কায়দাটা বামেদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সিপিএমের। এ বার তা রপ্ত করেছে কংগ্রেসও।
লোকসভা, বিধানসভা অথবা পঞ্চায়েত যে কোনও স্তরের নির্বাচনে প্রচারের প্রশ্নে দায়িত্বে থাকেন জেলা স্তরের কোনও নেতা। তিনিই নীচু স্তরের ‘কমরেড’ থেকে জোনাল কমিটির সদস্য, নজরদারি থেকে প্রচারের ঢঙ হবে কেমন তা জানিয়ে দেন। এটাই বাম-রেওয়াজ। এবার জঙ্গিপুর উপনির্বাচনে সেই মডেল মেনে চলছে কংগ্রেস। জঙ্গিপুরের ৭টি বিধানসভা এলাকায় প্রচারের ক্ষেত্রে জেলা কংগ্রেস ২৫ জন নেতা ও বিধায়ককে এ বার মাথায় বসিয়ে দিয়েছে। তাঁরা বাম নির্বাচন-নীতি মেনে একই ভাবে নজরদারি চালাচ্ছেন জঙ্গিপুর জুড়ে।
সিপিএম যেমন, রাজ্য নেতাদের এনে জনসভা করার সময় নেই জানে। এমনিতেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে। তার উপর জনসভা করলে সমস্যা বাড়বে। দলের স্থানীয় নেতারা সভায় লোক জোগাড়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। কিন্তু এখন উৎসব ও চাষের মরশুম। সভা করলে হয়তো ‘টেম্পো’ উঠতে পারে। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছু হয় না। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত কোনও বড় সভা না করার। দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “তার চেয়ে কর্মীরা নিজের এলাকাতেই থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরলে কাজে লাগবে। এতে জন সংযোগও বাড়বে।” বামেদের এই কায়দাতেই এ বার জেলা কংগ্রেস। সাগরদিঘিতে দায়িত্বে রয়েছেন মনোজ চক্রবর্তী ও আমিনুল ইসলাম। জঙ্গিপুর বিধানসভার ভার দেওয়া হয়েছে অতীশ সিংহ ও বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে। হুমায়ুন বলেন, “বামপন্থীদের একটা সংগঠনগত ভিত্তি তো আছেই। আমরা সে পথেই হাঁটার চেষ্টা করছি। এ পর্যন্ত যতগুলি নির্বাচন হয়েছে জেলা কংগ্রেস থেকে এলাকা ভিত্তিক সমন্বয় গড়তে জেলা নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে আমরা ৭০ ভাগ সফল। এবারের জঙ্গিপুর উপ নির্বাচনে সেই বাম কায়দাই প্রযোগ করছে কংগ্রেস।” হুমায়ুন কবীরের মতে, “স্থানীয় নেতারা তো ভোট করবেন। তারাই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবেন। ভোটের দিন বুথে নিয়ে যাবেন। জেলা নেতারা শুধু গ্রামে গিয়ে তাদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যাটা জানার চেষ্টা করছে। ক্ষোভ আছে কোথাও কোথাও। তা মেটানোর চেষ্টাও চলছে। যেমন জঙ্গিপুরের ১০, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে অটো সমস্যার জেরে কিছু কর্মী ক্ষোভে দলের হয়ে কাজ করছিলেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি সমস্যা মিটিয়েছি। এখন রোজই তাদের সঙ্গে দেখা করছি, বোঝার চেষ্টা করছি তারা কতটা আন্তরিকর্।” সাগরদিঘির কংগ্রেস পর্যবেক্ষক আমিনুল ইসলাম আবার বলছেন, “বাম পদ্ধতি যদি কংগ্রেসকে উজ্জীবিত করে তবে তা মানতে অসুবিধা কোথায়? প্রত্যন্ত গ্রামে জেলার কোনও নেতা গেলে, কর্মীদের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা আড্ডা দিলে কর্মীরা ভরসা পান। প্রাণ খুলে মনের কথা খুলে বলতে পারেন। হোক না তা বাম পদ্ধতি। যার যেটা ভাল তা নিতে অসুবিধা কোথায়!” |