মাথা ভর্তি সোনালি চুল। লম্বা হয়ে নেমে এসেছে ঘাড় অব্দি। একরত্তি ছেলেটার সামনে দিব্যি চড়ে বেড়াচ্ছে বিশালাকার কয়েকটা কুমির। আর ছেলেটাও খোশমেজাজে মাছ ছুড়ে ছুড়ে দিচ্ছে তাদের দিকে। কুইন্সল্যান্ডের চিড়িয়াখানায় বাচ্চাটার এই কাণ্ড যাঁরা দেখছেন, তাঁদের তো তত ক্ষণে চোখ প্রায় ছানাবড়া। করছেটা কী ছেলেটা? ভয়ডর নেই এক ফোঁটাও! তাঁদের ভুল অবশ্য ভাঙল একটু পরেই। এই ছেলের তো এ রকমই হওয়ার কথা। ওর বাবার নাম যে স্টিভ আরউইন। |
স্টিভের আট বছরের ছেলে রবার্ট। দেখতে অবিকল বাবারই মতো। জামা-কাপড়, হাবে-ভাবেও স্টিভের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু এ সবের থেকেও আরও বড় মিল রয়েছে একটা জায়গায়। বিশাল, বদখত দেখতে কুমিরদের দেখে বাবার মতোই ভয় লাগে না রবার্টের। শুধু কুমির কেন, কোনও প্রাণীকেই ভয় পায় না ছোট্ট এই ছেলেটা। ভয় ভাঙার কাজটা অবশ্য শুরু করেছিল তার বাবা-ই। এক হাতে এক মাসের ছেলেকে কোনও রকমে আঁকড়ে ধরে কুমিরের মুখে মাংস ছুড়ে দিয়েছিলেন স্টিভ।
ভয়ানক প্রাণীরাই ঘিরে ছিল স্টিভ আরউইনের নিত্যদিনের জগত। তাদের নিয়েই নানা রকম দুঃসাহসিক কাণ্ড ঘটাতেন তিনি। আর গোটা দুনিয়া টিভির পর্দায় তা দেখে শিউরে উঠত। ২০০৬ সালে ‘ওশানস ডেডলিয়েস্ট’ নামে এক তথ্যচিত্রের শ্যুটিং করছিলেন স্টিভ। আচমকাই তাঁর বুকে হুল ফুটিয়ে দেয় একটা শঙ্করমাছ (স্টিংরে)।নিজেকে বাঁচানোর সুযোগটুকুও পাননি তিনি। স্টিভ আরউইনের দুঃসাহসিক চেনা ছবিগুলো হারিয়ে গিয়েছিল চিরতরে।
বাবার এই ভয়ানক পরিণতিতেও রবার্ট ঘেন্না করতে পারেনি প্রাণীগুলোকে। পারেনি ভয় পেয়ে দূরে সরিয়ে রাখতেও। বাবার মৃত্যুর ছ’বছর পর সে একাই চলে এসেছে কুমিরদের এক্কেবারে সামনে। নিজের হাতে খাবার ছুড়ে দিচ্ছে তাদের দিকে। আর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে তার মা, টেরি! |