মারণ ক্যানসারকে জয় করেই জীবনে ফিরেছেন ওঁরা
কেউ গল্ফ খেলছেন। কেউ আত্মজীবনী লিখে ফেলছেন। কেউ চুটিয়ে অভিনয় করছেন। কেউ গান গেয়ে, সমাজসেবা করে দিব্যি হইহই করে বাঁচছেন। জীবনে কখনও ক্যানসার রোগটা যে আক্রমণ করেছিল, সেটাই এঁরা ভুলতে বসেছেন।
আমেরিকায় অস্ত্রোপচার করিয়ে আসার ছ’মাস পরে মাঠে ফিরেছেন যুবরাজ সিংহ। ক্যানসার সারিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নেমে সফল হন ল্যান্স আমস্ট্রং। আম জনতার কাছে এঁরাই এখন জীবনের প্রতীক। কিন্তু এমন নজির কি সত্যিই বিরল? অজয় গুপ্ত, চন্দন সেন, সহেলি বসু বা উলা গ্রেনস্ট্রোমাররা কিন্তু তা বলছেন না।
সুইডেন থেকে কলকাতায় এসে অস্ত্রোপচারের করিয়েছিলেন উলা গ্রেনস্ট্রোমার। চার মাসের মাথায় গল্ফ খেলা শুরু করেছেন তিনি। সত্তর পেরনো উলাকে নিজের দেশে চিকিৎসার জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে হত। তত দিনে রোগ আরও ছড়িয়ে যেত। তাই অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতায় আসেন তিনি। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে তাঁর ডাক্তারকে চিঠি লিখেছেন উলা, আর পাঁচ জনের মতোই বাঁচছেন। উলার চিকিৎসক, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “রোগ সারাতে আমেরিকায় না গিয়েও এখানকার রোগীরা দিব্যি বেঁচে রয়েছেন।”

সহেলি বসু

অজয় গুপ্ত

নিবেদিতা গঙ্গোপাধ্যায়

চন্দন সেন
প্রচ্ছদশিল্পী অজয় গুপ্তের কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে বছর তিনেক আগে। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে (সিএনসিআই) অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। ৭৩-এর অজয়বাবু দিনে আট থেকে ন’ঘণ্টা কাজ করেন। এই মনের জোরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সিএনসিআই-এর অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাস। পাইকপাড়ার নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে অজয়বাবু একাই থাকেন। অসুখ ধরা পড়ার মুহূর্ত থেকে চিকিৎসার খুঁটিনাটি, আশপাশের মানুষের আচরণ, চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি, অসহায়তা সবই উঠে এসেছে তাঁর আত্মজীবনী ‘কর্কট সহবাস’-এ। তাঁর কথায়, “নিজের কথা লিখব বলেই অতগুলো পাতা ব্যয় করিনি। এমন রোগের সঙ্গে মানুষের যে অসম লড়াই চলে, সেখানে জিততে মনের জোরটা খুব জরুরি। জনবল, ধনবল আর মনোবল-এই তিনটের গুরুত্ব ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন।” অজয়বাবু বলেন, “এই খেলায় আমি একাই রেফারি ও ফুটবলার। মাঠে অদৃশ্য কাপুরুষের সঙ্গে লড়াই করে জিতব। অনেক হেরেছি। এটা হারব না। অন্তত টাই ব্রেকারের আগে তো নয়ই।”
ইংরেজির শিক্ষিকা সহেলি বসুও পিছিয়ে নেই। ১৬ বছর বয়সে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। এক প্রস্ত লড়াই শেষ করে জীবন শুরু করতে না করতেই ফের ক্যানসারের থাবা। এ বার অন্য অঙ্গে। দমে যাননি সহেলি। দ্বিতীয় দফার অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি সেরে ফের স্বাভাবিক জীবনে ৩৪-এর তরুণী। কেমন ছিল লড়াইটা? সহেলি জানিয়েছেন, ঋতুকালীন সময়ে পেটে অসহ্য ব্যথা হত। এক বার ব্যথা বাড়তে থাকায় ডাক্তারের কাছে যান। প্রাথমিক পরীক্ষায় মনে হয়েছিল, অ্যাপেন্ডিক্স। পেট কাটতেই দেখা গেল, ডিম্বাশয়ে সিস্ট। অস্ত্রোপচারের পরে বায়োপসিতে জানা গেল, ওই সিস্ট ম্যালিগন্যান্ট। সহেলি বলেন, “এর পরে পুরো সেরে উঠেছিলাম। বিয়ে করলাম ২০০৫ সালে। তার আড়াই মাসের মধ্যে এক দিন বাঁ দিকের স্তনে একটা শক্ত ডেলার অস্তিত্ব টের পেলাম। আবার পরীক্ষা, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি। এক দিনের জন্যও মনে হয়নি, হেরে যাব। দিব্যি আছি। বছর তিনেক আগে ছেলে হয়েছে।”
রোগকে থোড়াই কেয়ার করেছেন নাট্যকার, অভিনেতা চন্দন সেন। চিকিৎসা চলেছে, সঙ্গে অভিনয়ও। অভিনয়ের সূত্রে বিদেশও যাচ্ছেন। এই চিকিৎসা যে কতটা ব্যয়সাধ্য, তা জীবন দিয়ে বুঝেছেন। আরও বেশি বুঝেছেন, এই সময়ে শুভানুধ্যায়ীদের থাকা কতটা জরুরি। তাঁর কথায়, “মনের জোর হারালেই সব গেল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে হবে।”
গোড়ায় ভুল করলেও দ্রুত তা শুধরে নেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিয়ান নিবেদিতা গঙ্গোপাধ্যায়। কী ভুল? ২০১০ সালের অক্টোবরে টের পান বাঁ দিকের স্তনে একটা টিউমারের মতো কিছু হয়েছে। তাঁর দিদি স্তন ক্যানসারে মারা যান। নিবেদিতার তাই আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তবু ডাক্তারের কাছে যেতে দেরি করেন তিনি। ২০১১-র গোড়ায় অস্ত্রোপচার হয়। নিবেদিতার কথায়, “অফিসের কাজ, মেয়ের পরীক্ষা এই সব কারণে দেরি করি। হয়তো অনেক বেশি খেসারত দিতে হত। তাই সবাইকে বলি, শরীরে অস্বাভাবিক কোনও ‘গ্রোথ’ দেখলেই
ডাক্তার দেখান।” ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম বড় দিক হল ফলো-আপ। যাতে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেন না তিনি। তিন মাস অন্তর ডাক্তারের কাছে যান। এইটুকু বাদ দিলে জীবন চলছে নিজের গতিতেই। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও জোর দিয়েছেন এই ফলো-আপ চিকিৎসার উপরেই।
ক্যানসারকে হারিয়ে এই রোগ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এমন মানুষ রয়েছেন চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠানে। চিকিৎসক তাপ্তি সেন শোনালেন এমন অনেকের কথা, স্তন ক্যানসার যাঁদের সুস্থ জীবন থেকে দূরে রাখতে পারেনি।
আমাদের চারপাশেই আছেন এঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.