যাচওয়ার্ক আর রানিং স্টিচকে এক সঙ্গে মিশিয়েছে। এই ধরনের বেডকভারের দুই দিকই ব্যবহার করা যেতে পারে। এদের আজরক ফ্যাব্রিক ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। হালকা অথচ ব্রাইট কালারের কটন উওভেন বেডকভারও ঘরে সুন্দর একটা লুক এনে দেয়। এর তলায় পাতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন তেলিয়া কটন বা মঙ্গলগিরি বেডশিট। সিঙ্গলের কালারের সঙ্গে কনস্ট্রাস্ট পাড় থেকে তিন-চারটে কালারের উল্লম্ব স্ট্রাইপ কোনটা নিচ্ছেন এ পুজোর জন্য? |
পর্দা |
শরতের রোদ-ঝলমলে আবহাওয়ার সঙ্গে সিল্কের পর্দা খাপ খায় ভাল। দোপিয়ান সিল্কের ওপর উজ্জ্বল রঙের পর্দা চমৎকার দেখতে লাগে। এর সঙ্গে শিয়ার কার্টেন-এর জন্য বেছে নিন অফহোয়াইট বা হোয়াইট বেস-এর ওপর গ্রিন বা গ্রে দিয়ে বেনারস কাটওয়ার্ক। বড় পর্দা হালকা রঙের রাখতে চাইলে লিনেন ফ্যাব্রিকের ওপর লিফ বা ফ্লোরাল মোটিফ অথবা সিঙ্গল কালারের প্লেন লিনেনের পর্দা বেছে নিতে পারেন। কটনের ওপর জামদানি কাজও এর জন্য ভাল লাগবে। হ্যান্ডলুমের পর্দায় অর্নামেন্টাল বা জিয়োমেট্রিক ডিজাইন (ডায়মন্ড, ট্রাইঅ্যাঙ্গেল ইত্যাদি) বেশি চলছে। পুজোর মুখে গ্রিন, মাশরুম, পিচ বা অরেঞ্জ-এর মতো উজ্জ্বল রং সুন্দর দেখায়। ড্রইংরুমের পর্দার জন্য মোটা ভেলভেটের ফ্যাব্রিক চলতে পারে। পুরো ভেলভেট-এর পর্দা না চাইলে কাট ভেলভেটও ব্যবহার করা যায়। মূলত নিউট্রাল কালারের এই পর্দায় ভেলভেট-এর ফাঁকে ফাঁকে থাকে স্বচ্ছ বিরতি। ক্রাশড ভেলভেট-এর ওপর জরির কাজ করা পর্দা ডিজাইনার কার্টন-এর কাজ করবে ড্রইংরুম-এর জন্য।
ড্রইং, ডাইনিং ভাগ করতে চান, অথচ পুরো জায়গাটায় পর্দা আটকে একটানা ঘরকে ছোট ঘেরাটোপে মুড়তে চান না, এমন হলে পাতলা সোয়েড-এর টুকরো দিয়ে বোনা অনেকটা জালের মতো দেখতে পর্দা চলতে পারে। বেডরুমের সাজের জায়গাটুকু আলাদা করে নিতে পারেন প্রিন্টেড শিয়ার দিয়ে। পর্দা নিয়ে নানা রকমের পরীক্ষায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন? তা হলে পর্দার বদলে সাটিনের ওপর এমব্রয়ডারি করা ব্লাইন্ডস্ লাগিয়ে নিন।
আপনার পুচকুর ঘরের জন্য ব্ল্যাকআউট ফ্যাব্রিক স্মার্ট পছন্দ। একটা গ্লসি লুক আর উজ্জ্বল রঙের ওপর ছড়িয়ে থাকবে মজার নানা ফিগার, সংখ্যা, এবং এ, বি, সি, ডি। পর্দা দেখতে দেখতেই যদি প্রাথমিক পাঠটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়, মন্দ কী!
পর্দার সাজের জন্য শুধু টাসেল-এর ব্যবহার এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। আরও স্মার্ট লুকের জন্য এসেছে কার্টন টাই ব্যাক। ফুল, পাতা, হরিণের শিং সহ নানা ডিজাইন পাওয়া যায় এতে। ক্রিস্টাল বা উডেন রড থেকে ঝোলানো পর্দা বেল্ট দিয়ে বেঁধে গুঁজে দিন দু’পাশের দেওয়ালে আটকানো পেতলের ডিজাইনার টাই ব্যাক-এ।
|
|
কুশন কভার |
উৎসব-মরশুমে কুশন কভারের জন্য সিল্ক বেশ ভাল পছন্দ। সিল্কের ওপর ঘন এমব্রয়ডারি বা জরির কাজ বেশ জমকালো দেখতে লাগে। হালকা সিকুইনের কাজও চলতে পারে। চান্দেরি বা মঙ্গলগিরির ওপর হাতে বোনা কাজ বা প্রিন্ট করা কুশন কভার হালকার ওপরে চোখ টানে। দু-তিনটি হালকা কাজের কুশনের মঝে সাজিয়ে দিতে পারেন বড় বড় বিড্স বসানো কভারে মোড়া একখানা কুশন। মোট কথা, ব্যালেন্স খুব জরুরি।
কুশনের জন্য একটু বেশি খরচে আপত্তি না থাকলে ডিজিটাল প্রিন্ট করা বেডকভার-এর মতো কুশন কভারও দেখতে পারেন। বহু পুরনো দিনের খবরের কাগজের কাটিংকে ক্যানভাসে বাঁধালে যেমন দেখতে হয়, ঠিক সেই ভাবে তৈরি কুশন কভারও কিনতে পাওয়া যায়। এর চার ধারে লেদারের হালকা পাইপিং থাকে, আর ভেতরে থাকে কটন। অ্যানিমাল প্রিন্টের কুশন কভারও অনেকেরই দারুণ পছন্দের। অফহোয়াইট, ক্রিম বা গোল্ডেন বেস-এর ওপর কালো বা গাঢ় ব্রাউনের টাইগার স্ট্রাইপ বা ছোপ ছোপ প্রিন্ট বসার ঘরের পক্ষে আইডিয়াল। ঘরে উজ্জ্বল রং চাইলে সিল্ক বা কটনের তৈরি চড়া রঙের ছোট-বড় গোলাপ এক সঙ্গে জুড়ে তৈরি কুশন কভার দেখতে পারেন। ঠিক একই ভাবে ছোট ছোট টুকরো কাপড় বা ফার আটকানোও কুশন কভারও পাওয়া যায়। হাত দিলে ভারী মোলায়েম একটা অনুভূতি হয়।
|
সবই মায়া |
দু’টি সুন্দর ঘর। মাঝবরাবর পর্দার পার্টিশান। দামি ভেলভেট-এর। সুন্দর টাস্ল দিয়ে বাঁধা দুই প্রান্ত। গৃহকর্ত্রীর রুচির তারিফ আপনার মুখে। ড্রইং রুমে দেওয়ালজোড়া বুক শেলফ। বই ঠাসা। একখানি বইয়ের জন্য হাত বাড়ালেন। আরে, হাতে তো বই উঠে এল না! শেলফখানাও যেন ঠিক শেলফ নয়! ম্যাজিক? আজ্ঞে না, এটি থ্রি ডি ওয়াল প্যানেল। পর্দাটিও একই। পুরোটাই তৈরি এমন ভাবে, যাতে অপটিক্যাল ইলিউশন হতে বাধ্য। উদ্দেশ্য, ঘরের ডেপথ বাড়ানো। এর পর থেকে দামি পর্দা দেখলেই একটি বার ছুঁয়ে নেবেন যেন। |
|
দরি-টরি |
পায়ের পাতা ডোবা পশমিনা কার্পেট কেনার ক্ষমতা ক’জনেরই বা থাকে বলুন! এ দেশের আবহাওয়ায় বারো মাস সেই কার্পেট সাজিয়ে রাখাও সমস্যার। এ জন্যই দরি জনপ্রিয় হয়েছে এখানে। দরির সঙ্গে উল মেশানো থাকলে দেখতে অনেকটা কার্পেট-এর মতোই হয়ে যায়। রংটাও উজ্জ্বল হয় বলে উৎসবের দিনে মানিয়ে যায়।
সোফা বা খাটের সামনে পাতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন রাগ। বেশ খানিকটা পুরু আর নরম হয় এই রাগ। কার্পেটে অনেক সময় লেদার দিয়ে একটা অ্যানিমাল স্কিন-এর লুক আনা হয়। কুচো ফার এতে বসিয়ে দিলে পা ডোবানোর সময় অদ্ভুত এক তুলতুলে অনুভূতি হবে। |
ছবি সৌজন্য: কাজি, অনসেট |
|
|
|
|
|